ফ্ল্যাপে লিখা কথা ‘বৈশাখের হাহাকার এবং অন্যান্য’ মুহম্মদ জাফর ইকবালের সাম্প্রতিক সময়ে লেকা নিবন্ধের সংকলন। পত্রপত্রিকায় প্রকাশের সময় যার খণ্ডিত রূপের সঙ্গে হয়তো পাঠকের পরিচয় ঘটেছে। লেখকের ভঅষায়, ‘বই হিসেবে প্রকাশ করার সময় যা বলতে চেয়েছিলাম হুবহু সেটাই’ প্রকাশ করা হয়েছে। আমাদের দেশের একজন শীর্ষ জনপ্রিয় লেখক কিংবা শিশু-কিশোরদের প্রিয় বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর রচয়িতা- মুহম্মদ জাফর ইকবালের পরিচয় আজ আর কেবল এতেই সীমাবদ্ধ নয়।
সময়ের সাহসী উচ্চারণ তাঁকে ইতিমধ্যেই আমাদের কালের এক বিবেকী কণ্ঠস্বরে পরিণত করেছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত তাঁর কলামধর্মী রচনার সঙ্গে যাঁদের পরিচয় আছে তাঁরাই জানেন, সরল সত্যকে সরাসরি ও স্পষ্টভাবে বলার এক আশ্চর্য ক্ষমতা তাঁর করায়ত্ত। সমাজ ও সমকালের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে যে-কথাটি বলা উচিত, কাউকে না কাউকে বলতে হবে, কারো মুখ চেয়ে বা আগুপিছু ভেবে তিনি তা বলতে দ্বিধা করেন না। তা আলোচনার বিষয় তাঁর শিক্ষা বা শিক্ষাঙ্গনের বিষয় তাঁর শিক্ষা বা শিক্ষাঙ্গনের সমস্যা-সঙ্কট, মৌলবাদীদের দৌরাত্ম্য, মানবাধিকার লঙ্ঘন ইত্যাদি যাই হোক না কেন।
দলীয় বিবেচনার উর্ধ্বে থেকে মত প্রকাশের সততা ও সাহস এবং সেই সঙ্গে গভীর মানবিকতা, সংবেদনশীলতা ও দায়িত্ববোধ সমসাময়িক কলাম লেখকদের সারিতেও তাঁর রচনাগুলোকে আলাদা বৈশিষ্ট্য বা অনন্যতা দিয়েছে। এই বইটিতে পাঠক বিশেষভাবেই যার পরিচয় পাবেন।
ভূমিকা এই বছরে বিভিন্ন জায়গায় প্রকাশিত লেখাগুলো সংকলিত করে ‘বৈশাখের হাহাকার এবং অন্যান্য’ প্রকাশিত হল। এতোদিন পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করতে গিয়ে যে বিসয়টা আমি সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেছি সেটা হচ্ছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা- আমি যেটা বলতে চেয়েছি সব সময়েই সেটা বলে এসেছি। সে হিসেবে এই বছরটা খুব বড় ব্যতিক্রম, এই প্রথমবার আমি যেটা বলতে চেয়েছি সেটা সবসময় বলতে পারি না। পত্যিকায় প্রকাশ করার জন্যে আমার লেখার উপর কাঁচি চালাতে হয়েছে, কাট ছাট করতে হয়েছে, স্পর্শকাতর নাম উহ্য রাখতে হয়েছে, মন্তব্য সংবরণ করতে হয়েছে। বই হিসেবে প্রকাশ করার সময় যা বলতে চেয়েছিলাম হুবহু সেটাই প্রকাশ করা হলো- সংবাদপত্রের পাঠক না জানলেও বইয়ের পাঠকেরা অন্তত জানুক আমি আসলে কী বলতে চেয়েছিলাম।
ছাপার আগে লেখাগুলোর উপর চোখ বুলিয়ে আবিষ্কার করলাম বছরটি শুরু করেছিলাম অনেক আশা নিয়ে বছরটি শেষ করেছি আশাভঙ্গের বেদনা নিয়ে। শুধু তাই নয়, সারাটি বছর কেটে গেছে একধরনের অস্থিরতার ভেতর দিয়ে, একধরনের ক্ষোভের ভেতর দিয়ে। যা বলতে চাই সেটা বলতে পারব না বলে লেখালেখি হয়েছে অনেক কম! পাঠক নিশ্চয় সেজন্যে আমাকে ক্ষমা করে দেবেন।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৭.১১.২০০৭
সূচিপত্র * গোড়া থেকে শুরু * একটু লেখা পড়া নিয়ে কথা বলি? * তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং আমরা * উচ্চ শিক্ষায় বাংলা পাঠ্যবই * মার্চের ভালবাসা * সুস্থ পৃথিবী অসুস্থ মানুষ * বৈশাখের হাহাকার * স্বপ্ন কী বিক্রি করা যায়? * একটি লঙ্গরখানার কাহিনী * ভাই, দেশটা কোন দিকে যাচ্ছে? * প্রতিপক্ষ যখন ছাত্র শিক্ষক * ভাঙ্গা রেকর্ডটা আরেকবার বাজাই? * ঘৃণা থেকে মুক্তি চাই? * ছাত্র শিক্ষক : এখন দুঃসময় * ফিরে দেখা
বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরী পাঠকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি মূলত এ দেশের একজন বিখ্যাত লেখক, পদার্থবিদ এবং শিক্ষাবিদ। কিশোর সাহিত্য, শিশুতোষ গ্রন্থ, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, গণিত বিষয়ক বই এর জন্য খুব অল্প সময়েই জনপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি। মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৯৫২ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। মুক্তিযোদ্ধা বাবা ফয়জুর রহমানের চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন জেলাতেই তিনি পড়াশোনা করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে পিএইচডি ডিগ্রী অজর্নের উদ্দেশ্যে স্কলারশিপ নিয়ে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। পিএইচডি সম্পন্ন করে ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে বিখ্যাত বেল কমিউনিকেশনস রিসার্চ ল্যাবেও গবেষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৪ সালে দেশে ফিরে এসে তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগ দেন। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সবসময়ই এ দেশের কিশোর-কিশোরীদের কাছে বিশেষ আবেদন নিয়ে হাজির হয়েছে। কিশোর সাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ক অজস্র গ্রন্থ দিয়ে তিনি আলোকিত করে তুলেছেন এদেশের অগণিত কিশোর-কিশোরীর মনোজগত। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সমূহ, যেমন- দীপু নাম্বার টু, আমার বন্ধু রাশেদ, আমি তপু, শান্তা পরিবার, দস্যি ক’জন ইত্যাদি ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পায়। তার বেশ কিছু গল্প পরবর্তীতে নাটক ও চলচ্চিত্র হিসেবে টিভি পর্দায় স্থান করে নিয়েছে। তিনি একজন বিশিষ্ট কলামিস্টও। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডও তাঁর ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সমগ্র সকল বইপড়ুয়াকেই আকৃষ্ট করে। সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বহুবার পুরষ্কৃত হয়েছেন। বাংলা একাডেমি পুরষ্কার (২০০৪) এবং শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হিসেবে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার (২০০৫) সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও, কাজী মাহবুবুল্লা জেবুন্নেছা পদক (২০০২), শেলটেক সাহিত্য পদক (২০০৩), ইউরো শিশুসাহিত্য পদকসহ (২০০৪) অগণিত পুরষ্কার অর্জন করেছেন গুণী এই সাহিত্যিক।