"তুলসী ঘাটের বৃত্তান্ত" বইয়ের ফ্ল্যাপে লিখা কুমিল্লার উত্তর-পশ্চিম কোণে অবস্থিত তুলসী ঘাটে (পঞ্চবটি) সংঘটিত একাত্তরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এবং পাকসেনাদের পাশবিক নির্যাতনকে কেন্দ্র করে এই উপন্যাস। তমিজ উদ্দিন নামের একজন অলিখিত মুক্তিযােদ্ধার স্ত্রী জোবেদা পাকসেনা কর্তৃক পাশবিক নির্যাতন শেষে মারা যান! মৃত্যুর পর ওর লাশ ঝুলে থাকে তুলসী ঘাটের পাশে, একটি অশ্বথ গাছের ডালে; ঝুলন্ত জোবেদার শরীর থেকে পা বেয়ে বেয়ে রক্ত ঝরছিল মাটিতে! কোনাে এক রাতে তুলসী ঘাটে বসে মুসাফির নামের এক যুবককে জোবেদার মৃত্যু এবং হানাদার বাহিনীর লােমহর্ষক কাহিনি শােনায় তমিজ উদ্দিন। ওই ঘটনা বলতে গিয়ে ওই সময়ে তুলসী ঘাট এবং এর আশপাশে ঘটে যাওয়া আরাে বহু হাসি-কান্নার ঘটনা ওঠে আসে তমিজ উদ্দিনের কণ্ঠে। জোবেদার রক্তমাখা মাটি বুকে ও কপালে মেখে যুদ্ধে যায় তমিজ উদ্দিন। যুদ্ধে পাকিস্তানের লেজগুটানাে পরাজয়, বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করলেও তমিজ উদ্দিনের মন থেকে স্ত্রীহারা প্রতিশােধের আগুন কিছুতেই নেভাতে পারেনি। যেভাবে ওর স্ত্রীর রক্ত ঝরিয়েছে, ঠিক সেভাবে কোনাে এক পাকিস্তানি মেয়েকে পাশবিক অত্যাচার করার সিদ্ধান্ত নেয় সে। মিরপুর বিহারী পল্লী থেকে পাকিস্তানের বংশধর ভেবে পাঁচ-ছয় বছরের একটি বিহারী মেয়েকে অপহরণ করে তমিজ উদ্দিন। তমিজ উদ্দিনের ক্ষোভ- ওরা আমার স্ত্রীর ওপর বর্বর নির্যাতন। চালিয়েছে, রক্ত ঝরিয়েছে; আর আমি ওই পাকিস্তানি মেয়েটিকে বর্বরতায় রক্ত ঝরাব প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ...! এমন ঘৃন্য উদ্দেশ্য নিয়ে মেয়েটিকে লালন পালন করতে থাকে যৌবনপ্রাপ্ত না পর্যন্ত! যখন মেয়েটির বয়স বারাে কি তেরােতে পৌছে তখনই সে স্ত্রী হত্যার প্রতিশােধ নিতে মেয়েটির দিকে পা বাড়ায়… এছাড়াও তুলসী ঘাটে সংগঠিত রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, মনিরের জীবন বৃত্তান্ত এবং ওর শহিদ হওয়ার ঘটনাসহ পাকসেনাদের পৈশাচিক কর্মকাণ্ডের বিভিন্ন চিত্র শব্দের গাঁথুনিতে অনন্যভাবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন লেখক।