”উপন্যাস সমগ্র-১০” বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা:
এ কালের এক অগ্রগণ্য সমালােচক যথার্থই লিখেছেন: “নদীর কোনও ভান নেই— শীর্ষেন্দু মুখােপাধ্যায়ের ঔপন্যাসিক সত্তাতেও কোনও ভণিতা নেই। এক প্রাণবন্ত শৈশবস্মৃতি, এক যন্ত্রণাময় অভিজ্ঞান-সংকট এবং শান্ত নিরাসক্ত অবলােকন সবার উপরে এক সর্বতােসুভদ্র আস্তিক্য তার লেখক জীবনকে গড়ে তুলেছে।” বাংলা কথাসাহিত্যের বিরল লেখকদের অন্যতম শীর্ষেন্দুর প্রধান শক্তি তাঁর এই আস্তিক্যবােধ। জীবনের সকল সংশয়ের মধ্যেও তিনি এক অসংশয়িত উত্তরণের কথা উচ্চারণ করেন অপার সাহসে। চারপাশের অন্তহীন দিশাহীনতার মাঝখানে দাড়িয়েও তিনি সাহসী। এখানে তিনি এক অনন্যস্রষ্টা। শীর্ষেন্দুর যে-কোনও কাহিনীতে দেখি চতুর্দিকের সমস্ত বিপন্নতা সত্ত্বেও, মনুষ্যত্বের জন্য মানুষের মানবিক উৎকণ্ঠা দুর্মর’। এই মুহূর্তে এক সংক্ষুব্ধ। সময়ের মধ্যে দিয়ে জীবনের পারাপার। তবু তারই মধ্যে মানুষের পবিত্র স্বরূপকে তিনি খোঁজেন পরম মমতায়। তিনি বিশ্বাস করেন, কোথাও একটা আশ্রয় আছে, ফেরার জায়গা আছে। আস্তিক্যবােধের সঙ্গে এই প্রেমিক অথচ বৈরাগী’ লেখকের সমগ্র সৃষ্টিতে লগ্ন হয়ে আছে এক অবােধ। প্রবল ভালবাসার আকুলতা। তার নিজের কথায়, “এই আকুলতাকে আমি নানাভাবে প্রকাশ করার চেষ্টা করেছি আমার লেখায়। তবু মনে হয়, আমার প্রকাশভঙ্গির ব্যর্থতায় আজও বুঝি সবাইকে আমার ভিতরকার ভালবাসার কথাটা বােঝাতেই পারিনি।... আমার অকথিত ভালবাসার কথা কি বােঝে, বুঝতে পারে এই পৃথিবী, এই কলকাতা, এই দেশ? ভাষা দিয়ে সব কি প্রকাশ করা যায় ?” লেখকের আপন সংশয় সত্ত্বেও তার সৃষ্ট চরিত্ররা বহন করছে সেই ভালবাসার তরঙ্গ। উপন্যাসের শৈলী ও নির্মিতিতে শীর্ষেন্দুর আত্মস্থ অথচ অনাসক্ত ভঙ্গি এবং বীক্ষণ বাংলা কথাসাহিত্যে অন্যমাত্রা সংযােজন করেছে। তার লেখা সমস্ত উপন্যাস খণ্ডে খণ্ডে প্রকাশের আয়ােজন করা হয়েছে। এই দশম খণ্ডে আছে স্মরণীয় পাঁচটি উপন্যাস: গুহামানব, কালাে বেড়াল সাদা বেড়াল, দ্বিচারিণী, ঝাপি, চক্র (১-৩৫ পর্ব)।
Read More