"মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস বিশ্বকোষ (১-১০ খণ্ড)" বইটির ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ দীর্ঘদিন ধরে কেউ যখন আমাকে প্রশ্ন করতাে, আমাদের মাতৃভাষায় মুসলমানদের ইতিহাস বিষয়ে সবচেয়ে নির্ভরযােগ্য গ্রন্থ কোনটি? তখন উত্তর দিতে অনেক চিন্তা করতে হতাে। এজন্য নয় যে, ইতিহাস বিষয়ে কোনাে গ্রন্থ নেই; বরং এজন্য যে, ঐতিহাসিক বর্ণনার ভান্ডার থেকে উদ্দিষ্ট মুক্তা অনুসন্ধানের কাজ একটি পরিশ্রমসাপেক্ষ বিষয়। আর বাজারে বিদ্যমান ইতিহাসগ্রন্থসমূহ এক্ষেত্রে অনেক দুর্বল।.. বেশ কয়েক বছর আগে জামিয়াতুর রশিদের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মাওলানা মুহাম্মদ ইসমাইল রাইহান সাহেব আমাকে জানান, তিনি ইতিহাসের উপর এমন একটি কাজ করতে চান। এ সংবাদ জেনে একদিকে খুশি হই, অপরদিকে অন্তরে এ দ্বিধাও থেকে যায় যে, তিনি এ কাজের হক আদায় করতে পারবেন কি না। কিন্তু এই তরুণ আলেম কয়েক বছর পরেই 'তারীখে উম্মতে মুসলিমা’ নামে তার সংকলিত গ্রন্থের ৩ খণ্ড আমার কাছে পাঠান। আজকাল সফর ও ব্যস্ততার কারণে আমি আমার আগ্রহের কিতাব পড়ার সুযােগও খুবই কম পাই। তবে এই কিতাব আমাকে কিছুদিনের জন্য বন্দি করে ফেলে। বিশেষ করে আমি উসমান রা. থেকে আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা.-এর যুগ পর্যন্ত পুরােপুরি পাঠ করি। আমি অত্যন্ত আনন্দিত হই যে, আল্লাহ তাআলার বিশেষ অনুগ্রহে মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসের এই নাজুক যুগের ব্যাপারে তিনি যেভাবে বর্ণনাসমূহ যাচাই-বাছাই করে বাস্তবতা অনুসন্ধান করে বের করেছেন, তা আল্লাহর পক্ষ থেকে তার প্রতি বিশেষ রহমত।... অন্যান্য ইতিহাসের মতাে লেখক এই গ্রন্থ আরম্ভ করেছেন আদম আ. ও পূর্ববর্তী নবীগণের আলােচনার মাধ্যমে। এরপর নবীজির সীরাত, খুলাফায়ে রাশেদিন, খেলাফতে বনু উমাইয়া, 'খেলাফতে বনু আব্বাসের বিবরণ তিন খণ্ডে সংকলন করেছেন। ইতিহাসের বিবরণ ছাড়াও প্রতি যুগের বিশিষ্ট ইলমি ও ধর্মীয় ব্যক্তিদের পরিচয় এনেছেন। এতে পাঠক তথ্যের বিশাল ভান্ডার অর্জন করতে পারবেন। সাধারণত বাজারে বিদ্যমান ইতিহাসগ্রন্থগুলােতে বাদশাহদের বিবরণ ও যুদ্ধের ঘটনার প্রতি বেশি জোর দেওয়া হয়, কিন্তু সে যুগের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও উন্নয়নের অবস্থা এবং সংস্কৃতির বিবরণ গুরুত্বের সাথে বর্ণনা করা হয় না। লেখকের কাছে অনুরােধ থাকবে, তিনি যেন এই ইতিহাসগ্রন্থে এদিকেও বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেন। মুহাম্মাদ তাকি উসমানি
নাম মুহাম্মদ ইসমাইল। ‘ইসমাইল রেহান’ তার কলমি নাম। হাফেজ, মাওলানা। জন্মেছেন করাচীতে। পহেলা ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১। বাবা আব্দুল আজিজ। তার পূর্বপুরুষরা দেশভাগের সময় ইসলামি দেশে বসবাসের জন্য পশ্চিমবঙ্গ থেকে পাকিস্তানে হিজরত করেন। করাচীর পুরনো গোলিমার এলাকায় বড় হয়েছেন। মায়ের কাছে দ্বীনিয়াত বিষয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি স্থানীয় স্কুলে ফরমাল এডুকেশন গ্রহন করেন। ১৯৮৬ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ভর্তি হন দারুল উলুম করাচীতে। বাহাদুরাবাদের জামেয়া মা’হাদুল খলীল আল ইসলামী থেকে ১৯৯৫ সালে তাকমীল সমাপন করেন। এর মাঝে আল্লামা আবদুর রশীদ নু’মানীর শিষ্যত্ব অর্জন করেন। তারপর ২০০৬ সালে করাচী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে বি.এ (সম্মান) এবং ২০১০ সালে করাচীর উর্দু বিশ্ববিদ্যালয় (FUUAST) থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি সমাপ্ত করেন। দীর্ঘ দুই দশক ধরে শিক্ষকতা করে আসছেন। ‘যরবে মুমিন’ ও ‘রোজনামা ইসলাম’ পত্রিকায় কলাম লিখে বিখ্যাত হয়েছেন। ২০০৬ সাল থেকে ২০০৯ পর্যন্ত মাসিক সুলূক ও ইহসান পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন। শিশুদের জন্য প্রকাশিত একটি পত্রিকা ‘বাচ্চোঁ কা ইসলাম’ ও নারীদের নিয়ে প্রকাশিত ‘খাওয়াতিন কা ইসলাম’ পত্রিকার সম্পাদনা র সঙ্গেও জড়িত ছিলেন।