প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
লেখকের দিনলিপি ১৬ অগাষ্ট ১৯৭৫ থেকে ১৭ এপ্রিল ১৯৮১ পর্যন্ত
ভূমিকা
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট প্রত্যুষে সে-ই নিদারুণ ঘটনাটি ঘটে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কিছু বিপদগামী সৈনিক কর্তৃক সপরিবারে নিহত হন।
ইতিহাসে এমন ঘটনার অভাব নেই। এই উপমহাদেশে মহাত্মা গান্ধী, লিয়াকত আলী খান, ইন্দিরা গান্ধী প্রমুখ নিহত হয়েছেন। সব শেষে বলী হলাে বেনজির ভুট্টো। শেখ সাহেবের নিহত হবার ঘটনা ঘটার পর পুত্র হিসেবে আমি বাবা শওকত ওসমানকে দেখেছি অসম্ভব মনাে পীড়ায় ভুগতে। একটু নিশ্চিন্তে বসতে পারতেন না। এমন কি তার খাওয়া-দাওয়াও অসাব কমে যায়।
আমরা তখন মােমেনবাগে আমাদের একতলা বাড়িতে থাকতাম। পাশাপাশি কামরা। প্রায় সময়ে অসময়ে এসে বলতেন, ‘মুজিব এক খাঁচায় বন্দি বাঘের মতাে নিশ্চয় ছটফট করেছে, যখন বুঝতে পেরেছে তাকে হত্যা করতে এসেছে ঘাতকরা। শেখ মুজিবকে তিনি অনুজবৎ স্নেহ করতেন। সেই অসহযােগ আন্দোলনের সময় প্রায়ই বলতেন, ‘মুজিব এমন এক প্যাচ কষেছে যে বাংলাদেশ না হয়ে উপায়
নেই।
শেখ মুজিবের প্রতি ছিল তার অগাধ স্নেহ-ভালােবাসা। শেখ সাহেবের সহজিয়া বােধকে তিনি ভীষণ দাম দিতেন। বলতেন, বড় বড় পণ্ডিতরা যা ধরতে পারেনি, মুজিব তা ধরে ফেলেছে।
| বাবার মানসিক অস্থিরতা কাটাবার জন্যেই আমরা পুরাে পরিবার তাকে বলি কলকাতা থেকে ঘুরে আসতে। তাহলে মনটা কিছুটা শান্ত হবে। তিনি আমাদের কথা রাখলেন এবং কলকাতা গেলেন। কিন্তু তারপর দেশে এমন সব ঘটনা ঘটতে নাগল যে তার পক্ষে আর সহজে দেশে ফেরা হয়নি। প্রায় ছ' বছর পর দেশে ফেরেন। নির্বাসনে রচিত তার দিনলিপি দীর্ঘদিন পড়েছিল। ১৯৯৩ সালে তা প্রথম প্রকাশিত হয়। প্রকাশ করে সখিনা প্রকাশনী- প্রকাশক খন্দকার ওবায়দুল হক সেলিম।
এই দিনলিপি শুরু হচ্ছে ১৬ই আগস্ট ১৯৭৫- শেষ হয় ১৭ এপ্রিল ১৯৮১। পুস্তকের প্রথমেই অতীতের ধারাপাত শিরােনামে তিনটি পৃষ্ঠা আছে যা এই দিনলিপির মর্মকথা বিধৃত করে দিয়েছে। আর এই মর্মকথা এত যথার্থভাবে সমাজতাত্ত্বিক যে শওকত ওসমানকে একজন বড় মাপের সমাজতাত্ত্বিক মানতে কারাে বাধবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বি.এ. অনার্সে ভর্তির সময় আমার ইচ্ছা ছিল দর্শন পড়ব । বাবা সাজেস্ট করলেন সােসিওলজি পড়ার। আমার তাই সমাজতত্ত্বে পড়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজতত্ত্ব বিভাগ খােলার কারিগর বিভাগীয় প্রধান শ্রদ্ধেয় শিক্ষক অধ্যাপক নাজমুল করিম ছিলেন বাবার বন্ধু। আমাকে খুব স্নেহ করতেন এবং অনেক সময় বলতেন, ‘সােসিওলজি বুঝতে চাও, বাবার লেখা পড়।' কথাটি যথার্থ। বাবার পুরাে সাহিত্য সমাজতত্ত্বনির্ভর। তাই তিনি দিনলিপির শুরুতে, অতীতের ধারাপাত' শিরােনামে লিখছেন : ইতিহাসে সতর্কবাণী সকলের কাছে পৌছায় এমন আশা করা যায় না . . . অনেকে জানে না, সাম্রাজ্যবাদের কাহিনী । যন্ত্রশিল্পে উন্নত সভ্য মানুষের আচরণ জীবজন্তুকেও হার মানিয়ে দেয়। তৃতীয় বিশ্বের শােষণ তাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার প্রধান শর্ত। এই শর্ত বজায় রাখতে তারা যেকোনাে পন্থা গ্রহণে এতটুকু পিছপা হবে না, তা যতই জানােনায়ারসুলভ হােক কেন?'
... আরাে বলেছেন, সাম্রাজ্যবাদীরা ঘাতক খুঁজে পায় তৃতীয় বিশ্বের সামাজিক নর্দমা থেকে। | বিশাল এই দিনলিপির বিশাল ভূমিকা লেখার কি দরকার আছে? দিনলিপি নিজেই তাে সব বলে। এর মধ্যে বিশেষভাবে যা বড় হয়ে উঠেছে তা হলাে ভারতবিভাগ ও তার পরবর্তী ট্র্যাজেডি। মানুষে মানুষে অবিশ্বাস, হানাহানি শেষ হলাে কোথায়? শওকত ওসমানের দিনলিপির মধ্যে এটির একটি বড় উপাত্ত পাওয়া যাবে। আর ব্যক্তি-শওকত ওসমানের মানস তাে পুরাে দিনলিপি জুড়েই। এর মধ্যে এত বিচিত্র সব বিষয় নিয়ে আলােচনা আছে যে এই পুস্তককে একটি খণ্ডিত বিশ্বকোষ বললে অত্যুক্তি হবে না। আর শওকত ওসমানের অন্তরে মানুষের প্রতি প্রীতির যে ফল্গুধারা ছিল তা এই দিনলিপির প্রতিটি পৃষ্ঠাজুড়ে অবস্থান করছে। আর . সবকিছু ছাপিয়ে উঠেছে তার মনের মধ্যে দেশ-বিভাগের কান্না। সে তাে কোটি কোটি ভুক্তভােগীর কান্নাই । এমন কি ছাত্র-অভিনেতা উত্তম কুমারের মৃত্যুর পর তিনি অন্তত পঞ্চাশবার উল্লেখ করেছেন কেন তার সঙ্গে গিয়ে দেখা করেননি।
সময় প্রকাশন এটি প্রকাশের দায়িত্ব নেয়ায় অনুজব ফরিদ আহমেদকে আন্তরিক শুভেচ্ছা।
- বুলবন ওসমান
Title | উত্তরপর্ব মুজিবনগর |
Author | শওকত ওসমান |
Publisher | সময় প্রকাশন |
ISBN | 9847011400490 |
Edition | 2nd Print, 2017 |
Number of Pages | 864 |
Country | বাংলাদেশ |
Language | বাংলা |
Have a question regarding the product? Ask Us
Please log in to write question Log in
Help: 16297 24 Hours a Day, 7 Days a Week
Pay cash on delivery Pay cash at your doorstep
Service All over Bangladesh
Happy Return All over Bangladesh