ফ্ল্যাপে লিখা কথা আমাদের দেশ ও দেশের মানুষ, প্রাসঙ্গিক সমাজচিন্তা, রাজনৈতিক ভাবনা, শিক্ষা-প্রসঙ্গ, তরুণ প্রজন্ম, উন্নয়ন বিষয় এবং সমকালীন প্রসঙ্গ, উন্নয়ন বিষয় এবং সমকালীন প্রসঙ্গ নিয়ে মুহম্মদ জাফর ইকবাল নিরন্তর কলাম লিখেছেন। পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর কলাম চিন্তার স্বচ্ছতা, প্রত্যয়ী সাহস এবং রচনার স্বাদু গুণে বরাবর পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। কিশোরদের প্রিয় লেখক এবং রচনার স্বাদু গুণে বরাবর পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। কিশোরদের প্রিয় লেখক এবং শিক্ষাব্রতী মুহম্মদ জাফর ইকবাল ঋজু এবং দৃঢ়তার সঙ্গে নিজস্ব মতামত ও বক্তব্য প্রকাশ করে থাকেন।
তাঁর প্রতিটি রচনায় উদ্ভাসিত হয়েছে সমকাল, স্বভূমি এবং স্বদেশের মানুষ। কলামসমগ্র-এ মুহম্মদ জাফর ইকবালের চিন্তাশীল, উদ্যমী ও সংস্কারমূলক কর্মভাবনার স্বচ্ছ একটি প্রতিচিত্র পাওয়া যাবে।
ভূমিকা গত সাত বছরে প্রতাশিত আমর সাতটি কলামের বই সংকলিত করে কলামসমগ্র/২ প্রকাশিত হয়েছে।সাত বছর আগে আমার প্রথম কলাম সমগ্রটি প্রকাশিত হয়েছিল, তথন আমার ধারণা হয়েছিল প্রকাশক মনিরুল হক তার সেই অভিজ্ঞতা থেকে একটা শিক্ষা গ্রহণ করবেন এবং ভবিষ্যতে আর এই পথ মাড়বেন না । কিন্তু লক্ষ্য করছি তিনি বেশ উৎসাহ নিয়েই কলামসমগ্র/২ প্রকাশ করার আয়োজন করছেন এবং সেটি দেখে আমি খানিকটা উৎসাহিত অনুভব করছি। আমি ছোটদের জন্যে লিখি তাই আমর ধারণা ছিল যে আমর পাঠক তাদের প্রায় সবাই নিশ্চয়ই শিশু কিংবা কিশোর কিশোরী। কিন্তু আমি খানিকটা বিস্ময় নিয়ে আবিষ্কার করেছি আমার কিছু পূর্ণ বয়স্ক পাঠক আছেন এবং তারা সবাই আসলে খবরের কাগজে ছাপা হওয়া কলামের পাঠক। সেই পাঠকের কেউ কেউ হয়তো এই সমগ্র নেড়ে চেড়ে দেখতে আগ্রগী হতে পারেন। খবরের কাগজে আমি যখন কিছু লিখেছি তখন সবসময়েই সেটি লিখেছি খুব সাম্প্রতিক কোনো বিষয় নিয়ে। সেই সময়টুকু পার হওয়ার পর সেই লেখাটির কোনো গুরুত্ব থাকে না। কিন্তু যদি মাঝখানে অনেক খানি সময় পার হয়ে যায় তখন লেখাগুলোতে অন্য এক ধরনের গুরুত্ব ফিরে আসে- তখন লেখাগুলো একটা বিশেষ সময়ে একজন মানুষের ব্যক্তিগত ভাবনা চিন্তার প্রতিফলন হিসেবে দেখা সম্ভব হয়। লেখাগুলোতে সেই সময়ের ইতিহাসের এক ধরনের প্রতিফলন হয়। এই সংকলনের প্রথম গ্রন্থটির নাম “দুঃস্বপ্নের রাত এবং দুর্ভাবনার দিন”-নামটি দেখেই অনুমান করা যায় যুদ্ধাপরাধীরা সরকারের অংশ হিসেবে জোট সরকার গঠন করার পর সত্যি সত্যি দীর্ঘ সময়ের জন্য দুঃস্বপ্নের রাত এবং দুর্ভাবনার দিন শুরু হয়েছিল। সেই দুঃসময়েও আমি স্বপ্ন দেখতে চেয়েছি, বিজয় চেয়েছি, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলার চেষ্টা করেছি। এই সংকলনটি দেশের সাংস্কৃতিক রাজনীতির কথা উঠে এসেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়টুকু এসেছে এবং সেনা্বাহিনীর হস্তক্ষেপের কথাও চলে এসেছে! একটা সময় গিয়েছে যখন সেনাবাহিনীর চোখ রাঙানীর জন্যে সত্যি কথাটি বলা যেতো না-তখনও বৈশাখের হাহাকারের কথা লেখার চেষ্টা করেছি! অনেকদিন পর যথন সেই লেখাগুলো দেখি অথচ পুরো সময়টুকু আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে। অন্য কেউ যখন পড়বেন, হয়তো তার চোখেও ভেসে উঠবে-আমার চশমায় দেখা প্রায় সাত বছরের এক ধরণের খণ্ডিত ইতিহাস। মুহম্মদ জাফর ইকবাল সূচি * দেশের বাইরে দেশ * সাদাসিধে কথা * নিঃসঙ্গ বচন * প্রিয় গগন এবং অন্যান্য * হিমঘরে ঘুম ও অন্যান্য * পৃথিবীর সৌন্দর্য এবং আলফ্রেড সরেন * ২০৩০ সালের একদিন ও অন্যান্য
বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরী পাঠকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি মূলত এ দেশের একজন বিখ্যাত লেখক, পদার্থবিদ এবং শিক্ষাবিদ। কিশোর সাহিত্য, শিশুতোষ গ্রন্থ, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, গণিত বিষয়ক বই এর জন্য খুব অল্প সময়েই জনপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি। মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৯৫২ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। মুক্তিযোদ্ধা বাবা ফয়জুর রহমানের চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন জেলাতেই তিনি পড়াশোনা করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে পিএইচডি ডিগ্রী অজর্নের উদ্দেশ্যে স্কলারশিপ নিয়ে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। পিএইচডি সম্পন্ন করে ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে বিখ্যাত বেল কমিউনিকেশনস রিসার্চ ল্যাবেও গবেষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৪ সালে দেশে ফিরে এসে তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগ দেন। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সবসময়ই এ দেশের কিশোর-কিশোরীদের কাছে বিশেষ আবেদন নিয়ে হাজির হয়েছে। কিশোর সাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ক অজস্র গ্রন্থ দিয়ে তিনি আলোকিত করে তুলেছেন এদেশের অগণিত কিশোর-কিশোরীর মনোজগত। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সমূহ, যেমন- দীপু নাম্বার টু, আমার বন্ধু রাশেদ, আমি তপু, শান্তা পরিবার, দস্যি ক’জন ইত্যাদি ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পায়। তার বেশ কিছু গল্প পরবর্তীতে নাটক ও চলচ্চিত্র হিসেবে টিভি পর্দায় স্থান করে নিয়েছে। তিনি একজন বিশিষ্ট কলামিস্টও। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডও তাঁর ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সমগ্র সকল বইপড়ুয়াকেই আকৃষ্ট করে। সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বহুবার পুরষ্কৃত হয়েছেন। বাংলা একাডেমি পুরষ্কার (২০০৪) এবং শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হিসেবে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার (২০০৫) সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও, কাজী মাহবুবুল্লা জেবুন্নেছা পদক (২০০২), শেলটেক সাহিত্য পদক (২০০৩), ইউরো শিশুসাহিত্য পদকসহ (২০০৪) অগণিত পুরষ্কার অর্জন করেছেন গুণী এই সাহিত্যিক।