mega fest banner
bornomala bike
রাশিয়ার চিঠি image

রাশিয়ার চিঠি (হার্ডকভার)

by রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

TK. 250 Total: TK. 180

(You Saved TK. 70)
রাশিয়ার চিঠি
Clearance Image

Ends in

00 : Day
00 : Hrs
00 : Min
00 Sec

রাশিয়ার চিঠি (হার্ডকভার)

রাশিয়ার চিঠি পুনর্পাঠ

TK. 250 TK. 180 You Save TK. 70 (28%)
কমিয়ে দেখুন
tag_icon

নিশ্চিত ২৫% ছাড়ে বই, অতিরিক্ত ৪% ছাড় অ্যাপ অর্ডারে 'APPUSER' ব্যবহারে

আরো দেখুন
book-icon

বই হাতে পেয়ে মূল্য পরিশোধের সুযোগ

mponey-icon

৭ দিনের মধ্যে পরিবর্তনের সুযোগ

Frequently Bought Together

plus icon plus icon equal icon
Total Amount: TK. 425

Save TK. 160

Customers Also Bought

Product Specification & Summary

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাশিয়ার চিঠি পুনর্পাঠ আমি প্রতিদিনই ভারতবর্ষের সঙ্গে এখানকার তুলনা করে দেখি আর ভাবি, কী হয়েছে আর কী হতে পারত।― রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রাশিয়ার চিঠি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৩০ সালে ১১ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হ্যারি টিম্বার্স, কুমারী মার্গারেট রোটেনস্টাইন, সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর, আরিয়াম উইলিয়ামস ও অমিয় চক্রবর্তী সহযোগে রাশিয়া ভ্রমণ করেন। সে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে রাশিয়ার চিঠি প্রণীত হয়েছিল। তাঁর কবুলতি অনুযায়ী, রাশিয়া ভ্রমণের আগে বলশেভিকদের সম্বন্ধে তাঁর ‘মনে কোন স্পষ্ট ধারণা ছিল না্’। ধারণা ছিল, রুশরা হয়তো ‘জবরদস্তির সাধনা করছে। কিন্তু বিস্ময়ের সাথে তিনি বলেছেন, ‘রাশিয়ায়...না এলে এ জন্মের তীর্থদর্শন অত্যন্ত অসমাপ্ত থাকত। কী কঠিন কথা! সত্যিই তো, তিনি যদি রাশিয়া ভ্রমণ করে রাশিয়ার চিঠি না লিখতেন তবে আমরা তাঁর এমন সমাজতন্ত্র-প্রিয় চিন্তার হদিস পেতাম না। রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র কায়েম হয়েছিল, তা যে মহান এবং কাক্সিক্ষত, এই প্রামাণ্য দলিলটিও পেতাম না। এর আগে কয়েকবার রাশিয়া ভ্রমণের আমন্ত্রণ পেলেও ইংরেজ বন্ধুদের নিষেধের কারণে আসা হয়নি। তারা জানতেন, এখানে এলে তিনি সমাজতন্ত্রের অনেককিছুর পক্ষে এবং সা¤্রাজ্যবাদী ইংরেজের অনেককিছুর বিপক্ষে লিখবেন। ঠিকই তিনি লিখেছেন, দয়া এবং দায়িত্ব কোনোটাই পালন করেননি ইংরেজরা। তারা নিরন্ন ভারতের অন্নে পরিপুষ্ট হয়েছেন, ‘এক-শো বছর হয়ে গেল; না পেলুম শিক্ষা, না পেলুম স্বাস্থ্য, না পেলুম সম্পদ।’ অন্যদিকে রাশিয়াতে এসে যা দেখেছেন তার সাথে অন্যান্য দেশের ‘একেবারে মূলে প্রভেদ।’ সমাজের নিচতলার মানুষেরা ‘সবচেয়ে কম খেয়ে, কম পরে, কম শিখে, বাকি সকলের পরিচর্যা করে’, তারা ‘সভ্যতার পিলসুজ’ অথচ তাদের অসম্মান বেশি। একসময় তাঁর মনে হতো, এ চিরকালের বিধান। কাজেই যারা নিচে থাকবে ‘যথাসম্ভব তাদের শিক্ষা স্বাস্থ্য সুখ সুবিধার জন্য চেষ্টা করা উচিত।’ কিন্তু রাশিয়া ভ্রমণ করে তাঁর চিন্তা বদলে গেছে। ১৯১৭ সালে জার শাসনামলে রাশিয়া ছিল দরিদ্র একটি দেশ, অনেক পাশ্চাত্য দেশের তুলনায় পিছিয়ে পড়া। এশিয়া-ইউরোপ জুড়ে বিশাল রুশ ভূখÐ Ñ যেমন মানুষের তেমন প্রকৃতির বৈচিত্রপূর্ণ অবস্থা সমস্যার গভীরতাকে বৃদ্ধি করেছে। ভারতের আর রাশিয়ার সমাজ ও শিক্ষা ব্যবস্থা কিছুদিন আগেও একরকম ছিল। অথচ এখন এরা অনেক উন্নতি করেছে। তিনি আফসোস করেছেন, ভারতেও যদি এমন করা যেতো! কী করে এ পরিবর্তন সম্ভব হলো? এখানে একেবারে গোড়া থেকে সমস্যার সমাধান করবার চেষ্টা চলছে। শিক্ষা, কৃষি এবং যন্ত্র দিয়ে পরিবর্তন করছে। তাদের অর্থসম্বল ও জাঁকজমক নেই কিন্তু আছে পরিকল্পনা আর পণ। প্রতিটা মানুষ মন খুলে যার যা করার তা করছে, ‘অসম্মানের বোঝা ঝেড়ে ফেলেছে, ‘ধনগরিমার ইতরতা’ ত্যাগ করেছে। রবীন্দ্রনাথ রাশিয়ার আয়নায় ভারতবর্ষ দেখেছেন। একে রাশিয়ার চিঠি না বলে ভারতের নিশ্চিঠি বললেও ক্ষতি হতো না। তিনি শিক্ষা ব্যবস্থা দেখতে গিয়ে অন্যান্য ব্যবস্থাও দেখেছেন এবং প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারতের পশ্চাদপদতা তাকে পীড়িত করেছে। এরা শিক্ষার জোরে প্রভূত এগিয়েছে, ভারত পিছিয়ে আছে। ভারতের আছে অশিক্ষা যাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এক দুঃখ-চতুষ্টয় −‘জাতিভেদ, ধর্মভেদ, কর্মজড়তা ও আর্থিক জড়তা।’ শিক্ষা থাকলে এগুলো থাকতো না, কাজেই বিপ্লব সাধিত না হবার মূল কারণ অশিক্ষা। এরা প্রায় সবরকম সমস্যার সমাধান করছে শিক্ষার মাধ্যমে। এদের শিক্ষার লক্ষ্য পÐিত বানানো নয়; শুধু সংখ্যা, পরিমানের বা মাথাগুনতির মাপে নয়; শুধু নাম স্বাক্ষরের নয়, নোট মুখস্থ করে এমএ পাস করবার মতো নয়। বরং ‘বেশ পাকা রকমের শিক্ষা, মানুষ করে তুলবার উপযুক্ত’, লক্ষ্য মানুষ বানানো, মনুষত্বে সম্মানিত করা, সজীব তার প্রণালী, পরিপূর্ণতার মাপে তা উত্তীর্ণ। শুধু তাই নয়, তারা এই শিক্ষাকে নিয়ে গেছে প্রাণ পর্যন্ত Ñ তাদের দিয়েছে ‘চিত্তের জাগরণ এবং আত্মমর্যাদার আনন্দ’। মানবতা ও সাম্যচিত্তের এই প্রণোদনা কবিকে দিয়েছে যেমন আনন্দ, তেমন বেদনা। আনন্দ এই, রুশরা জেগে উঠছেÑ আর বেদনা এই, ভারতবর্ষ জেগে উঠতে পারেনি। ভারতবর্ষ এই শিক্ষা লাভ থেকে ‘প্রায় সম্পূর্ণই বঞ্চিত।’ শিশু ও নারীদের কথা। শিশুরা যত্নে আছে। শিশুরা ১৮ বছর পর্যন্ত পরিবারের দায়িত্বে। ১৬ থেকে ১৮ পর্যন্ত ৬ ঘণ্টা কাজ করবে। এর নিচের বয়সের কোনো শিশু কাজ করবে না। এটা অভিভাবক বিভাগের দায়িত্বে, শিশুর পরিবারে অযতœ হলে তাকে নিয়ে যায় তারা। শিশুরা বিদ্যালয়ে যায় এবং তাদের সেখানেই দেখাশুনার ব্যবস্থা আছে। ফলে নারীদের জীবনে এসেছে বিরাট সুযোগ। তারা নতুন নতুন কাজের অবকাশ পায় এবং সংসারের অশান্তি কমে যায়। কর্মস্থলে শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র, বিশ্রামালয়, রান্নার সাজসরঞ্জাম ইত্যাদি শুধু নয় নিশ্চিন্ত নিরাপত্তায় নির্বিঘেœ তারা কাজ করতে পারেন। শিক্ষা এবং বিদ্যালয়ের ধারণাকে অনেকদূর পর্যন্ত বাড়িয়ে নেয়া হয়েছে, যা নারীকে দিয়েছে নতুন মাত্রা। দুর্বলের শক্তিকে বাড়ানোর জন্য এখানে সর্বাত্মক চেষ্টা চলেছে, এখানকার চাষীরা হলো ‘বলরামের দল’ Ñ ভারতের দেশজোড়া চাষীর দুঃখ, ৩৩ কোটি অশিক্ষিত মানুষ, চাষীরা দুর্বলরাম, নিরন্ন, নিঃসহায়, নির্বাক, ভারতে দুর্বল হচ্ছে দুর্বলতর। রুশরা চাষী মজুরদের আরব্য উপন্যাসের যাদুকরের কীর্তি দিয়ে বদলে দিয়েছে। কৃষকদের শিক্ষা ও বিনোদনে তাদের কার্যক্রম ছিল সর্বশেষ বিজ্ঞান থেকে সেরা থিয়েটার দেখা পর্যন্ত, যা আদৌ লঘুচিত্তের ব্যাপার ছিল না। বড় বড় নাট্যমঞ্চে উচ্চ-অঙ্গের নাটক ও অপেরার অভিনয়ে বিলম্বে টিকিট পাওয়া কঠিন। ময়লা ছেঁড়া কাপড় পরা, আধপেটা, জুতোহীনদের ভিড়ে থিয়েটারে জায়গা পাওয়া যায় না। ‘সাধারণের কাজ, সাধারণের চিত্ত, সাধারণের স্বত্ব বলে একটা অসাধারণ সত্তা এরা সৃষ্টি করতে লেগে গেছে।’ আর ‘এদের খেতের কৃষি মনের কৃষির সঙ্গে সঙ্গে এগোচ্ছে’। কৃষকের জন্য রয়েছে কৃষিভবন, সেখানে দূরদূরান্ত থেকে এসে তারা স্বল্প খরচে থাকতে পারে এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির চাষবিদ্যা শিখতে পারে। ছোট ক্ষেতে চাষ করলে কল ব্যবহার করা যায় না, একা একা কল কেনাও যায় না। কলের লাঙ্গল ব্যবহার করে তারা চাষ করে একীভূত জমিতে, যেমন, এক লক্ষ হেক্টরের একটি যৌথ খামার। তাতে ফসল বেশি হয়। খাটুনি রোজ ৮ ঘন্টা, প্রতি ৫ম দিনে ছুটি। গর সিজনে তারা বাড়ি তৈরি, রাস্তা মেরামত এমন সব কাজ করে। অনুপস্থিতির সময়ও তারা বেতনের ১/৩ অংশ পায়।কাজেই, নিরক্ষর চাষীর জন্য তারা শিক্ষার আলোকে ‘নবজীবন প্রতিষ্ঠার প্রশস্ততম ভিত্তি স্থাপন করেছে। কবি বীরভূমের সাথে বাস্কিরদের অবস্থার তুলনা করে দেখেছেন, বীরভূম উন্নত হলেও সেখানে শিক্ষা এবং আরামের ব্যবস্থা নি¤œমানের। এখানে যুবকরা শেখার জন্য দূর দূরান্তরে যেতে পারে কিন্তু ভারতের জন্য বিদেশি-চালিত কারখানায় শিক্ষার সুযোগলাভ দুঃসাধ্য। ভারতে ছেলেদের মধ্যে কৌতূহল নেই, এখানে কৌতূহল ভরপুর। কবি বলছেন, বিশে^র সব দেশে যেমন ভারতেও তেমন, লেখাপড়া করে যেই ‘দুধুভাতু খায় সেই’। ‘রোগতপ্ত অভুক্ত হতভাগ্য নিরুপায় ভারতবর্ষ’―কিন্তু রবীন্দ্রনাথের ভ্রমণসঙ্গী ডাক্তার হ্যারি টিম্বার্স রুশদের স্বাস্থ্য বিষয়ক রিপোর্ট দেন অনেক ভালো। এখানে সমবায় সমিতি শ্রমিকদের জন্য বাসা নির্মাণ করে, ৫টি শ্রান্তি বিনোদন কেন্দ্রও করেছে। এক একটি কেন্দ্রে ৩০ হাজার শ্রমিক একসাথে ১৫ দিনের জন্য শ্রান্তি বিনোদন করতে পারে। থাকা-খাওয়া-আরাম-চিকিৎসা-থিয়েটার-সিনেমা ইত্যাদির ব্যবস্থা আছে। যা ভারতের অবস্থাপন্ন লোকের পক্ষেও দুর্লভ। কবির ভাষায় ‘এখনো অব্দি শ্রমিকদের জন্য এ ধরনের ব্যবস্থা বিরল Ñ স্বপ্নের মতো।’ সে সময় সারা বিশে^ আর কোথাও ছিল না। ‘ভারত জড়তার পাঁকে আকণ্ঠ নিমজ্জিত।’Ñএখানে জড়তা নেই, স্বাভাবিক ও সহজ হয়ে গেছে। জড়তা দূর হলো কীভাবে? রাশিয়া পুরাতন ধর্মতন্ত্র এবং রাষ্ট্রতন্ত্রকে বর্জন করেছে, তাদের মন মুক্ত হয়েছে। ভারতে সব সনাতনে ভরা―এরা সনাতনকে বর্জন করেছে। তিনি রুশ-নিন্দুকদের লক্ষ করে বলেছেন, এদের তারা নাস্তিক বলে। কিন্তু ‘ধর্মমোহের চেয়ে নাস্তিকতা অনেক ভালো।’ ধর্ম কি শুধু মন্দিরের সোপানে সীমাবদ্ধ, প্রশ্ন করেছেন তিনি? তিনি নাস্তিক নন, ছিলেন যুক্তিবাদী, বেদ উপনিষদ ছিল তাঁর মনের নিত্যসহচর। বুকের উপর অত্যাচারী রাজার পাথর চাপা থেকেও রাশিয়া নিষ্কৃতি পেয়েছে। ভারতে জাঁকজমক ও ধনবৈষম্য রয়েছে―রাশিয়ায় তা একেবারেই নেই। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছেন, প্রশ্ন করেছেন, জেনেছেন গভীরভাবেই। রুশদের জন্য অনুৎপাদক সৈনিক বিভাগের প্রয়োজন কেন? ‘আধুনিক মহাজনী যুগের সমস্ত রাষ্ট্রশক্তি এদের শত্রুপক্ষ’− এই ‘অত্যন্ত প্রতিকুল’ অবস্থায় টিকে থাকতে হবে। রাশিয়া ভ্রমণ করে স্বীকৃতি এসেছে বৃটিশ শাসন ও শোষণ বিষয়ে। ভারতের এ অবস্থার জন্য অনেকটাই দায়ী করেছেন তাদের। সা¤্রাজ্যবাদী শাসনের শোষণের নলগুলো স্পষ্টভাবে বিবরণ দিয়েছেন। ‘বিদেশি বণিক’ ভারত থেকে ধন সংগ্রহ করে আর ভারতের ভাগে পড়ে উচ্ছিষ্ট। এটা তিনি পাট, শিক্ষা, বিদেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দেশভ্রমণ, চিত্তবিনোদন ইত্যাদি অনেক খাত আলোচনা করে দেখিয়েছেন। সা¤্রাজ্যবাদের চরিত্র পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। প্রশ্ন করেছেন, ইংরেজ সবচেয়ে কম অত্যাচারী ও হিং¯্র হয়েই যদি এই অবস্থা হয় তাহলে বেশি অত্যাচারী কে? তারা দরিদ্রের প্রতি অবজ্ঞা করে। কিন্তু এরা দরিদ্র কেন, এদের অন্নের অভাব কেন? কারণ তারা সব চেটেপুটে নিয়ে গেছে। ভারতের দারিদ্র্যের বিনিময়ে ঐশ^র্য অর্জন করে ইংরেজ। রাশিয়া দেখার পর নিজের দেশের দুরাবস্থা বুঝে কবি ধৈর্য্যচ্যুত হন, ‘প্রায় সত্তর বছর আমার বয়স হলো; এতকাল আমার ধৈর্যচ্যুতি হয়নি।’ এখন বাধ ভেঙে গেছে। তাই অকুণ্ঠ ভাষায় নিজেদের দুর্বলতা প্রকাশ করেছেন। সমাজব্যবস্থার ব্যবচ্ছেদ করেছেন। কবির মনে হয়েছে, জমিদারী আয় ভাল নয়, জমিদাররা অমিতব্যয়ী। নিজেদের ভরণপোষণের দায়িত্ব গরিব চাষীর উপরে চাপায়। কাজেই তাঁর চিন্তা, ‘জমিদারির উপরে কোনোদিন আর ভরসা রাখা চলবে না’। কবি নিজেকে দোষ দিয়েছেন জন্মের, ‘দুঃখ এই যে, ছেলেবেলা থেকে পরজীবী হয়ে মানুষ হয়েছি’। জমিদারি-ব্যবসায়ে তাঁর ‘লজ্জা বোধ হয়’। জমিদারি হতে হবে ‘প্রজাদেরই জমিদারি’, আমরা থাকব ‘ট্রাস্টির মতো’। গান্ধীর সর্বোদয়ে এমন ট্রাষ্টির কথা আছে। এমনটা কবির বহুদিনের ইচ্ছা। এটা করতে না পারা হবে লজ্জার বিষয়, তাই তিনি এই কবুলতি দিচ্ছেন, ‘এখন থেকে শেষ পর্যন্ত নিজের জীবিকা নিজের চেষ্টায় উপার্জন করতে পারব।’ এটা জমিদারী প্রথা থেকে উত্তরণের কথা। রাশিয়া দেখে তিনি এতোটাই উদ্দীপিত হন যে, তা বাস্তবায়ন করবেন নিজ দেশে এমনও চিন্তা করেন। তার জন্য কিছু মালমশলা যোগাড় করে নিয়েছেন। তিনি বুঝেছেনÑ বুদ্ধি, উদ্যম আর ভরসা প্রয়োজন, টাকা কম হলেও চলে। কবির রুশ দর্শনে প্রাপ্তির মূল্য অনেক। কারণ তিনি রাশিয়া দেখে সমাজতন্ত্রের কিছু কিছু ব্যবস্থার জয়ধ্বনি করেছেন। সেগুলো ভারতে কেন বাস্তবায়িত হয় না তার কারণ খুঁজেছেন এবং মর্মাহত হয়েছেন। সমাজতন্ত্রকে সমালোচনাও করেছেন, একে জবরদস্তি অভিহিত করেছেন। বলেছেন, শিক্ষা ব্যবস্থার ছাঁচে ঢালা মনুষ্যত্ব টিকবে টিকবে নাÑ ফেটে যাবে। মনে করেন এই গলদ ‘গুরুতর’। কিন্তু এটা ছিল চাঁদের কলংকের দিক। আলোর দিকটাই প্রধান। জালিয়ানওয়ালাবাগে কুখ্যাত রাওলাট আইনের প্রতিবাদ সমাবেশে হত্যাকাÐ ঘটলে গান্ধী নিরব ছিলেন! কিন্তু কবি এর প্রতিবাদে নাইট উপাধি ত্যাগ করেন। এই প্রতিবাদী কবির উজ্জ্বলতা আরও বেড়েছে তাঁর রাশিয়ার চিঠিতে। তিনি নিজেকে জাত বুর্জোয়া আখ্যায়িত করলেও রাশিয়ার চিঠিতে অনেক শোষণবিরোধী চিন্তা প্রকাশ করেছেন। কবির এই দিকটি কম আলোচিত। কবি ‘জবরদস্তি’ বা বিপ্লবের অনুমোদক ছিলেন না, বঙ্কিমও বিপ্লবের অনুমোদক ছিলেন না। কিন্তু কবির চিন্তার পট পরিবর্তন হয়েছিল। একসময় তিনি জমিদারী প্রথাকে লজ্জার বিষয় মনে করেছিলেন। যদিও যোগাযোগ উপন্যাসে জমিদার বিপ্রদাস স্থান পেয়েছে তাঁর হৃদয়ে কিন্তু বুর্জোয়া মধুসূদন স্থান পেয়েছে ইতিহাসে। তিনি টলস্টয়ের মতো নিজের জমিদারী দান করেননি, তবে লেখার স্বত্ব ও নোবেল পুরস্কারের অর্থ বিশ^ভারতীকে দান করেছিলেন। বিপ্লবের মাত্র ১৩ বছর পরে ১৯৩০ সালে রাশিয়ায় গিয়ে তাঁর জনদরদী মন আরও শক্তিশালী হয়। রাশিয়া দেখে তিনি ভারত সম্পর্কে কতটা মর্মবেদনায় পড়েছিলেন তা অনুধাবন করা যায় যখন তিনি লেখেন, ‘ঘন বর্ষার চিঠি, শান্তি নিকেতনের আকাশে শালবনের ওপরে মেঘের ছায়া এবং জলের ধারায় শ্রাবণ ঘনিয়ে উঠেছে, সেই ছবি মনে জাগলে আমার চিত্ত কি রকম উৎসুক হয়ে ওঠে, সে তোমাকে বলা বাহুল্য। কিন্তু এবারে রাশিয়া ঘুরে এসে সেই সৌন্দর্যের ছবি আমার মন থেকে মুছে গেছে। কেবলই ভাবছি, আমাদের দেশজোড়া চাষীদের দুঃখের কথা।’ তাঁর এই মনটি কৃষকদরদী। জমিদারী ব্যাখ্যার পর কবি শহর ব্যাখ্যা করেছেন। শহর আর গ্রামের সম্পর্ক কী? রাশিয়াতে গ্রাম এবং শহর একাকার হয়ে যাচ্ছে, চেহারা চকচকে না হলেও। অন্যদিকে, সা¤্রাজ্যবাদের এক একটি শহর বহু গ্রাম-উপগ্রামের প্রাণশক্তি হরণ করে দানবীয় চেহারা ধারণ করেছে। যেমন নিউইয়র্ক, লন্ডন, কলকাতাÑ তিনি দৃষ্টান্ত দিয়েছেন। এসব শহরে মানুষের মধ্যে ‘সমাজধর্ম’ নেই। কবির প্রশ্ন, সুখের আধার কোথায়? উত্তর, সকলের সাথে আপত্যে, ব্যবসায়ে নয়। বুর্জোয়ারা ব্যবসায় দেখে, দেখে মানুষরে ভেতরে কলকে। পশ্চিমা দেশগুলোর সবই ব্যক্তিপূজায় উৎসর্গীকৃত। ভারতে এরূপ নয়। তিনি পশ্চিমা মডেলের বিকল্প হিসেবে গান্ধীকে উপস্থাপন করেছেন: গান্ধীর শক্তি ও জৌলুস নেই, আছে হৃদয় আর আধ্যাত্মিক শক্তি। অন্যদিকে সমালোচকের ভাষায়, গান্ধী ভারতের কর্পোরেট পুঁজির প্রতিভূ, রামরাজত্বের স্বপ্নদ্রষ্টা। গান্ধীনীতির অন্যতম হলো অসহযোগ, সত্যাগ্রহ, অহিংসা এবং সর্বোদয়। রবীন্দ্রনাথ এই আদর্শের আলোকেই গ্রামবাসীকে শ্রীনিকেতনের সহযোগী হিসেবে আবির্ভূত হবার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। এটা কী? এটা হলো ‘জনসাধারণের সেই শক্তি Ñ সমবায়ের সাধনা।’ আর সমবায় হলো সমাজতন্ত্রের সাধনা। এখানে একটি সমন্বয়বাদ চলে এসেছে, মার্কসবাদ আর গান্ধীবাদের। রবীন্দ্রনাথ রাশিয়াকে দেখার পর ইংরেজ, শহর, জমিদারী, বুর্জোয়াজি Ñ অনেককিছুরই সমালোচনা করেছেন। রুশ ব্যবস্থার ভেতরে অনেক ভাল দিক দেখেছেন, নিজের দেশে বাস্তবায়িত করতে চেয়েছেন। এখানে আমরা পাই তাঁর উদারনীতিকে। কিন্তু রাশিয়া ত্যাগের পর যত দূরে আসছেন তত নিজের অবস্থান পরিবর্তন করছেন। একে কী হাওয়া মোরগের সাথে তুলনা করা চলে? কিন্তু এমন অসম্ভব না যে, তিনি আবহাওয়াপন্থী। তাঁর কবুলতি অনুযায়ী, গ্রামে থাকলে তিনি পশু-পাখীর সাথে একাত্মতা বোধ করেন, নিরামিষাশী হয়ে যান। কিন্তু শহরে এলে পুনরায় পরিণত হন মাংসাশীতে। তিনি ফিরেন এসেছেন নিজের দেশে, ফিরে এসেছেন নিজের কাছে, নিজের শ্রেণীচরিত্রের কাছে। তাই তাঁর নিকট মনে হয়েছে, সমত্ব মানে পঞ্চত্ব, চিরকাল উঁচু-নিচু থাকতে হবে, এদের মিলনের সাধনাই মনুষত্বের সাধনা। এর অর্থ কি এই যে, সমাজতন্ত্রের মূল বিষয়টাকে তিনি ধরতে পারেননি আর তা না হলে ধরেননি ইচ্ছা করেই? তিনি জানেন, স্বীকার করেন, আবার চলে আসেন দূরে। বিচার করেছেন সেখান থেকেই। তাঁর দৃষ্টিতে বাস্তবতা ধরা পড়েছে Ñ পূর্ণরূপে নয়, আংশিকরূপে। কারণ রাশিয়ায় ১৫ দিন থেকে তিনি বহুকিছু দেখেছেন Ñ অর্থনৈতিক মূল কাঠামোতে বিপ্লব, লেনিন, বুর্জোয়া শ্রেণীর উৎখাত, শ্রেণীসংগ্রাম দেখতে পাননি। রুশ ব্যবস্থাকে কিছু কিছু জায়গায় সমালোচনাও করেছেন, শেষ পর্যন্ত সাম্্রাজ্যবাদ, শহর, জমিদারতন্ত্র ইত্যাদি তিনি দেখেছেন নিজের শ্রেণী অবস্থান থেকে। রাশিয়ার সমাজ দেখে বৃটিশ শক্তির অনেক ত্রæটি দেখতে পেয়েছেন কিন্তু উপনিবেশিক শাসনের অবসানের কথা মনে আসেনি। যে পরিবর্তন চেয়েছিলেন তা সীমিত পর্যায়ে, সামগ্রিক সমাজব্যবস্থার নয়। তিনি জমিদার ও বুর্জোয়ার অবস্থান ও দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়তে পারেননি, তাঁর ছিল রক্ষণশীলতা। কিন্তু তিনি অনেক কথা বলতে পেরেছেন, যা অনেক জমিদার ও বুর্জোয়া বলতে পারে না। বাংলা সাহিত্যে সে সময়ের সমাজতান্ত্রিক রুশ সমাজের চিত্র দুর্লভ। তাই এই গ্রন্থটি হতে পারে সমাজতন্ত্র জানার একটি টিউটোরিয়াল। − আফজালুল বাসার
Title রাশিয়ার চিঠি
Author
Publisher
ISBN 9789849430599
Edition 1st Published, 2021
Number of Pages 108
Country বাংলাদেশ
Language বাংলা

Similar Category Best Selling Books

Related Products

Sponsored Products Related To This Item

Reviews and Ratings

sort icon

Product Q/A

Have a question regarding the product? Ask Us

Show more Question(s)
prize book-reading point

Recently Sold Products

Recently Viewed
cash

Cash on delivery

Pay cash at your doorstep

service

Delivery

All over Bangladesh

return

Happy return

7 days return facility

0 Item(s)

Subtotal:

Customers Also Bought

Are you sure to remove this from book shelf?

রাশিয়ার চিঠি