“ভালোবাসা এবং অন্যান্য" বইটির ফ্ল্যাপের কথাঃ দেশের অনেক মানুষ নানাভাবে আমার জন্য তাঁদের ভালােবাসাটুকু প্রকাশ করেছেন। আমি সেই দিনগুলাের খবরের কাগজ দেখিনি, টেলিভিশনের খবর শুনিনি, তার পরও আমি সবার ভালােবাসাটুকু অনুভব করতে পারি। সবার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েদের অস্থিরতার খবর জানতাম বলে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাসায়এসে সরাসরি সিলেট গিয়েছি। যে মুক্তমঞ্চে বিভ্রান্ত ছেলেটি আমাকে আক্রমণ করেছিল, সেই একই মুক্তমঞ্চে দাঁড়িয়ে আমার ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে কথা বলেছি। মঞ্চে দাঁড়িয়ে কথা বলার সময় আমার ঘুরেফিরে অভিজিৎ, অনন্ত, নিলয়, ওয়াশিক, দীপন—এ রকম সবার কথা মনে পড়ছিল যারা কেউ বেঁচে নেই। আমি কীভাবে বেঁচে গিয়েছি, কেন বেঁচে গিয়েছি এখনাে জানি না। যখন এই লেখাটা লিখছি তখন আমার প্রিয় ছাত্র মাহিদ আল সালামের কথা মনে পড়ছে। শাহবাগে আমার ওপর আক্রমণের প্রতিবাদসভায় সে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেছে অথচ দুৰ্বত্তের আক্রমণে দুই দিন আগে একেবারে হঠাৎ করে তাকে জীবন দিতে হলাে। কে জানে পৃথিবীটা কেমন করে এত নিষ্ঠুর হয়ে যেতে পারে।
ভূমিকাঃ ২০১৮ সালের লেখাগুলাে সংকলিত করে “ভালােবাসা এবং অন্যান্য প্রকাশিত হলাে। গত ছয় বছর থেকে আমি দুই সপ্তাহ পর পর লিখে যাচ্ছি। আমার নিজের কাছেই অবিশ্বাস্য মনে হয় যে আমি এই কাজটি নিয়মিতভাবে করে যাচ্ছিলাম, এই বছর মার্চ মাসে এর ব্যতিক্রম ঘটেছে যখন ছুরিকাহত হয়ে হাসপাতালে বন্দি হয়েছিলাম! এই সংকলিত বইটির নাম “ভালােবাসা এবং অন্যান্য দেয়া হয়েছে সেই সময়ের অভিজ্ঞতা থেকে। আমার জন্যে মানুষের বুকের ভেতর কতত গভীর ভালােবাসা সেটি তখন আমি নতুন করে অনুভব করেছিলাম। সুচিপত্রঃ * সমাবর্তন এবং সমাবর্তন ভাষণ * জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার * জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার: একটি প্রতিক্রিয়া * বই, বইয়ের মেলা * আর কতদিন এই ভাঙা রেকর্ড * অবিশ্বাস্য সুন্দর পৃথিবী * ভালােবাসা এবং ভালােবাসা * দাবি, আন্দোলন এবং আন্দোলনের প্রক্রিয়া * আরও একটি সমাবর্তন ভাষণ * আমি রাজাকার: একটি আলােকচিত্র * টুকিটাকি ভাবনা * সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা * আমাদের ক্ষমতা আমাদের অধিকার * ওয়ার্ল্ড কাপ * আমাদের গণিত অলিম্পিয়াড * মৃত্যুর এই উপত্যকা * আমরা জানতে চাই * বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু * আমার ভাষা আমার দায়িত্ব * বিজ্ঞান গবেষণা: বাংলাদেশ। * কাছের দেশ * বিশ্ববিদ্যালয় জীবন * নির্বাচনের আগে পরে * নিউইয়র্কে নির্বাচন * নির্বাচনি ইশতেহারে কী চাই? * নির্বাচনি টুকিটাকি এবং বাড়াবাড়ি * আধ ডজন নির্বাচনি ইশতেহার
বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরী পাঠকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি মূলত এ দেশের একজন বিখ্যাত লেখক, পদার্থবিদ এবং শিক্ষাবিদ। কিশোর সাহিত্য, শিশুতোষ গ্রন্থ, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, গণিত বিষয়ক বই এর জন্য খুব অল্প সময়েই জনপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি। মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৯৫২ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। মুক্তিযোদ্ধা বাবা ফয়জুর রহমানের চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন জেলাতেই তিনি পড়াশোনা করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে পিএইচডি ডিগ্রী অজর্নের উদ্দেশ্যে স্কলারশিপ নিয়ে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। পিএইচডি সম্পন্ন করে ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে বিখ্যাত বেল কমিউনিকেশনস রিসার্চ ল্যাবেও গবেষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৪ সালে দেশে ফিরে এসে তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগ দেন। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সবসময়ই এ দেশের কিশোর-কিশোরীদের কাছে বিশেষ আবেদন নিয়ে হাজির হয়েছে। কিশোর সাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ক অজস্র গ্রন্থ দিয়ে তিনি আলোকিত করে তুলেছেন এদেশের অগণিত কিশোর-কিশোরীর মনোজগত। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সমূহ, যেমন- দীপু নাম্বার টু, আমার বন্ধু রাশেদ, আমি তপু, শান্তা পরিবার, দস্যি ক’জন ইত্যাদি ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পায়। তার বেশ কিছু গল্প পরবর্তীতে নাটক ও চলচ্চিত্র হিসেবে টিভি পর্দায় স্থান করে নিয়েছে। তিনি একজন বিশিষ্ট কলামিস্টও। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডও তাঁর ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সমগ্র সকল বইপড়ুয়াকেই আকৃষ্ট করে। সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বহুবার পুরষ্কৃত হয়েছেন। বাংলা একাডেমি পুরষ্কার (২০০৪) এবং শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হিসেবে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার (২০০৫) সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও, কাজী মাহবুবুল্লা জেবুন্নেছা পদক (২০০২), শেলটেক সাহিত্য পদক (২০০৩), ইউরো শিশুসাহিত্য পদকসহ (২০০৪) অগণিত পুরষ্কার অর্জন করেছেন গুণী এই সাহিত্যিক।