ভূমিকা আমার বিরুদ্ধে আমার পাঠকেরা যেসব অভিযোগ করে তাকেন তার মাঝে এক নম্বর অভিযোগটি হচ্ছে আমি বিজ্ঞানের বই লিখি না। আমি যে লিখতে চাই না তা নয়, এক দু’বার যে লিখি নি তাও নয় কিন্তু তার পরেও বিজ্ঞান কল্পকাহিনী যতগুলো লিখেছি বিজ্ঞানের বই লিখেছি তার চাইতে অনেক কম। কারণটি খুব সহজ, বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লিখতে দরকার একটুখানি বিজ্ঞান এবং অনেকখানি কল্পনা। বিজ্ঞানের বেলায় তা নয়, কল্পনাটাকে বাক্সবন্দি করে তখন শুধু বিজ্ঞান নিয়ে বসতে হয়। তার জন্যে যেটুকু সময় দরকার কীভাবে জানি সেটুকু সময় কখনোই হযে ওঠে না। তারপরেও একটুখানি বিজ্ঞান নামে এই নাদুস-নুদুস বইট দাঁড়া হয়ে গেছে তার কারণ শ্রদ্ধেয় প্রফেসর আনিসুজ্জামান! তিনি কালি ও কলমের প্রতি সংখ্যায় আমাকে বিজ্ঞান নিয়ে লিখতে রাজি করিয়েছিলেন, সেই একটু একটু করে লিখতে লিখতে আজকের এই একটুখানি বিজ্ঞান। যেসব বিষয় নিয়ে লেখা হয়েছে পাঠকেরা সেখানে একবার চোখ বুলালেই বুঝতে পারবেন যে তার মাঝে খুব একটা মিল নেই, যে বিষয়গুলো আমার ভালো লাগে সেগুলোই বারবার উঠে এসেছে। তবে সান্ত্বনা এটুকু, বিজ্ঞানের যে বিষয়গুলো সবচেয়ে রহস্যময় আমার সেগুলোই সমসময় সবচেয়ে ভালো লাগে। মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১ সেপ্টেম্বর ২০০৬ বনানী, ঢাকা
সূচীপত্র বিজ্ঞান বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানচর্চা বিজ্ঞান বনাম প্রযুক্তি বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানের ভাষা-গণিত বিজ্ঞানী একজন বিজ্ঞানী এবং তার গভেষণা প্রক্রিয়া একটি অবিশ্বাস্য ঘটনা প্রযুক্তি তথ্যপ্রযুক্তি ফাইবার অপটিক্স অক্সিজেন : নিত্যকালের সঙ্গী প্রাণিজগৎ জীবনের নীল নকশা একটি জীবাণুর বক্তৃতা মন্তিষ্ক মস্তিষ্কের ডান বাম বৃদ্ধিমত্তা : মস্তিষ্কের ভেতরে এবং বাইরে ঘুমের কলকব্জা প্রাণীদের ভাবনার জগৎ চোখ আলো ও রঙ অটিজম পদার্থবিজ্ঞান কোয়ান্টাম মেকানিক্স থিওরি অফ রিলেটিভিটি বিগ ব্যাং একটি নাটকীয় বিষয় সবকিছুর তত্ত্ব : স্ট্রিং থিওরি গ্রহ ভূমিকম্প গ্রহাণুপুঞ্জ মহাজগৎ মহাজাগতিক ক্যালেন্ডার হারিয়ে যাওয়া ভর নক্ষত্রের সন্তান অদৃশ্য জগতের সন্ধানে ব্ল্যাক হোল বারো হাত কাকুড়ের তেরো হাত বিচি মহাজাগতিক সংঘর্ষ ভবিষৎ টাইম মেশিন আমরা কী একা?
বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরী পাঠকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি মূলত এ দেশের একজন বিখ্যাত লেখক, পদার্থবিদ এবং শিক্ষাবিদ। কিশোর সাহিত্য, শিশুতোষ গ্রন্থ, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, গণিত বিষয়ক বই এর জন্য খুব অল্প সময়েই জনপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি। মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৯৫২ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। মুক্তিযোদ্ধা বাবা ফয়জুর রহমানের চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন জেলাতেই তিনি পড়াশোনা করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে পিএইচডি ডিগ্রী অজর্নের উদ্দেশ্যে স্কলারশিপ নিয়ে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। পিএইচডি সম্পন্ন করে ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে বিখ্যাত বেল কমিউনিকেশনস রিসার্চ ল্যাবেও গবেষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৪ সালে দেশে ফিরে এসে তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগ দেন। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সবসময়ই এ দেশের কিশোর-কিশোরীদের কাছে বিশেষ আবেদন নিয়ে হাজির হয়েছে। কিশোর সাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ক অজস্র গ্রন্থ দিয়ে তিনি আলোকিত করে তুলেছেন এদেশের অগণিত কিশোর-কিশোরীর মনোজগত। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সমূহ, যেমন- দীপু নাম্বার টু, আমার বন্ধু রাশেদ, আমি তপু, শান্তা পরিবার, দস্যি ক’জন ইত্যাদি ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পায়। তার বেশ কিছু গল্প পরবর্তীতে নাটক ও চলচ্চিত্র হিসেবে টিভি পর্দায় স্থান করে নিয়েছে। তিনি একজন বিশিষ্ট কলামিস্টও। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডও তাঁর ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সমগ্র সকল বইপড়ুয়াকেই আকৃষ্ট করে। সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বহুবার পুরষ্কৃত হয়েছেন। বাংলা একাডেমি পুরষ্কার (২০০৪) এবং শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হিসেবে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার (২০০৫) সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও, কাজী মাহবুবুল্লা জেবুন্নেছা পদক (২০০২), শেলটেক সাহিত্য পদক (২০০৩), ইউরো শিশুসাহিত্য পদকসহ (২০০৪) অগণিত পুরষ্কার অর্জন করেছেন গুণী এই সাহিত্যিক।