প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
TK.
260
TK. 182 (30%)
সাইন আপ করে প্রথম ৪০০+ টাকার অর্ডার করলেই ডেলিভারি চার্জ মাত্র ২০ টাকা!
ইমরান চৌধুরীর একটি উপন্যাস ‘পাতা’ সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার লিখেছিলেন, ‘পাতা উপন্যাসের ভাষার সারল্য, উপন্যাসটিকে সুখপাঠ্য করেছে’। সত্যিই ইমরান চৌধুরীর কথাসাহিত্য দারুণ সুখপাঠ্য। সেটি উপন্যাসের ক্ষেত্রে যেমন ঠিক, তেমনি তাঁর ছোটগল্প সম্পর্কেও। সম্প্রতি তাঁর যে গল্পগ্রন্থটি পাঠের সুযোগ হয়েছে, তার নাম ‘মুক্তিযুদ্ধ ও অন্যান্য গল্প’। এখানেও লেখকের নিজস্ব এক সাবলীল ভাষার উপস্থিতি বিদ্যমান। তবে ভাষার সারল্য বা পাঠকালীন আনন্দের জন্যই শুধু এখানকার গল্পগুলো বিশিষ্ট হয়ে ওঠেনি। গল্পগুলো অন্যান্য কারণেও বিশেষ। বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্য ও জীবনের নানামুখী বয়ান এই গল্পগুলোকে মাত্রাগত ভিন্নতা দিয়েছে। ছোটগল্পের পরিসর কম হওয়ায় এই মাধ্যমটিতে কাহিনি ফুটিয়ে তোলার জন্য সাহিত্যিক সক্ষমতার প্রয়োজন। কাহিনির মেদ ঝরিয়ে তাকে ঝরঝরে করে তোলাও লেখকের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ এখানে। বলা বাহুল্য, ইমরান চৌধুরী সেই চ্যালেঞ্জ অনায়াসে উতরে গেছেন। গল্পগুলোর কাহিনি বিচিত্র হলেও লেখকের ভাষাভঙ্গির একরৈখিকতা চোখে পড়ার মতো। এই বৈশিষ্ট্যই মূলত গল্পগ্রন্থটিকে এক সুতোয় বেঁধে রেখেছে। কয়েকটি গল্পে শুরু থেকেই যে টানটান উত্তজনা তৈরি হয়, লেখক সেটিকে ধরে রাখেন একদম শেষ লাইন অবধি। ফলে, পাঠকও একবার পড়া শুরু করার পর সেখান থেকে মনোযোগ সরাতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এই বইয়ে যে গল্পটি স্থান পেয়েছে, তার নাম ‘কালোগোলাপ’। এই গল্পটির প্রতীকী ব্যঞ্জনা পাঠককে মুগ্ধ করবে। লেখক এখানে কালো গোলাপের প্রতীকে মহিমান্বিত করছেন যুদ্ধদিনের ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের। পুরুষতান্ত্রিক পৃথিবীতে যুদ্ধের অন্যতম প্রধান শিকার নারী। এই নারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়, আবার নারীই আশ্রয় দেয় প্রজন্মকে। নারী যেন অনেকটাই নীলকণ্ঠের মতো, যারা আত্মগত বিষের দংশনে নীল হয়ে থাকে। তাদেরই একজন এই গল্পের প্রিসিলা। উত্তম পুরুষে লেখা এ গল্পের প্রধান চরিত্রের মধ্যে আমরা মধ্যবিত্ত জীবনের সংকট উপলব্ধি করি। ক্লাসের ভালো ছেলেটি দেশের জরুরি অবস্থায়ও যুদ্ধে যেতে পারছে না। একদিকে বিদেশে উচ্চশিক্ষার লোভনীয় সুযোগ, অন্যদিকে টানছে যুদ্ধ। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান হওয়ার সে একইসাথে পিতামাতা ও মাতৃভূমির টানের টানাপোড়েনের মধ্যে থাকে। তবে, দেশের জন্য কিছু করতে না পারার কষ্ট ও অপরাধবোধ কিন্তু তার আছে। সে চায়, চাওয়া প্রবল না হওয়ায় সে তার মধ্যবিত্ত মানসিকতাকে জয় করতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমাদের দেশে অনেক গল্প লেখা হয়েছে। তবে ‘কালোগোলাপ’ গল্পটি এসব গল্প থেকে অনেকটাই আলাদা। লেখক সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি দৃষ্টিকোণ থেকে এ গল্পে মুক্তিযুদ্ধকে দেখানোর চেষ্টা করেছেন। একটি কালোগোলাপ হূদয়ে ধারণ করার মাধ্যমে এই গল্পের প্রধান চরিত্র যুদ্ধে যেতে না পারার গ্লানি থেকে কিছুটা হলেও মুক্ত হতে চায়। গল্পটা যে নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে শেষ হয়, তা অসাধারণ। ‘ক্রসফায়ার’ গল্পে একটি প্রেমের গল্পের সমান্তরালে সমসাময়িক সমাজবাস্তবতাকে তুলে ধরেছেন লেখক। এই গল্পের অন্যতম শক্তিশালী অংশ হলো সাত মিনিটের একটি যৌনতার বিবরণ। এটি এতটাই কাব্যিক আর প্রতীকী যে তা পাঠকের উপলব্ধিতে দীর্ঘ রেশ রেখে যায়। আমাদের প্রাত্যহিক জীবন-বাস্তবতার ভেতরে এসব গল্প রয়ে গেছে। কেবল অনুসন্ধানী চোখই পারে সেটা তুলে আনতে। একটি ক্রসফায়ারের ঘটনার যে অভিঘাত, তার যে মর্মস্পর্শী বয়ান লেখক পেশ করেন, তা আমাদের মানবিক বোধকে নাড়া দেয়। নারী পুরুষের সম্পর্কের রসায়নকে এখানে দেখা হয়েছে আরেকটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে। ‘ক্লাসমেট’ গল্পটি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একজন নিম্নবিত্ত ছেলের জীবনের গল্প। ধনী-দরিদ্রের ব্যবধানকে লেখক দারুণ এক স্যাটায়ারের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। অবস্থানগত ভিন্নতার তুলনা করতে গিয়ে তিনি একটি চুলের রূপক বেছে নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের নানা খুঁটিনাটি বিষয় এ গল্পকে আলাদা দ্যোতনা দিয়েছে। ‘জীবাণু’ গল্পে মানব চরিত্রের অন্ধকারময় একটি দিক ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক। এ গল্পের প্রধান চরিত্র মোখলেস জীবাণুদের কথা শুনতে পায়। তার খাওয়া-দাওয়া প্রায় বন্ধ। দীর্ঘ সময় ধরে সে মানসিক জটিলতায় ভোগে। আসলে পাপবোধ যে মানুষকে কুঁরে কুঁরে খায়, শুধু মানসিকভাবে নয়, ক্ষেত্রবিশেষে শারীরিকভাবেও, সেটাই এই গল্পে দেখিয়েছেন লেখক। খানিকটা রহস্য গল্পের আদলে লেখা এই রচনাটিতে হুট করেই যেন রহস্য উন্মোচিত হয় পড়ে। মোখলেসের মানসিক সমস্যার কারণটিই এই গল্পের ধাঁধাঁর উত্তর। তবে উত্তরে পৌঁছানোর প্রক্রিয়াটি গল্পকারের যথেষ্ট মনোযোগ পায়নি বলেই মনে হয়েছে, সম্ভবত বর্ণনাটি আরেকটু দীর্ঘ হতে পারত। ‘নাবিলার ফটোকপি’ গল্পটি সায়েন্স ফিকশন। তবে প্রকৃতির শৃঙ্খলাকে শেষ পর্যন্ত ঠিক রেখেছেন লেখক। এটি পাঠের সময় পাঠক এক দোদুল্যমানতায় থাকেন। লেখক কি শৃঙ্খলাটি ভাঙবেন, যদি না ভাঙেন তাহলে কীভাবে সেটা অটুট রাখবেন সেটা পাঠককে এক টেনশনের মধ্যে রাখে। এই টেনশনটি চলমান থাকে গল্পের একেবারে শেষ পর্যন্ত। এ বইয়ের সর্বশেষ গল্প ‘কর্তব্যরত’। একজন চৌকস পুলিশ অফিসার বনাম দুর্ধর্ষ চোরাচালানি এবং মাদক ব্যবসায়ী। থ্রিলারের ধাঁচে লেখা এই গল্পটিও টানটান উত্তজনার মধ্যে পাঠককে নিমজ্জিত রাখে। তবে এটি যেভাবে শেষ হয়, তা পাঠকের কল্পনাতীত। মূলত এই গল্পের শেষ অংশটিই এর ভিত্তি। গল্পটির ধাঁচ দেখে মনে হয় গল্পটির ভিত্তিভূমি গল্পকারের জানা, অনুমান করা যায় গল্পের চরিত্র ও ঘটনার পারম্পর্য তাকে আলোড়িত করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বরত মানুষদের যে গল্প আছে তা প্রায় অজানা থেকে যায় নানাকারণে, বিশেষ কারণে কখনো কখানো তা লেখকের বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে। এ গল্পের গল্পবুনটেও হয়তো এমন একটি কারণ থেকে থাকতে পারে। ছোট ছোট সরল বাক্যে লেখক প্রতিটি গল্পের কাহিনি বলেন। ভাষার ওপর অনর্থক জরবদস্তি না থাকায় এই গ্রন্থটির পাঠ অনায়াস ও সহজ। তবে গল্পগুলোর বিচিত্র কাহিনি ও এর টুইস্ট পাঠককে আচ্ছন্ন করে রাখে। উত্কৃষ্ট সাহিত্য পাঠের পর একধরনের তৃপ্তি পাওয়া যায়। ইমরান চৌধুরীর গল্পগ্রন্থটি পড়ার পর মনের ভেতর সেই তৃপ্তিটা থাকে বহুক্ষণ।
Title | মুক্তিযুদ্ধ ও অন্যান্য গল্প |
Author | ইমরান চৌধুরী |
Publisher | নৈঋতা ক্যাফে |
Edition | 1st Published, 2019 |
Country | বাংলাদেশ |
Language | বাংলা |
Have a question regarding the product? Ask Us
Please log in to write question Log in
Help: 16297 or 09609616297 24 Hours a Day, 7 Days a Week
Pay cash on delivery Pay cash at your doorstep
Service All over Bangladesh
Happy Return All over Bangladesh
demo content