"আমার কিছু কথা" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ স্বয়ং মহান সৃষ্টিকর্তার অপরিসীম অনুগ্রহে বাঙালী জাতি পেয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর মত একজন নেতা। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কিছু লেখতে বসলেই আমি প্রথমে কিছুটা দ্বিধায় পড়ে যাই। তার কোন দিকটি ছেড়ে দিয়ে কোন দিকটি আগে লেখি তা বরাবরই আমাকে ভাবনায় ফেলে দেয়। তার ছােটবেলা, তরুণ বয়স যৌবন। মােটকথা তার জীবনের প্রতিটি ধাপই তাকে অমর করে রেখেছে। তার নেতৃত্ব মূলত তাকে সবার চেয়ে আলাদা করেছিল। একজন নেতার নেতৃত্বদানের যত জ্ঞান-প্রজ্ঞা দরকার তার সবই ছিল। বিশেষ করে তার কণ্ঠের বক্তৃতা মানুষকে যাদুর মত আকৃষ্ট করত। তিনি যখন বক্তব্য দিতেন মনে হত তার কণ্ঠ থেকে মুক্তারমালা বের হচ্ছে। তার নেতৃত্বের অন্যতম আরেকটি বড় গুণ ছিল তিনি মানুষকে খুব সহজে আপন করে নিতে পারতেন। তিনি মানুষকে বিশ্বাস করতেন। তিনি ছিলেন বাঙালিদের জন্য এক আশির্বাদ। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তিনি বাঙালি জাতিকে প্রচণ্ড ভালাে বাসতেন। বঙ্গবন্ধু নিজেই বলেছেন, “আমি আমার বাঙালি জাতিকে প্রচণ্ড ভালােবাসি”। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল বাঙালিরা বঙ্গবন্ধুর মত নেতাকে চিন্তে পারেনি। যার ফলস্বরূপ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এদেশেরই কিছু বিপথগামী লােক তাকে সপরিবারে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুর রক্তের ঋণ এ জাতি শােধ করতে পারবে না। এ দেশ এ মাটি, এ জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে তিনি দেশদ্রোহীতার অপবাদ বহন করেছেন। জীবনের সিংহ ভাগ সময় জেলে কেটেছেন। পরিবার পরিজনকে সময় দিতে পারেননি তিনি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এদেশের মাটি ও মানুষকে ভালােবেসে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর জীবনের উল্লেখযােগ্য কিছু লেখা নিয়ে "আমার কিছু কথা” শিরােনামে এম এ হাসান একটি বই সম্পাদনা করছে জেনে খুবই খুশি হয়েছি। এ প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালােবাসা দেখে আমি নিতান্তই মুগ্ধ হয়েছি। অবশেষে 'ইতিহাস প্রকাশন'-এর স্বত্বাধিকারী আমজাদ হােসেন খান জামালকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি বইটি প্রকাশ করার জন্য। আমি সবার সুন্দর ও সুস্থ জীবন কামনা করি।
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একজন আদর্শ দেশনেতা ও রাজনীতিবিদই নন, তাঁর ছিলো উল্লেখযোগ্য সাহিত্য প্রতিভা। বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত করতে যিনি সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যার ফলে তাঁকে অভিহিত করা হয়ে থাকে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে। মহান এই ব্যক্তির জন্ম ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে। তাঁর শৈশব কেটেছে গোপালগঞ্জেই, যার ফলে শিক্ষাজীবনের সূত্রপাতও সেখানে। ১৯৪২ সালে গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। স্কুল-কলেজের লেখাপড়া শেষ করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন, কিন্তু ছাত্র রাজনীতি ও বিভিন্ন ছাত্র আন্দোলনের সাথে গভীরভাবে জড়িয়ে যাওয়ায় তিনি আর পড়ালেখা শেষ করতে পারেননি। পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষার্থে তিনি নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেন, যার ফলে সরকারের রোষানলে পড়েন। রাজনৈতিক কারণে তিনি দিনের পর দিন জেল খেটেছেন। এমনকি স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর প্রারম্ভে তাঁকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে গিয়ে জেলে আটকে রাখা হয়। এরপর দেশ স্বাধীন হলে দেশে ফিরে এসে তিনি দেশের শাসনভার গ্রহণ করেন এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এতকিছুর পরও বঙ্গবন্ধু সাহিত্যকর্মে অংশ নিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর বই ২টি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর বই সমূহ মূলত আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ। 'কারাগারের রোজনামচা' ও 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' এই দুটি বই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর বই সমগ্র এর অন্তর্ভুক্ত। এই দুটি বই-ই প্রকাশিত হয়েছে তাঁর মৃত্যুর পর, তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার উদ্যোগে। বঙ্গবন্ধু নিজে তেমন বই রচনা না করলেও তাঁকে নিয়ে রচিত হয়েছে অসংখ্য বই। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বই এর মধ্যে শেখ হাসিনার লেখা 'শেখ মুজিব আমার পিতা', পীর হাবিবুর রহমানের 'পোয়েট অব পলিটিক্স', ফারুক চৌধুরীর 'স্মরণে বঙ্গবন্ধু', এম আর আখতার মুকুলের 'মুজিবের রক্ত লাল', শেখ শাহাদাতের 'বিপ্লবী নেতা শেখ মুজিব' ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা কতিপয় সেনাসদস্যের হাতে নিজ বাসভবনে সপরিবারে নিহত হন।