পাহাড়ের বুকে রাত জেগে একাকী দাঁড়িয়ে না থাকলে তাঁর ভেতর অস্বাভাবিকতা না থাকার কথা হয়তো বলা যেতো। আমরা যারা তাঁর একটা ছবি চাই, গোড়ার দিকের বিভিন্ন সূত্র ভক্তির অস্পষ্টতায় এভবে তাঁর বর্ণনা দিয়েছে: 'তিনি লম্বাও ছিলেন না, খাটোও ছিলেন না,' 'শ্যামবর্ণ বা ফর্শাও নন।' 'শীর্ণ বা স্থূলকায়ও নন।' তবে এখানে-ওখানে বিশেষ কিছু বর্ণনা যখন বেরিয়ে আসে, সত্যিই বিস্ময় জাগায়। যে মানুষটি রাতের পর রাত নিঃসঙ্গ ধ্যানে কাটাচ্ছেন, নিঃসন্দেহে তার দৈহিক গঠন কৃশকায়, ধ্যানীসুলভ হওয়ার কথা। কিন্তু পাণ্ডুর ও শীর্ণ হওয়া দূরের কথা, আসলে স্বাস্থ্যবান, গোলাপি গাল আর লালচে চেহারা ছিল তাঁর। বলিষ্ঠ গড়ন,' প্রায় পিপের মতো বুকের ছাতি। সবসময় 'দ্রুত কোথাও যাচ্ছেন' এমনিভাবে সামনে ঝুঁকে সুস্পষ্ট হাঁটার ভঙ্গিই হয়তো এর কারণ। তাঁর ঘাড়ে আড়ষ্টতা ছিল নিশ্চয়ই, কেননা কারও দিকে তাকানোর সময় শুধু মাথা না বাঁকিয়ে গোটা শরীর ঘোরানোর কথা মনে করবে লোকে। কেবল একপাশ থেকে দেখা হলে প্রচলিত ধারণায় তিনি সুদর্শন ছিলেন: বাজপাখীর ঠোঁটের মতো দীর্ঘ টিকালো নাক-মধ্য প্রাচ্যে বহুকালের আভিজাত্যের প্রতীক বিবেচিত। আপাতত তাঁকে সাধারণ মক্কাবাসী ভাববার সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেন। চল্লিশ বছর বয়সে না দেখা বাবার ছেলে হয়েও আদৌ কখনও সম্ভব ভাবেননি, তারচেয়ে ঢের ভালো জীবন গড়েছেন। নিজ সমাজে বহিরাগত বিবেচিত সন্তানটি অবেশেষে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। সমস্ত বাধা সত্ত্বেও চমৎকার জীবন গড়ে তুলেছেন। সমগোত্রীয়দের কাছে সম্মানিত ও বিবাহিত সুখী ব্যবসায়িক প্রতিনিধি হিসাবে স্বস্তিকর স্বচ্ছল। আপন সমৃদ্ধ শহরের অন্যতম গণ্যমান্য মানুষ না হলেও লোকে তাদের স্বার্থের কথা বলতে তাঁর উপরই আস্থা রাখে। তাঁকে নিঃস্বার্থ মানুষ মনে করে তারা।