জহির রায়হানের সঙ্গে ঘুরে আসা যাক মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহ দিনগুলো থেকে। বড়োভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে গিয়ে ৩০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে তিনি নিখোঁজ হয়েছিলেন। এদিকে রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র লেফটেন্যান্ট সেলিমের যাত্রাটাও কম রোমাঞ্চকর নয়! এক পর্যায়ে এসে এই দুই অকুতোভয় সূর্যসন্তানের পথ এক রেখায় মিলল। তারপর? তারপর এলো ৩০ জানুয়ারি, ১৯৭২। স্বাধীন বাংলার মাটিতে বর্তমান মিরপুর ১২ ও পল্লবী এলাকার তুমুল যুদ্ধ! লেখকের প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাসিকা “আগুনের দিন শেষ হয়নি” পাঠককে নিয়ে যাবে আমাদের জন্ম-ইতিহাসের গা শিওরানো এক গলিতে। “হাতে বন্দুক থাকলে সব এক, কী পাঞ্জাবি, কী মুক্তিযোদ্ধা।” চায়ের দোকানদার চাচা নতমুখে জানালেন হাসিবকে। সদ্যই ভারতের শরণার্থী শিবির থেকে ফিরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে পা রেখেছে তরুণ বাঙালি। এসে দেখল অত্যাচার শেষ হয়নি। আগে করেছে পাঞ্জাবি। এখন করছে বাঙালি। দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার চলছেই। স্বপ্নের মুক্তিযুদ্ধ মানুষকে রক্ষা করতে পারেনি। এই অস্থির সময়েই একটা হিন্দু মেয়ের প্রেমে আকণ্ঠ ডুবে গেল হাসিব। ‘স্বাধীন বঙ্গে একদিন’ গল্পটি পাঠককে ঘুরিয়ে আনবে ইতিহাস ও বাস্তবতার এক সাররিয়েল জগত থেকে। ইপুয়েটের ছাত্র রাশেদ মনে প্রাণে পাকিস্তানের সমর্থক। ‘ভারতের দালাল’ হিন্দুগুলো যখন ঢাকায় যুদ্ধ লাগিয়ে দিলো, এক পাঞ্জাবি বন্ধুকে নিয়ে নিরাপত্তার খোঁজে গ্রামে পালিয়ে এলো সে। চাচাজান সাচ্চা ইমানদার, পাকিস্তান বলতে অজ্ঞান। শান্তিকমিটির চেয়ারম্যান। মেধাবী রাশেদ যোগ দিলো রাজাকারবাহিনীতে। তার মতো ব্রাইট ছেলেরা পাকিস্তানের সেবা না করলে চলবে কেন? এরপরই ঘটতে শুরু করল নাটকীয় সব ঘটনা। ‘স্বাধীনতা আমি’ গল্পটিতে আপনারা দেখতে পাবেন অপরপক্ষের গল্পটা, বাঙালি হিসেবে যার চর্চা আমরা করি না সচরাচর। পাকিস্তানপন্থীদের গল্প। বান্ধবীর সাথে খালি বাসায় প্রেম করা ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ফয়সালের আর কোনো দুরভিসন্ধী ছিল না সেদিন। তারপর উর্দু কবি আহমদ ইলিয়াস থেকে শুরু করে হেলাল হাফিজ ভাই, ঢাকা মেডিকেলের গেটে রাতের খাবার খাওয়া কিংবা তাস পেটানো, এই তো জীবন! কিন্তু দিনটির তারিখটাও আমাদের বিবেচনা করতে হবে। দিনটি ছিল ২৫ মার্চ, ১৯৭১। সন্ধ্যা ঘনিয়ে নেমে এলো রাত। ঢাকার ইতিহাসে একমাত্র রাত, যে রাতে কাক ডেকেছিল। ‘যে রাতে কাক ডেকেছিল’ গল্পটি এমন এক চোখ থেকে ২৫ মার্চের রাতকে দেখা, যেভাবে সচরাচর আমরা দেখে অভ্যস্ত নই। গল্পটির প্রায় প্রতিটি বাক্যেই অন্তর্নিহিত আছে তৎকালীন সময়, যদিও খালি চোখে মনে হবে এ যেন আমাদের এই ২০২০-এর আরেকটি দিন। প্রথম পাঠের পর পাঠক চাইলে গুগল ও ইতিহাসের বই নিয়ে পরে আবারও পূণর্পাঠ করতে পারেন এই গল্পটিকে। এছাড়া বইটিতে আছে ‘অ্যাসেট’ ও ‘লাল মাটি’ নামে আরো দুটো চমৎকার গল্প!
জন্ম ৩১শে ডিসেম্বর, ১৯৯৩, রাজশাহীর ক্রিশ্চিয়ান মিশন হসপিটালে। শৈশব কেটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কৈশোর ঢাকায়। রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক। অনলাইন ও অফলাইন মাধ্যমে গল্প লিখে লেখালেখির ক্যারিয়ার শুরু হয়। পরবর্তীতে উপন্যাসের জগতে পদচারণা “মিথস্ক্রিয়া”, “মৃগতৃষা”, “আগুনের দিন শেষ হয়নি”, “যে হীরকখণ্ডে ঘুমিয়ে কুকুরদল” নিয়ে। অনুবাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য গ্রেগ হুরউইটযের “অরফান এক্স”, পলা হকিন্সের “দ্য গার্ল অন দি ট্রেন” এবং ক্যারিন স্লটারের “ফলেন”। চিত্রনাট্য লিখেছেন একাধিক। আন্তর্জাতিক ফিল্মফেস্টে প্রথম পুরস্কার পাওয়া এমন এক শর্টফিল্ম “আ টয় অপারেশন থিয়েটার”। লেখকের বর্তমান মূল মনোযোগ উপন্যাস রচনা ও চলচ্চিত্র নির্মাণে।