"উপন্যাস সমগ্র-৪র্থ খণ্ড" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা:
কল্লোল যুগের পরবর্তী পর্বের কথাসাহিত্যিক হিসেবে, নরেন্দ্রনাথ মিত্র নিঃশব্দে তার প্রতিষ্ঠার আয়োজন নিষ্পন্ন করেছিলেন সেই চল্লিশের দশকের গোড়ায়। বাংলা কথাসাহিত্যে নরেন্দ্রনাথের শ্রেষ্ঠত্ব। তার ছোটগল্পে। তার সৃষ্টিসত্তার শক্তির নিদর্শনও এই। গল্পগুলি। শিল্পরূপে সংহত, ব্যঞ্জনাগর্ভ এবং আকস্মিক দীপ্তির বিভায় উদ্ভাসিত নরেন্দ্রনাথের প্রায় প্রতিটি গল্প। এই শিল্পক্ষেত্রটিতে তিনি অধিষ্ঠিত সম্রাট। ছোটগল্প রচয়িতা রূপে সমধিক প্রসিদ্ধি সত্ত্বেও, উপন্যাস রচনায়ও নরেন্দ্রনাথ সার্থক স্রষ্টা। সামাজিক মানুষের বাস্তব দলিল এবং এক সত্যতর জীবনের। গভীর সংবেদী উপাখ্যান হয়ে উঠেছে তার। উপন্যাসগুলি। শান্ত-নিস্তরঙ্গ পল্লীজীবন, নগরমুখী মফসল শহরের ভাসমান মধ্যবিত্ত এবং মহানগরী। কলকাতার সীমায়িত এলাকার অভিজ্ঞতা তার উপন্যাসগুলির মূল উপজীব্য। নিজের ‘দ্বীপপুঞ্জ উপন্যাসের আলোচনায় তিনি বলেছিলেন, “আমার কোন রচনাতেই অপরিচিতদের পরিচিত করবার উৎসাহ নেই। পরিচিতরাই সুপরিচিত হয়ে উঠেছে।” সমালোচকের মতে, “অভিজ্ঞতার এই তিন ভূখণ্ড নিয়ে নরেন্দ্রনাথের সাহিত্যরচনার চেনামহল। এর বাইরে তিনি যাননি।... এই যে তাঁর প্রত্যক্ষ দেখার অন্তরঙ্গ জগৎ, এইখানেই তার শক্তির উৎস।” ভূমিলগ্ন এই উপাখ্যানগুলিতে তিনি গভীর বাস্তববোধের পরিচয় দিয়েছেন। আবার অভিজ্ঞান সংসক্ত কল্পনাকেও তিনি আত্মস্থ করেছেন, কাহিনিতে তার উত্তরণ ঘটিয়েছেন। কথাসাহিত্যে নরেন্দ্রনাথের মৌলিকতা যেমন তার ছোটগল্প রচনায়, তেমনই উপন্যাসে। তার উপন্যাসগুলির সবকটি এখন আর সহজলভ্য নয়। অথচ কথাসাহিত্যের ইতিহাসে তাদের স্থান ও ভূমিকা সর্বদা অনিবার্য। বহুপঠিত এবং বিখ্যাত দ্বীপপুঞ্জ’ বা ‘চেনামহল’ প্রভৃতি কয়েকটি উপন্যাস ছাড়া তাঁর। অন্যান্য উপন্যাসগুলি নানা অভিঘাতে আড়ালে চলে গেছে। এই কথা মনে রেখে, নরেন্দ্রনাথ মিত্রের উপন্যাস সমগ্র খণ্ডে খণ্ডে প্রকাশের আয়োজন করা হয়েছে। এই চতুর্থ খণ্ডে আছে আটটি উপন্যাস সূর্যসাক্ষী, পুত্রেষ্টি, উপচ্ছায়া, প্রতিধ্বনি, দয়িতা, অন্বেষণ, দ্বন্দ্ব ও আবর্ত।
Read More