একটি দর্শন বা চিন্তা প্রকাশের সবচেয়ে বড় বাহন হলো একটি বিন্যস্ত প্রকাশনা। একটি ভালো মানের প্রকাশনা একটি দর্শনকে কেবল প্রতিষ্ঠিতই করেনা, ঐ দর্শনকে বাঁচিয়ে রাখে যুগের পর যুগ। নেলসন ম্যান্ডেলার উপর গ্রন্থ ‘লিভিং উইথ ম্যান্ডেলা’ যেমন নেলসন ম্যান্ডেলাকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। আবার পিকাসোর উপর লেখা ‘দ্যা আর্ট অব পেইন্টিং’ পিকাসোকে মহিমান্বিত করেছে অনন্তকালের জন্য, ঠিক তেমনি একটি গ্রন্থ স¤প্রতি প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশ থেকে। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার দর্শন, শিরোনামে গ্রন্থটির প্রকাশক, আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী। ২১৬ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থটি দুই ভাষায় মুদ্রিত। মুদ্রনে আধুনিকতা এবং চমৎকার ডিজাইন বইটিকে আকর্ষণীয় করেছে। গ্রন্থটিতে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দর্শন ‘জনগণের ক্ষমতায়ন’ মডেলটিকে যেমন রাখা হয়েছে, তেমনি বিভিন্ন সময়ে তার উক্তির মাধ্যমে এই দর্শনের বির্বতন ও বিকাশকে তুলে ধরা হয়েছে। এই দর্শনের সংগে আছে বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা, প্রবাসী কলামিষ্ট সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, সাংবাদিক বেবী মওদুদ এমপি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, কবি মহাদেব সাহা, অর্থনীতিবীদ কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ, ব্যাংকার খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ ও কবি ড. মুহম্মদ সামাদ এর লেখা। গ্রন্থটিতে রয়েছে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার দুর্লভ কিছু ছবি। দার্শনিক উক্তি, ‘জনগণের ক্ষমতায়ন’ মডেল, বিশিষ্ট জনের লেখার সংগে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার ছবি মিলিয়ে এই গ্রন্থটি হচ্ছে একটি অনন্য এবং পূর্নাঙ্গ দলিল।
প্রচ্ছদ ও বইয়ে ব্যবহৃত প্রধানমন্ত্রী শখে হাসনিার সকল ছবি তুলছেনে সাংবাদকি ইয়াসীন কবরি জয়।
গ্রন্থটির প্রকাশক এবং আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী বইটির শুরুতেই গ্রন্থটির পটভূমি বর্ননা করেছেন এভাবে- ‘বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই আমি সংগঠনটির আদর্শিক চেতনা এবং এর বিকাশের ব্যাপারে উদ্যোগী হই। সে লক্ষ্যেই প্রথমে আমাদের রাজনীতির শেকড় অনুসন্ধানের কাজ করি। আর সে কারণেই, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার চিন্তা তার রাজনৈতিক কর্ম, তার দর্শন বিশ্লেষনের চেষ্টা করি। আমি সব সময় পেশাদারিত্ব এবং উপযুক্ত ব্যক্তিদের দিয়ে কাজ করানোর পক্ষপাতী। এ লক্ষ্যেই শেখ হাসিনার রাজনীতি, তার চিন্তা ভাবনাগুলোকে ধারণের জন্য একটি পেশাদার গবেষক দল তৈরী করা হয়। আমার নেতৃত্বে এই গবেষক দলে ছিলেন যুবলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক জাতীয় সংসদের হুইপ, বর্তমান বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কার্যকরী কমিটির সদস্য মির্জা আজম এম.পি. যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী এবং আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এম.পি। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আবুল বারকাত, তথ্যকমিশনার ড. সাদেকা হালিম, বিশিষ্ট গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞ সৈয়দ বোরহান কবীর, তরুণ গবেষক ইশতিয়াক আহমেদ চৌধুরী অভি।
এই গবেষক দলটি দীর্ঘ প্রায় এক বছর ধরে শেখ হাসিনার রাজনীতির উপর গবেষণা করে। এই গবেষণার ফলাফল ছিলো ঐতিহাসিক, তাৎপর্যপূর্ন এবং অসাধারণ। এই গবেষনায় আমরা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার রাজনীতি বিশ্লেষন করে দেখি যে, জাতির পিতার রাজনৈতিক আদর্শে বড় হলেও শেখ হাসিনাকে কখনোই ইন্দিরা গান্ধী কিংবা বেনজীর ভূট্টোর মতো ভবিষ্যতের নেত্রী হিসেবে গড়ে তোলা হয়নি। শেখ হাসিনা বিকশিত হয়েছেন তার আপন মহিমায় চারপাশের পারিপাশ্বিক পরিস্থিতির মধ্যে। ১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্ট জাতির পিতার দূর্ভাগ্যজনক হত্যাকান্ডের পর শেখ হাসিনার মূল রাজনৈতিক জীবনের সূত্রপাত। মাত্র ৩২ বছর বয়সে তিনি দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব নেন। যেখানে সব কিছু তাকে দ্রুত আয়ত্ব করতে হয়েছে সম্পূর্ণ প্রতিকূল পরিস্থিতিতে। আমরা গবেষণায় তার জীবন ও রাজনীতি বিশ্লেষন করে পাই যে, তার রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় পাথেয় ও শক্তি হলো জনগণ। রাজনীতিতে শেখ হাসিনার এক অভুতপূর্ব দিক হলো তিনি জনগনের হৃদস্পন্দন শুনতে পান।
জনগণের চাওয়া-পাওয়া বিমূর্ত অনুভূতি গুলো তাকে সহজেই স্পর্শ করে। আর সে কারণেই যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণে তিনি ব্যক্তি, দল বা গোষ্ঠীর স্বার্থের চেয়ে জনগণের স্বার্থকে গুরুত্ব দেন। আমরা দেখেছি, তিনি সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ এবং জনগণের স্পষ্ট মতামতের এক দৃঢ় প্রবক্তা। ১৯৮১ সালে স্বৈরাচারী শাসনের কবলে নিস্পেষিত জাতিকে জাগাতে তাই তিনি অস্ত্র নয়, গণজাগরণের পথ বেছে নেন। তার রাজনীতির বিষয়টি হলো এরকম, জনগণকে সচেতন করো, তাদের জাগাও তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের মূল নিয়ামক করো-তাহলেই শান্তি আসবে, মানুষের উন্নতি হবে। তিনি হয়তো দর্শন আকারে কাজটি করেননি, কিন্তু তার প্রতিটি কাজের এবং চেতনায় মূল বিষয় হলো ‘জনগণ’। একারণেই আমরা শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দর্শনের নাম দিয়েছি ‘জনগণের ক্ষমতায়ন’।
গ্রন্থ প্রকাশের কারণে এই দর্শনটি এখন বিশ্ব দলিল। বিশ্ব মানবতার মুক্তির রূপ কৌশল। একই সাথে এই দর্শনটি এখন বাঙালীর নব জাগরণের পথ নির্দেশিকা। একারনেই এই দর্শনটি আমরা দেশের ভেতর ব্যাপক প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছি। সে উদ্যোগের অংশ হিসেবেই এই প্রকাশনা।
গ্রন্থটির মুখবন্ধে বলা হয়েছে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাঙালি জাতির এক চরম দুঃসময়ে তিনি কাণ্ডারি হিসেবে দায়িত্ব তুলে নেন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে থেকে টানা ৩২ বছর দেশের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে তিনি। তাঁর নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ভোটের অধিকার ফিরে পেয়েছে। স্বৈরশাসনের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পেয়েছে। আত্মনির্ভর ও স্বনির্ভর বাংলাদেশের রূপকার তিনি। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার রাজনীতির মূল দর্শন ‘জনগণের ক্ষমতায়ন’। সিদ্ধান্ত গ্রহণের কেন্দ্রে জনগণকে নিয়ে আসাই তাঁর রাজনীতির মুল কথা। আর এই ‘জনগণের ক্ষমতায়ন’ এখন বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার প্রধান মডেল। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এই মডেল ১৯৩টি দেশ কর্তৃক সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়েছে। দেশে দেশে শেখ হাসিনা এখন বিশ্বমানবতার কণ্ঠস্বর, আর্তমানবতার মুখচ্ছবি, নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর। ৩২ বছরের রাজনৈতিক জীবনে তিনি এই দর্শনকে লালন ও বিকশিত করেছেন। এই বছর রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৬৫ বছর পূর্ণ করে ৬৬তে পা দিয়েছেন। জীবনের অর্ধেকটা জুড়ে তিনি কেবল মানুষের মঙ্গলের জন্য কাজ করেছেন। বিশ্বে কম নেতাই আছেন, যাঁরা এই দীর্ঘসময় জনগণের কল্যাণে কাজ করেছেন। তাঁর জীবন ও কর্ম মানুষের জীবনকল্যাণে উৎসারিত। ৬৫তম জন্মদিনে এ কারণেই রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার জীবন ও দর্শনভিত্তিক এই গ্রন্থটি প্রকাশ করা হলো,যেন আজ ও আগামী প্রজন্ম তাঁর দর্শনকে উপলব্ধি ও আত্মস্থ করে এবং সেভাবেই রাজনৈতিক আদর্শভিত্তিক একটি সমাজ বিনির্মাণে উদ্যোগী হয়।’
বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুস্তক, পুস্তিকার প্রচলন থাকলেও তার সংখ্যা কমে আসছে। কালদর্শী প্রকাশনা ও সংকলন নেই বললেই চলে। রাজনৈতিক দলিল প্রকাশনার ক্ষেত্রেও দৃষ্টিভঙ্গী খুবই ক্ষুদ্র পরিসরের। দীর্ঘস্থায়ী দৃষ্টিভঙ্গী এবং চিন্তার আলোকে প্রকাশনার শূন্যতা আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে নেই বললেই চলে। এই অপূর্ণতার মধ্যে ‘রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার দর্শন’ এক অসাধারণ ব্যতিক্রম। এই বইটি একটি পূনাঙ্গ প্রামাণ্যচিত্র, অনবদ্য দলিল এবং কলোত্তীর্ণ একটি প্রকাশনা।