mega fest banner
bornomala bike
জনপ্রিয় ৭টি ভ্রমণ বিষয়ক বই image

জনপ্রিয় ৭টি ভ্রমণ বিষয়ক বই (হার্ডকভার)

by হুমায়ূন আহমেদ

TK. 2,126 Total: TK. 1,605

(You Saved TK. 521)
  • Look inside image 1
  • Look inside image 2
  • Look inside image 3
  • Look inside image 4
  • Look inside image 5
  • Look inside image 6
  • Look inside image 7
  • Look inside image 8
  • Look inside image 9
  • Look inside image 10
  • Look inside image 11
  • Look inside image 12
  • Look inside image 13
  • Look inside image 14
  • Look inside image 15
  • Look inside image 16
  • Look inside image 17
  • Look inside image 18
  • Look inside image 19
  • Look inside image 20
  • Look inside image 21
  • Look inside image 22
  • Look inside image 23
  • Look inside image 24
  • Look inside image 25
  • Look inside image 26
  • Look inside image 27
  • Look inside image 28
  • Look inside image 29
  • Look inside image 30
  • Look inside image 31
  • Look inside image 32
  • Look inside image 33
  • Look inside image 34
জনপ্রিয় ৭টি ভ্রমণ বিষয়ক বই
Clearance Image

Ends in

00 : Day
00 : Hrs
00 : Min
00 Sec

জনপ্রিয় ৭টি ভ্রমণ বিষয়ক বই (হার্ডকভার)

রকমারি কালেকশন

424 Ratings  |  200 Reviews
TK. 2,126 TK. 1,605 You Save TK. 521 (25%)
কমিয়ে দেখুন
tag_icon

নিশ্চিত ২৫% ছাড়ে বই, অতিরিক্ত ৪% ছাড় অ্যাপ অর্ডারে 'APPUSER' ব্যবহারে

আরো দেখুন
book-icon

বই হাতে পেয়ে মূল্য পরিশোধের সুযোগ

mponey-icon

৭ দিনের মধ্যে পরিবর্তনের সুযোগ

আখেরি অফার image

Package Details

No. Product Name Category MRP Discount Current Price
01 Deshe Bideshe image দেশে বিদেশে Travels and Emigration: Classic 435.0 Tk. 28.0% 313.0 Tk.
02 Palamou image পালামৌ Travelling India 125.0 Tk. 28.0% 90.0 Tk.
03 The Travels of Marco Polo image দ্য ট্রাভেলস অব মার্কো পলো Travels and Emigration: Classic 450.0 Tk. 25.0% 338.0 Tk.
04 Uthon Peria doi pa image উঠোন পেরিয়ে দুই পা Countries and Travel 400.0 Tk. 28.0% 288.0 Tk.
05 Japan Kahini 1st Part image জাপান কাহিনি ১ম খণ্ড Countries and Travel 200.0 Tk. 28.0% 144.0 Tk.
06 Pothe probase image পথে প্রবাসে West Bengal books: Travel and Immigration 216.0 Tk. 0.0% 216.0 Tk.
07 America image আমেরিকা Travelling In America 300.0 Tk. 28.0% 216.0 Tk.

Total :1,605 Tk.

You can save 521 Tk.

Frequently Bought Together

plus icon
অপেক্ষা image

অপেক্ষা

TK. 400 TK. 288

plus icon
শূন্য image

শূন্য

TK. 180 TK. 130

equal icon
Total Amount: TK. 2023

Save TK. 683

Customers Also Bought

Product Specification & Summary

‘দেশে বিদেশে’ বইটির কিছু অংশঃ এক
চাঁদনি থেকে নসিকে দিয়ে একটা শর্ট কিনে নিয়েছিলুম। তখনকার দিনে বিচক্ষণ বাঙালির জন্য ইয়োরোপিয়ন থার্ড নামক একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান ভারতের সর্বত্র আনাগোনা করত।
হাওড়া স্টেশনে সেই থার্ডে উঠতে যেতেই এক ফিরিঙ্গি হেঁকে বললে, ‘এটা ইয়োরোপিয়নদের জন্য।’
আমি গাঁক গাঁক করে বললুম, ইয়োরোপিয়ন তো কেউ নেই। চল, তোমাতে-আমাতে ফাকা গাড়িটা কাজে লাগাই।’
এক তুলনাত্মক ভাষাতত্ত্বের বইয়ে পড়েছিলুম, বাংলা শব্দের অন্ত্যদেশে অনুস্বার যোগ করিলে সংস্কৃত হয়; ইংরেজি শব্দের প্রাদেশে জোর দিয়ে কথা বললে সায়েবি ইংরেজি হয়।’ অর্থাৎ পয়লা সিলেবলে অ্যাকসেন্ট দেওয়া খারাপ রান্নায় লঙ্কা ঠেসে দেওয়ার মতো— সব পাপ ঢাকা পড়ে যায়। সোজা বাংলায় এরি নাম গাঁক গাঁক করে ইংরেজি বলা। ফিরিঙ্গি তালতলার নেটিব, কাজেই আমার ইংরেজি শুনে ভারি খুশি হয়ে জিনিসপত্র গোছাতে সাহায্য করল। কুলিকে ধমক দেবার ভার ওরি কাঁধে ছেড়ে দিলুম। ওদের বাপখুড়ো, মাসিপিসি রেলে কাজ করে- কুলি শায়েস্তায় ওরা ওয়াকিফহাল।
কিন্তু এদিকে আমার ভ্রমণের উৎসাহ ক্রমেই চুবসে আসছিল। এতদিন পাসপোর্ট জামাকাপড় যোগাড় করতে ব্যস্ত ছিলুম, অন্য কিছু ভাববার ফুরসত পাইনি। গাড়ি ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রথম যে ভাবনা আমার মনে উদয় হল সেটা অত্যন্ত কাপুরুষজনোচিত— মনে হল, আমি একা।
ফিরিঙ্গিটি লোক ভালো। আমাকে গুম হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে বলল, ‘এত মনমরা হলে কেন? গোয়িঙ ফার?’
দেখলুম বিলিতি কায়দা জানে। ‘হোয়ার আর ইউ গোয়িঙ?’ বলল না। আমি যেটুকু বিলিতি ভদ্রস্থতা শিখেছি তার চোদ্দ আনা এক পাদরি সায়েবের কাছ থেকে।
সায়েব বুঝিয়ে বলেছিলেন যে, ‘গোয়িঙ ফার?’ বললে বাধে না, কারণ উত্তর দেবার ইচ্ছা না থাকলে ইয়েস’ ‘নো’ যা-খুশি বলতে পার— দুটোর যে কোনও একটাতেই উত্তর দেওয়া হয়ে যায়, আর ইচ্ছে থাকলে তো কথাই নেই। কিন্তু ‘হোয়ার আর ইউ গোয়িঙ' যেন ইলিসিয়াম রো’র প্রশ্ন ফাঁকি দেবার জো নেই। তাই তাতে বাইবেল অশুদ্ধ হয়ে যায়।

পালামৌ বইটির সূচিঃ পালামৌ : সঞ্জীবচন্দ্র -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
* ভূমিকা
* লেখক জীবনী
* প্রথম প্রবন্ধ
* দ্বিতীয় প্রবন্ধ
* তৃতীয় প্রবন্ধ
* চতুর্থ প্রবন্ধ
* পঞ্চম প্রবন্ধ
* ষষ্ঠ প্রবন্ধ

‘উঠোন পেরিয়ে দুই পা’ ভূমিকাঃ ইংরেজীতে Travelogue বলে একটি শব্দ আছে যার অর্থ অবশ্যই ভ্রমণ কাহিণী না। ভ্রমণ-গল্প হতে পারে। আমি এই ধারায় বেশ কিছু লেখালেখি করেছি। লেখাগুলিকে একত্র করার নিজে তেমন প্রয়োজন অনুভব করিনি। অনন্যা’র মুনীর কি জন্যে করলেন তিনিই জানেন।
আমার ব্যক্তিগত জীবনে স্পষ্ট দুই বিভাজন আছে। জীবনের শুরুর অংশে যে আমার সঙ্গিনী ছিল শেষের অংশে সে ছিল না। অন্য একজন এসেছে। আমি পরিবার-কেন্দ্রিক মানুষ বলেই দু’জনের কথাই আনন্দ নিয়ে অবপটে লিখেছি। পাঠকরা পড়তে গিয়ে ধাক্কার মত খান কি-না কে জানে।
যাপিত জীবন আমার কাছে ট্রেভেলগের মত। ভ্রমণের সঙ্গী বদল হয়। দৃশ্যপট-যিনি ভ্রমন করেছেন তিনিও বদলান।

জাপান কাহিনি -১ম খণ্ড বইয়ের কথাঃ আশির যখন জাপানে পড়তে গিয়েছিল ও তখন ছাত্র। পুরো আলাদা একটা সংস্কৃতিক থেকে সেখানে গিয়ে সে দেশের নানা কিছু দেথে ও স্বাভাবিকভাবেই অবাক হয়েছে। বিচিত্র বিষয় নিয়ে ব্যক্তিগত ঢঙে লেখা এই বইয়ের ছোট ছোট রচনাগুলো ওর সেই অবাক হওয়ার গল্প।
জাপানি জীবনের নানা ব্যাপার দেখে ও একাই শুধু অবাক হয়েছে তা নয়, ওর স্বাদু চিত্তাকর্ষক আর আমেজি লেখার মৌতাতে পাঠক হিসেবে আমরাও যেমন কিছুটা অবাক হয়েছি। লেখাগুলো ছোট মজাদার বুদ্ধিদীপ্ত ও গতিশীল। বিচিত্র তথ্যে ভরা। লেখার এই প্রসাদগুণ দিয়ে আশির ছোট ছো বেশকিছু মানবিক গল্পের পাশাপাশি জাপানি জীবনের নানা পরিচয়- ওখানকার মানুষের আত্মহত্যা, তাদের ভূতে বিশ্বাস, ফিউনারালের পরিপাটি ব্যবস্থা, শ্মশান, কাস্ট সমস্যা, কুসংস্কার, সামাজিক শিক্ষা, ভাষা, মিডিয়া- এমনি হরেক বিষয়কে রমণীয় করে তুলেছে।
দেশটিকে ও টুরিস্টদের মতো বাইরে থেকে দেথেনি- দেখেছে একজন বিদেশি হিসেবে যে বহুদিন সে দেশে থাকতে থাকতে নানা বাস্তব ও মানবিক অভিজ্ঞতায় ভরে উঠেছে। এ বই তারই উষ্ণ সজীব বিবরণ। এজন্যে বইটিতে জাপানের অন্তর্জীবনের খবর মেলে।
বছর আট-দশ আগে জাপানে বেড়াতে গিয়ে আমি ওদেশের ওপর একটা ভালো বই নিয়ে এসেছিলাম। কিন্ত বইটি পড়ে জাপানকে যেন জেনেছি তার চেয়ে বেশি। এর কারণ এ গল্প জাপানের একেবারে ভেতরের গল্প। লেখকের ব্যক্তিগত রসবোধ, চাউনি, বর্ণনাভঙ্গি একে প্রাণবন্ত করেছে।
বইটি আমাকে জাপানের বাসিন্দা করে তুলেছে। পড়ার সময় মনে হয়েছে সব পাঠকেরই হয়তো তাই মনে হবে।

‘পথে প্রবাসে’ বইয়ের পরিচায়িকাঃ বাংলা ভাষায় সার্থক ভ্ৰমণ-কাহিনী খুব বেশি নেই। তার কারণ কী, বলা কঠিন। একালের বাঙালীকে ঘরকুনো অপবাদ দেওয়া যায় না। এদেশে ইংরেজ শাসন পত্তন হয়েছিল বাংলা বোম্বাই মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে। তার মধ্যে বাংলা প্রেসিডেন্সি ছিল প্রধান। এখানেই ছিল গভর্নর-জেনারেল ও ভাইসরয়ের সদর দফতর। কলকাতা বহুকাল ছিল ব্রিটিশ-শাসিত ভারতের রাজধানী। ১৯১১ সালে রাজধানী উঠে যায় দিল্লীতে। তার পূর্ব পর্যন্ত কলকাতা ও বাংলা প্রেসিডেন্সির প্রাধান্য ছিল অবশ্য-স্বীকার্য। ইংরেজের সঙ্গে বাঙালী কোথায় না গেছে! ইংরেজ যেমন যেমন ভারত-বর্মা-আফগানিস্তান-মালয় দখল করেছে, বাঙালীও তেমন তেমন ইংরেজ অনুচর হয়ে ঐ সব অঞ্চলে থানা গেড়েছে। বাঙালী ডাক্তার, শিক্ষক, উকিল আর যুদ্ধের সরবরাহ বা কমিসারিয়েট-বিভাগের কেরানী ভারতের সর্বত্র পৌছেছে। আর যেখানেই গেছে সেখানেই গড়েছে একটি করে কালীবাড়ি। গত শতাব্দীর বাঙালীকে তাই ভারতের সব মুল্লুকে দেখতে পাওয়া যেত। ঐ সব এলাকায় বাঙালী নিছক পরিব্রাজক হয়ে যায়নি, গিয়েছিল ইংরেজ অনুচর রূপে। তবু নতুন দেশ নতুন লোক-সমাজ নতুন পরিবেশ তাকে আগ্রহী আর উৎসুক করে তুলেছিল। এই শ্রেণীভুক্ত কেদারনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের চীন-ভ্রমণবৃত্তান্ত তার পরিচয়স্থল।
উনবিংশ শতকের বাঙালী সাহিত্যে অনেক নতুন পথের সন্ধান দিল। খুলে দিল অনেক নতুন দরজা। মহাকাব্য, আখ্যানকাব্য, গীতিকাব্য, নাট্যকাব্য, সনেট, ট্রাজেডি, কমেডি, প্রহসন, উপন্যাস, ছোটগল্প, গুরুপ্রবন্ধ, লঘু নিবন্ধ, ব্যক্তিক গদ্যরচনা, কমিক নকশা : সবই দেখা গেল গত শতকে, তদনুপাতে সাৰ্থক ভ্ৰমণ কাহিনীর পরিমাণ অল্প।
সার্থক ভ্ৰমণকাহিনী রচনা সোজা নয়। তার জন্য চাই পাকা হাত আর সজাগ দৃষ্টি। নতুন দেশে এলে ভ্ৰমণকারীর মন সজাগ হয়ে ওঠে, দশ ইন্দ্ৰিয় দিয়ে পেতে চায় অভিনবকে; জীবনের নব নব আনন্দের জানলা খুলে যায় তার সামনে। সেই আনন্দ যখন নিপুণভাবে পরিবেষিত হয়—বস্তুপিণ্ড-বর্জিত হয়ে সার পরিবেষিত হয়— তখন পাঠক হয়ে ওঠে ভ্রমণকারীর মানসসঙ্গী। কোনো নতুন শহরে বা বন্দরে বা তীর্থে ভ্রমণের পরিচয় নয়, সেখানকার সুস্বাদু ভোজ্য-তালিকা, সুলভ বস্তুতালিকাও নয়, বা হোটেল-বিবরণ নয়। ভ্ৰমণ-কাহিনী তার চেয়ে অতিরিক্ত কিছু। এই অতিরিক্ত তিনিই দিতে পারেন যাঁর চোখ কান খোলা, ইন্দ্ৰিয়গ্রাম থাকে সচেতন।
ভ্ৰমণকাহিনী ভ্ৰমণ ও কাহিনীর যোগফল মাত্র নয়, তার চেয়ে স্বতন্ত্র কিছু। এই স্বাতন্ত্র্য তার চরিত্রে, তার মেজাজে, তার উপস্থাপনায়। বাংলা ভাষায় অনেক সময় ভ্ৰমণকাহিনীর নামে ছদ্মবেশী কাহিনী পরিবেষিত হয়। তাকে বলা উচিত ভেজাল ভ্রমণকাহিনী। ভ্রমণের অছিলায় এক জোড়া নরনারীর হৃদয় আদান-প্রদানের বৃত্তান্তকে ভ্ৰমণকাহিনী বলা উচিত নয়। আবার ট্রেনে টাইম-টেবিল ধরে ধারাবাহিকভাবে স্টেশনঅনুবর্তী স্থানগুলির বৃত্তান্তও সত্যিকারের ভ্রমণ-কাহিনী নয়। এই সব ভেজাল ভ্ৰমণকাহিনীর উদাহরণ আমাদের চোখের সামনেই আছে, সেগুলির উল্লেখ বাহুল্যমাত্র।
সার্থক ভ্ৰমণকাহিনী কোন কারণে বিরলসংখ্যক, তা এতক্ষণে আমরা অনুমান করতে পারছি।
বাংলা ভাষায় প্রথম সার্থক ভ্ৰমণকাহিনীর উদাহরণ বঙ্কিমচন্দ্রের অগ্রজ সঞ্জীবচন্দ্ৰ চট্টোপাধ্যায়ের ‘পালামৗ’। তঁর রচনাশক্তির শ্রেষ্ঠ নিদর্শন পালামৗ ভ্ৰমণকাহিনী। তাঁর দৃষ্টির নবীনতা ও সজীবতা ‘পালামৗ’-পাঠক পদে পদে অনুভব করেন। পালামৗ ভ্ৰমণবৃত্তান্ত সঞ্জীবচন্দ্ৰ যে ছাঁদে লিখেছেন, তাতে প্রসঙ্গক্রমে আশপাশের নানা কথা এসেছে। পালামৗবাসী কোল সমাজ, আপনি বাঙালী সমাজ, অরণ্য-প্রকৃতি, বিশ্বপ্রকৃতি, বনবাসীদের সঙ্গে বনের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক, লেখকের সংস্কার-মুক্ত রূপরসিক মন, লেখকের প্রৌঢ়জীবনের স্বাগত চিন্তা—সবই এখানে স্থান পেয়েছে। সব কিছুকে ছাপিয়ে উঠেছে সঞ্জীবচন্দ্রের মন, যা নতুন জায়গায় সচেতন ও সজাগ হয়ে উঠে আনন্দ আহরণ করতে পারে।
সঞ্জীবচন্দ্র ছিলেন শিল্পী। তাই নিছক ‘কবিত্ব’ করেন নি, নিপুণ অনিবার্য রেখাপাতে একটি ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন। লাতেহার পাহাড়ের বর্ণনাটি তার পরিচয়স্থল:
‘নিত্য অপরাহ্ণে আমি লাতেহার পাহাড়ের মোড়ে গিয়া বসিতাম, তাঁবুতে শতকার্য থাকিলেও আমি তাহা ফেলিয়া যাইতাম! চারিটা বাজিলে আমি অস্থির হইতাম। কেন কখনও ভাবিতাম না; পাহাড়ে কিছুই নূতন নাই; কাহারও সহিত সাক্ষাৎ হইবে না, কোন গল্প হইবে না, তথাপি কেন আমার সেখানে যাইতে হইবে জানি না। এখন দেখি এ রোগ আমার একার নহে। যে সময়ে উঠানে ছায়া পড়ে, নিত্য সে সময় কুলবধুর মন মাতিয়া উঠে, জল আনিতে যাইবে; জলে যে যাইতে পাইল না সে অভাগিনী, সে গৃহে বসিয়া দেখে উঠানে ছায়া পড়িয়ছে, আকাশে ছায়া পড়িতেছে, পৃথিবীর রং ফিরিতেছে, বাহির হইয়া যে তাহা দেখিতে পাইল না, তাহার কত দুঃখ। বোধ হয় আমিও পৃথিবীর রং ফেরা দেখিতে পাইতাম। কিন্তু আর একটি আছে, সেই নির্জন স্থানে মনকে একা পাইতাম, বালকের ন্যায় মনের সহিত ক্রীড়া করিতাম।
এখানে কবিত্ব করার কোন প্রয়াস নেই, অথচ লেখক তাঁর প্রকৃতি-ব্যাকুলতাকে নিপুণভাবে প্রকাশে সমর্থ হয়েছেন। বিকেলের পৃথিবীর রং ফিরছে, এই দৃশ্য দেখার জন্য প্রত্যেক মানুষই অস্থির হয়ে ওঠে : লেখক এই জীবনসত্যকে এখানে অবলীলায় প্রকাশ করেছেন। শহরের দৈনন্দিন জীবনের নিশ্চিছদ্র অবসরহীন কর্মপ্রবাহে আমরা বিকেলে পৃথিবীর রঙ ফেরা দেখি না, একা আপন মনের মুখোমুখি হই না। তার জন্য প্রয়োজন ছুটি— দৈনন্দিন জীবনের কর্মপ্রবাহ থেকে ছুটি। সেই ছুটি আমরা পাই ভ্ৰমণে আর সেই ছুটি আনন্দ রূপ পায় সার্থক ভ্রমণ-সাহিত্যে। এ না হলে সব আয়োজন বৃথা।
অল্প বয়সে-আঠারো-বিশ বছর বয়সে-রবীন্দ্ৰনাথ গিয়েছিলেন ইউরোপে। একটি সচেতন অনুভূতিপ্রবণ তরুণ মনের উপর চঞ্চল ইউরোপ যে গভীর প্রভাব বিস্তার করতে পারে, তার পরিচয়স্থল ‘য়ুরোপে প্রবাসীর পত্ৰ’ আর ‘য়ুরোপ যাত্রীর ডায়েরি’। যৌবনের উন্মাদনা আর চাঞ্চল্য; প্রাণাবেগের উৎসাহ আর স্মৃর্তি শত তরঙ্গভঙ্গে প্রাচী-র প্রতিনিধি তরুণ রবীন্দ্রনাথের চিত্ততটভূমিতে আছড়ে পড়েছে, তারই প্রতিক্রিয়া এ দুই ভ্ৰমণকাহিনী, এ দুটির মধ্য দিয়ে আমরা এক তরুণ ভ্ৰমণকারীকে পাই—যাঁর মন সদাজাগ্ৰত, কৌতুহলী, জীবন সম্পর্কে সদা-সচেতন। রবীন্দ্রনাথের সার্থক ভ্রমণকাহিনী— ‘ছোটনাগপুর’ (১২৯২ আষাঢ়)—প্রমাণ করে লেখকের সচেতন মনের ক্রিয়া।
আসল কথা, এই জাগ্ৰত কৌতুহলী সদাসচেতন মন একটা সার্থক ভ্রমণ-কাহিনীর মূলে সক্রিয় থাকে। নিখুঁত পর্যবেক্ষণ ও তার নিপুণ রূপায়ন ভ্ৰমণ-কাহিনীর সফলতার মূলে অনেকটা কাজ করে। সব সময় এই সব ক’টি উপাদানের সমাবেশ হয় না বলেই অনেক লেখাই সার্থক ভ্ৰমণকাহিনী হয়ে ওঠে না। নবীনচন্দ্র সেনের ‘প্রবাসের পত্র’ বা দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘বিলাতের পত্ৰ’ তাই সার্থক হয়ে ওঠে নি। বরং জলধর সেনের ‘হিমালয়’ ভ্ৰমণকাহিনী হিসেবে সার্থক হয়ে উঠেছে। এই লেখকের কোনো সাজ বা ঠাঁট নেই, আছে সহজ অন্তরঙ্গতা, আছে ঘরোয়া ঢঙ, আছে সাবলীলতা। তিনি যা দেখেছেন তা অন্তরঙ্গভাবে ঘরোয়া ভঙ্গিতে পাঠকের কাছে পেশ করেছেন।
বিংশ শতাব্দীতে ভ্ৰমণকাহিনীতে ভেজাল দেখা যায়। বোধ করি তার সূচনা শরৎচন্দ্রের রচনায়, যদিচ তাঁর সে সচেতন অভিলাষ ছিল না। ‘শ্ৰীকান্তের ভ্রমণকাহিনী’ নাম দিয়ে শরৎচন্দ্ৰ পর্বে পর্বে উপন্যাস লিখেছিলেন; পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশের সময় তার নাম হয় শ্ৰীকান্ত। ভ্রমণবৃত্তান্তের শিথিলগ্রথিত কাহিনীর আধারে নরনারীর প্ৰেমাখ্যান পরিবেষণের সেই সূচনা। পরে এই রীতি বাংলায় বহুল প্রচলিত হয়েছে। বস্তুত বিশুদ্ধ ভ্ৰমণকাহিনী কমই লেখা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের পূর্বোক্ত তিনটি গ্রন্থ ছাড়া পরবর্তী ভ্ৰমণবিবরণসমূহ (জাপানযাত্রী’, ‘জাভাযাত্রীর পত্র’, ‘পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারী’)বিশুদ্ধ ভ্ৰমণকাহিনী নয়। এগুলি ডায়ারি-সচেতন মনের অবিরাম বকুনি’। আর এক-ধরনের রচনা আছে, যা সৌন্দর্য উপভোগের ফল, বিশুদ্ধ ভ্ৰমণকাহিনী নয়;— যেমন বলেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কণারক’,—যা কণারকের মতোই সৌন্দর্যে মদির হয়ে উঠেছে। একালের উৎকৃষ্ট ভ্রমণকাহিনীর উদাহরণ অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘পথে বিপথে', অতুলচন্দ্র গুপ্তের ‘নদীপথে’, উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের হিমালয়-সম্পর্কিত ভ্ৰমণ গ্রন্থাবলী। প্রথমটিকে বিশুদ্ধ ভ্ৰমণকাহিনী বলতে অনেকেই রাজী হবেন না, কারণ এখানে মাঝে মাঝে বাস্তব ও স্বপ্ন, রিয়ালিটি ও ফ্যান্সির সংমিশ্রণ ঘটেছে। পরবর্তী লেখক দুজনের রচনা বিশুদ্ধ ভ্ৰমণকাহিনী, তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই।

‘আমেরিকা (৬ সপ্তাহের ভ্রমণ কাহিনি)’ বইটির ভূমিকাঃ আমাকে মাঝে মাঝেই অনেকে অনুরোধ করেছেন যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে একটি ভ্রমণকাহিনী লিখতে। ব্যাপারটি আমি কখনো গুরুত্ব দিয়ে নিই নি, কারণ ভ্রমণকাহিনীর মাঝে ঘুরেফিরে নিজের কথা এসে যায় আর নিজের ব্যক্তিগত কথা দশজনের কাছে বলতে আমার ভারি সংকোচ হয়। এছাড়াও ভ্রমণকাহিনী লেখার পূর্বশর্ত হচ্ছে ভ্রমণ। আমি যেখানে আঠারো বৎসর বাস করে ফেলছি, সেটা আর যা-ই হোক ভ্রমণ নয়। আমার ধারণা ভ্রমণের একটা শুরু এবং শেস থাকার কথা।
প্রবাসজীবন শেষ করে ফিরে আসার পর অবশ্যি অবস্থার খানিকটা পরিবর্তন হয়েছে। এখন আমি নিজের দেশে স্থায়ী হয়েছি এবং কিছুদিনের জন্যে যুক্তরাষ্ট্রে হাজির হলে সেটাকে ভ্রমণ হিসেবে চালিয়ে দেয়া যায়। শুধু তা-ই নয়, অন্য দশজন যখন স্বল্পকালীন ভ্রমণে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের খোলস দেখে মোহগ্রস্ত বা বিভ্রান্ত হয়ে যান, আমি তখন খোলস ভেদ করে সেখানকার সত্যিকার জীবনপ্রবাহের কাছাকাছি চলে যেতে পারি। সেই দেশটি আমার কাছে এখন আর বিদেশ নয়, সেই দেশের মানুষও বিদেশি নয়- আমি তাদের বুঝতে পারি, অনুভব করতে পারি।
তাই এই গ্রীষ্মের শুরুতে ছয় সপ্তাহের জন্যে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে হঠাৎ ইচ্ছে করল দেশটিকে নিয়ে লিখতে। লেখা শেষ হলে আবিষ্কার করেছি দেম নয়- লেখা হয়েছে দেশের মানুষকে নিয়ে। ভ্রমণকাহিনীতে যা থাকার কথা তার কিছু এখানে নেই, যা থাকার কথা নয় তা-ই দিয়ে পৃষ্ঠা ভরে রেখেছি!
লেখাটিতে নানা বিষয়ে অসম্পূর্ণতা থাকতে পারে, নানা ধরনের অসংগতি থাকতে পারে, তবে যে মানুষগুলির কথা বলেছি তাদের প্রতি আমার আন্তরিকতায় এতটুকু খাদ নেই। যে দেশের মানুষ আমাকে স্বদেশ এবং স্বজন থেকে বহুদূরে বুক আগলে রেখেছিল তাদের জন্যে আমার ভিতরে গভীর ভালোবাসা ছাড়া আর কিছু নেই।

Similar Category Best Selling Books

Related Products

Sponsored Products Related To This Item

Reviews and Ratings

3.2

424 Ratings and 200 Reviews

sort icon

Product Q/A

Have a question regarding the product? Ask Us

Show more Question(s)
prize book-reading point

Recently Sold Products

Recently Viewed
cash

Cash on delivery

Pay cash at your doorstep

service

Delivery

All over Bangladesh

return

Happy return

7 days return facility

0 Item(s)

Subtotal:

Customers Also Bought

Are you sure to remove this from book shelf?

জনপ্রিয় ৭টি ভ্রমণ বিষয়ক বই