"পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন" বইটির 'ভূমিকা' থেকে নেয়াঃ গ্রন্থটিতে সন্নিবেশিত প্রবন্ধগুলো একটি বিস্তৃত সময়ে লেখা। প্রায় সব কটিই বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে। প্রেক্ষাপটও ভিন্নতর। কিছু নিবন্ধ বাংলাদেশের পটভূমিতে লেখা। এগুলোতে বাংলাদেশের পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সমস্যা যেমন সামাজিক বনায়ন, পরিবার ও কম্যুনিটিভিত্তিক বৃক্ষরোপণ বা সীমিত আকারের বনায়ন, সরকারি ও বেসরকারি প্রচেষ্টা, নার্সারি স্থাপনে উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ: বিশেষত পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, বগুড়ার অবদান, পমোরা-বেতাগী সামাজিক বনায়ন পাইলট প্রজেক্ট নিয়ে অভিজ্ঞতা এবং মডেলটির বিস্তৃতি ইত্যাদি বিধৃত হয়েছে। লেখক নিজে এর বেশ কয়েকটিতে সংযুক্ত ছিলেন। বেতাগী-পমোরা প্রায়োগিক গবেষণায় এককালে বন বিভাগের কিংবদন্তি পুরুষ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক প্রফেসর আব্দুল আলীমের সাথে লেখক ওতোপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। নোবেল পুরস্কারজয়ী প্রফেসর মুহম্মদ ইউনূসও প্রকল্পটির নকশা প্রণয়নের পর্যায়ে যুক্ত ছিলেন। নদীশাসন, উত্তরাঞ্চলে মরুকরণ প্রক্রিয়া, ভারতের সাথে নদীর পানির হিস্যা নিয়ে চলমান সমস্যা এবং ফলে ভাটির দেশ বাংলাদেশের ভূমিপ্রকৃতি, কৃষি, তথা জীবন-জীবিকার যে অভূতপূর্ব প্রভাব পড়েছে এবং পড়ছে অব্যাহত গতিতে এসব নিয়েও বেশ কটি প্রবন্ধ গ্রন্থটিতে স্থান পেয়েছে। ভারত কর্তৃক নদীতে বাঁধ, প্রতিপত্তিশালী ও একশ্রেণির দুষ্কৃতিকারীদের নদী দখল ইত্যাদির পাশাপাশি এসবের প্রতিবাদে সৃষ্ট সংগঠন বেন, বাপা এদের নিয়েও লেখা স্থান পেয়েছে। পল্লী উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে প্রায় চারবছর কাজ করার সুবাদে উত্তরাঞ্চলের পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়েছে, তা সরেজমিনে নিরীক্ষণ এবং পরবর্তী সময়ে অনুসরণ করার অভিজ্ঞতাপ্রসূত বেশ কটি লেখা এই পুস্তকে সন্নিবেশিত আছে। সিলেট, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ এবং বগুড়ার মহাস্থানগড় নিয়ে একটি লোকগাথাভিত্তিক লেখা ভিন্নস্বাদের জন্য পাঠকদের উপহার দেওয়া হলো।
ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ ইতালির স্বনামখ্যাত অ্যাডভান্সড সেন্টার ফর ট্রেনিং এন্ড রিসার্চ থেকে প্রশিক্ষণ পদ্ধতিবিষয়ক ডিপ্লোমা লাভ করেছেন। সাউথ কোরিয়াতে স্যামুয়েল উনডন বিষয়েও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। দেশে-বিদেশে পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সেমিনার, সিম্পোজিয়ামে তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার পরামর্শক হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ ড. আহমেদ পল্লী উন্নয়ন, সামাজিক বনায়ন, রাজনৈতিক ইত্যাদি বহুবিধ বিষয়ে প্রবন্ধ লিখেছেন এবং গবেষণা করেছেন। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথেও তিনি জড়িত। আমেরিকার ফেডারেল সরকারের অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ফর চিলড্রেন এন্ড ফ্যামিলির ইন্ডিপেন্ডেন্ট কনসালটেন্ট হিসেবে দীর্ঘদিন কাজের অভিজ্ঞতাও তাঁর আছে। নিউইয়র্কে শিশু শিক্ষায় কৃতি প্রতিষ্ঠান ‘হেডস্টার্ট’ এ দীর্ঘদিন কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করেছেন। সাথে সাথে দুটো পত্রিকায় সাপ্তাহিক এক্সিকিউটিভ এডিটর হিসেবেও কাজ করেছেন। লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত জীবনের পাশাপাশি পাঁচজন নাতি-নাতনি পরিবেষ্টিত সুখী জীবন ড. আহমেদের। স্ত্রী ডা. আসমা আহমেদ ও দুই পুত্র ও এক কন্যা সকলেই নিউইয়র্ক স্টেটে স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত। এই করোনাকালেও প্রথম কাতারের সৈনিক। পুত্রবধূ ড. জয়নব ও কন্যার জামাতা ড. এজার সালমানও একই কাতারভুক্ত। ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ ১৯৪৭ সালে বাংলাদেশের অপরূপ সৌন্দর্যমণ্ডিত হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার রতনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মোহাম্মদ মাহতাব উদ্দিনের অক্লান্ত প্রয়াসে প্রতিষ্ঠিত রতনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বড় বোন শামুসুন্নেছার (খেলাবু) হাত ধরে স্কুলে যাওয়ার বয়স হওয়ার পূর্বেই বিদ্যালয়ে শিক্ষা শুরু। বড় ভাই ডাক্তার আলাউদ্দিনের শাসন ও স্নেহে বেশ ক'টি হাই স্কুলে পড়তে হয়েছে। হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন ১৯৬২ সনে, ইন্টারমিডিয়েট অব সায়েন্স ১৯৬৪ সনে সিলেট মুরারীচাঁদ (এমসি কলেজ) সরকারি কলেজ থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে বিএ (অনার্স) এবং এম.এ পাশ করে ড. আহমেদ চাকরি জীবন শুরু করেন প্রথমে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান পরিবার পরিকল্পনা এসোসিয়েশনের প্রকল্প সুপারভাইজার হিসেবে। পরবর্তীতে সমন্বিত পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচিতে দীর্ঘদিন কাজ করেন। এ সময়ে ১৯৭৩ সনে ইউ. এস. এইড বৃত্তির জন্য মনোনীত হয়ে লেবাননের আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বৈরুত থেকে পলিটিক্যাল স্টাডিজ এন্ড পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিষয়ে এম. এ ডিগ্রি লাভ করেন। পি.এইচ. ডি করেছেন রাজস্থান বিশ্ববিদ্যালয় (ভারত) থেকে। সিলেটের খাদিমনগরস্থ পল্লী উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ পরিচালক, পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, বগুড়ার মহাপরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। পল্লী উন্নয়ন-এর সাথে জড়িত ছিলেন প্রায় তের বছর । চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজতত্ত্ব এবং লোকপ্রশাসন বিভাগ দু'টিতে শিক্ষকতা করেছেন বারো বছরেরও বেশি। লোকপ্রশাসন বিভাগে সভাপতি ছাড়াও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচিত সিনেটে সদস্য ও অর্থ কমিটির সদস্য ছিলেন।