‘হটলাইন’ বইয়ের ফ্ল্যাপের কথাঃ অন্য পাশ থেকে কেউ কিছু বলবে রত্না আশা করেনি, কিন্তু সে প্রথমবার একটা কণ্ঠস্বর শুনতে পেলো, কেউ একজন ভারী গলায় ধীরে ধীরে বলল, “হ্যাঁ। আমি ছাদের কার্নিশে দাঁড়িয়ে আছি। লাফ দিব। এক্ষুনি লাফ দিব। ছয়তলা থেকে।”
ভূমিকা পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই সুইসাইড হটলাইন রয়েছে। বিষণ্ণ, হতাশাগ্রস্থ বা আত্মহত্যা করতে উদ্যত মানুষেরা সেখানে ফোন করে বেঁচে থাকার অর্থ খুঁজে পেতে পারে। আমাদের দেশেও এরকম হটলাইন আছে এবং সেখানে যেসব কমবয়সী ভলান্টিয়ারেরা কাজ করে তাদের অনেকের সাথে আমার পরিচয়ও আছে। এই ভলান্টিয়ারদের অভিজ্ঞতাগুলো অসাধারণ কিন্তু তারা যেহেতু গোপনীয়তার অঙ্গীকার করে কাজ করে সেজন্য তাদের সেই অভিজ্ঞতাগুলো কখনোই আমি তাদের মুখ থেকে জানতে পারিনি। তাই সুইসাইড হটলাইনের এই ছোট উপন্যাসটি আমাকে কল্পনা করে লিখতে হয়েছে। আমার কল্পনার সাথে সম্ভবত বাস্তবতার খুব মিল নেই, সুইসাইড হটলাইনের ভলান্টিয়ারেরা এই কারনে একটু বিচলিত হলেও আশা করছি পাঠকেরা আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। মুহম্মদ জাফর ইকবাল মিতু তিতুর টাইম মেশিন-বইয়ের কথাঃ মিতু সুইচটা টিপ দিতেই টাইম মেশিনটা ভয়ংকর গর্জন করে চালু হয়ে যায়। পিছন থেকে লাল আগুন আর কালো ধোঁয়া বের হতে থাকে। টাইম মেশিনটা শন শন করে ঘুরপাক খেতে থাকে, চারপাশের সবকিছু ছিটকে ছিটকে পড়তে থাকে তার প্রচণ্ড শব্দে মনে হলো বুঝি কানের পর্দা ফেটে যাবে। মিতু আর তিতু দুই হাত দিয়ে কান ধরে রাখল। তাদের মনে হলো সামনে একটা সুড়ুঙ্গ আর টাইম মেশিনটা ঘুরপাক খেতে খেতে সেই সুড়ুঙ্গের ভিতর ঢুকে গেল। তাদের মনে হলো তারা পড়ে যাচ্ছে, ভয় পেয়ে তারা গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে থাকে তখন হঠাৎ করে তারা ধপ করে তাদের ঘরের ভিতর এসে পড়ল।
‘নিয়ান’ বইটির ফ্ল্যাপে লেখা কথাঃ মনিকা এক দৃষ্টিতে নিয়ানের দিকে তাকিয়ে রইল। গায়ের রং ককেশিয়ানদের মতো ধবধবে সাদা। মাথায় সোনালি চুল ঘাড় পর্যন্ত নেমে এসেছে। একটা পশুর চামড়া তার কোমর থেকে ঝুলছে। ওপরে কিছু নেই, খালি গা। সুঠাম পেশিবহুল দেহ। উঁচু কপাল এবং খাড়া নাক। লম্বাটে মুখ, শক্ত চোয়াল। ‘মানুষের ছোট বাচ্চা’ বইটির ফ্ল্যাপের কথাঃ মানুষের বাচ্চা কটু লাজুক মুখে হেসে বলল, “আমি সবকিছু কল্পনা করি। আমার কল্পনা করতে খুব ভালো লাগে। বনের সব পশুপাখি তখন একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকাল। তারা কেউ কোনো কিছু কল্পনা করতে পারে না। কেমন করে কল্পনা করে সেটাও তারা জানে না। হরিণের বাচ্চা বলল, কেমন করে কল্পনা করে সেটা আমাকে দেখাবে? মানুষের বাচ্চা বলল, “ঠিক আছে। আমি কল্পনা করে তোমাদের একটা গল্প বলি…. ‘অবিশ্বাস্য সুন্দর পৃথিবী’ বইয়ের ফ্ল্যাপের কথাঃ “...আমি স্ট্রেচারে শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়েছি। আকাশে ভরা একটি চাঁদ ঠিক মাথার ওপরে আমার দিকে স্নেহভরে তাকিয়ে আছে। নির্মেঘ আকাশে বিশাল একটি চাঁদ, জ্যোৎস্নার আলোতে চারপাশ থইথই করছে, কী আশ্চর্য একটি দৃশ্য। আমি বুভুক্ষের মতো তাকিয়ে রইলাম। আমার মনে হলো, কী অবিশ্বাস্য সুন্দর এই পৃথিবী! এই অপূর্ব সৌন্দর্য আমি দেখতে পাব? সৃষ্টিকর্তা এই অবিশ্বাস্য সৌন্দর্য দেখার জন্যে আমাকে এই পৃথিবীতে বাঁচিয়ে রাখবেন?”
ভূমিকা ২০১৮ সালের মার্চ মাসের ৩ তারিখ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি ছেলে আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। আমার খুব সৌভাগ্য আমি প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলাম। কোনো একটি বিচিত্র কারণে আমি কখনোই এই ছেলেটির প্রতি কোনো ধরনের ক্রোধ কিংবা ক্ষোভ অনুভব করিনি। আমি এই ছেলেটির সাথে দেখা করেছিলাম, কথা বলেছিলাম। একজন মানুষের জন্য এই অভিজ্ঞতাটি এত বিরল যে আমার মনে হয়েছে, সেই অভিজ্ঞতাটুকু লিখে রাখা প্রয়োজন। সে জন্যেই আমি এটা লিখেছি। এই ঘটনার পর দেশের মানুষের কাছ থেকে আমি যে ভালোবাসা পেয়েছি, সেই ভালোবাসার প্রতিদান দেয়া কারো পক্ষে সম্ভব নয়। আমি তার চেষ্টাও করব না। মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১২, জানুয়ারি, শাবিপ্রবি, সিলেট
বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরী পাঠকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি মূলত এ দেশের একজন বিখ্যাত লেখক, পদার্থবিদ এবং শিক্ষাবিদ। কিশোর সাহিত্য, শিশুতোষ গ্রন্থ, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, গণিত বিষয়ক বই এর জন্য খুব অল্প সময়েই জনপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি। মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৯৫২ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। মুক্তিযোদ্ধা বাবা ফয়জুর রহমানের চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন জেলাতেই তিনি পড়াশোনা করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে পিএইচডি ডিগ্রী অজর্নের উদ্দেশ্যে স্কলারশিপ নিয়ে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। পিএইচডি সম্পন্ন করে ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে বিখ্যাত বেল কমিউনিকেশনস রিসার্চ ল্যাবেও গবেষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৪ সালে দেশে ফিরে এসে তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগ দেন। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সবসময়ই এ দেশের কিশোর-কিশোরীদের কাছে বিশেষ আবেদন নিয়ে হাজির হয়েছে। কিশোর সাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ক অজস্র গ্রন্থ দিয়ে তিনি আলোকিত করে তুলেছেন এদেশের অগণিত কিশোর-কিশোরীর মনোজগত। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সমূহ, যেমন- দীপু নাম্বার টু, আমার বন্ধু রাশেদ, আমি তপু, শান্তা পরিবার, দস্যি ক’জন ইত্যাদি ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পায়। তার বেশ কিছু গল্প পরবর্তীতে নাটক ও চলচ্চিত্র হিসেবে টিভি পর্দায় স্থান করে নিয়েছে। তিনি একজন বিশিষ্ট কলামিস্টও। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডও তাঁর ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সমগ্র সকল বইপড়ুয়াকেই আকৃষ্ট করে। সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বহুবার পুরষ্কৃত হয়েছেন। বাংলা একাডেমি পুরষ্কার (২০০৪) এবং শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হিসেবে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার (২০০৫) সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও, কাজী মাহবুবুল্লা জেবুন্নেছা পদক (২০০২), শেলটেক সাহিত্য পদক (২০০৩), ইউরো শিশুসাহিত্য পদকসহ (২০০৪) অগণিত পুরষ্কার অর্জন করেছেন গুণী এই সাহিত্যিক।