হতে পারে গল্পটা আনিসের, যে হৃদয়ের সেই ভাষা বুঝতে চায় যা অধিকাংশ মানুষের কাছেই দুর্বোধ্য, কিংবা যা প্রকাশ করার মত সঠিক শব্দ খুঁজে পাওয়া দুস্কর বলে গভীরেই চাপা পড়ে হাসফাস করে প্রকাশ পাবার আকাঙ্ক্ষায়। কিংবা রুবির, যে কক্ষচ্যুত কোনো নক্ষত্রের মতো বিস্তৃত মহাশূন্যে ঘুরপাক খেতে খেতে খুঁজে বেড়াচ্ছে নিজস্ব কক্ষপথের সন্ধান। অথবা জহিরের, নৈর্ব্যক্তিক আবেগ, দ্বিধাগ্রস্ততা, নিঃসঙ্গতা যাকে বিভ্রান্ত করে চলে প্রতিনিয়ত। সম্পর্ক গুলো যার জন্যে অস্পষ্ট এক চিত্রকর্ম, খুব কাছে থেকেও, স্পর্শ করেও যাদের সে হৃদয়ঙ্গম করতে পেরে ওঠেনা। কিংবা তনুর, জীবনটা যার কাছে বড় আদুরে সকাল। বেঁচে থাকাকে যে উপভোগ করে, ভালোবাসে। যাকে বড় সহজেই ভালোবেসে ফেলা যায়। কিংবা রায়হানের, জীবনের দ্ব্যর্থবোধকতার উপলব্ধি যাকে ভারাক্রান্ত করে তোলে এক সন্ধ্যায় আচমকা নিজেকে আবিষ্কার করার পর। কিংবা হয়তো উচ্চাভিলাষী জয়নালের। জীবনের সাথে যে প্রচন্ড হিসেবী। হয়তোবা মেহেরজানের, জীবনের শত বাঁক ঘুরে এসে যে একদিন আবিষ্কার করে তার নিজের বলে আসলে কিছুই নেই। জীবনের পথ পরিক্রমায় মানুষ যা অনুভব করে, সে আবেগ-অনুভূতিগুলোকে সংজ্ঞায়িত করার জন্য কখনো কখনো ভাষা বড় সংকীর্ণ বোধ হয়। তবু তো তারা বড় বাস্তব, ভীষণ স্বচ্ছ। মানুষের এই বড় একান্ত, আটপৌরে, নিজস্ব কথাগুলো, অনুভূতি গুলো আর তার ব্যবচ্ছেদই মৌনালেখ্য। দর্শন থেকে জন্ম হলেও সময়ের পরিক্রমায় মনোবিদ্যা এতটাই বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞানের উৎস হয়ে উঠেছে যে, সাহিত্যরস আর কাঠামোগত মনোবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ একইসাথে ধারণ করা একটু কঠিন। এই উপন্যাসের মাধ্যমে সেই জায়গাটিতে চেষ্টা করা হয়েছে একটি মেলবন্ধন নির্মাণ করতে।