ফ্ল্যাপে লিখা কথা ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক স্মরণীয় দিন যা ওয়ান ইলেভেন বা এক এগারো নামে বহুল পরিচিত। জরুরী আইনের আওতায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে একটি গোষ্ঠী বাংলাদেশকে ‘লাইনচ্যুত ট্রেন’ আখ্যা দিয়ে তাকে লাইনে তোলার নামে দেশের দুই শীর্ষ নেত্রীসহ অসংখ্য রাজনীতিবিদ. ব্যবসায়ীসহ সসাজের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিবর্গকে গ্রেফতার করে জেলে প্রেরণ করে। বস্তুত এ ছিল সুশীল সমাজ নামধারী একটি পরজীবী শ্রেণীর বাংলাদেশ বিরোধী এক সুগভীর চক্রান্ত। এ প্রতিক্রিয়া অংশ হিসেবে ৭ মার্চ, ২০০৭ তারিখে যৌথবাহিণী বিএনপি স্থায়ী কটিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে নিজ বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর তাঁর বিরুদ্ধে এলাকায় রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে নিয়ে ৪ টি চাঁদাবাজী মামলা করানো হয়। যৌথবাহিনীর প্ররোচনায় দুর্ণীতি দমন কমিশন থেকে দুটি মামলা দায়ের করা হয় এবং পরিবারের উপর অমানবিক আচরণ থেকে শুরু করে দীর্ঘ ৬১৬ দিন কারাবরণের অভিজ্ঞতা এবং জরুরী সরকারের কর্মকাণ্ডকে কারাগার থেকে যেভাবে মূল্যায়ন করেছেন ড. মোশাররফ হোসেন।
তৃতীয় বিশ্বের রাজনীতিতে প্রতিহিংসার শিকার হয়ে কিভাবে রাজনীতিবিদরা লাঞ্ছিত হন, তাদের কিভাবে অনিশ্চয়তার মধ্যে রাজনীতি করতে হয় এবং সর্বোপরি রাজনৈকি নেতৃবৃন্দদের ব্যক্তিগতভাবে কি পরিমাণ নিরাপত্তাহীনতার মদ্যে জীবনযাপন করতে হয়, তা এই বইটি পাঠ করলে সামান্য হলেও উপলব্ধি করা যাবে। তৃতীয় বিশ্বে রাজনীতি যে একটা ধন্যবাদ বিবর্জিত কাজ, তা বইটির বিষয়বস্তু থেকে পরিস্ফুটিত হবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। রাজনৈতিক নেতারা কারাগারে যান। সেখানে কিছু অভিজ্ঞতা এবং চেনতার সৃষ্টি হয় । সাধারণতঃ জেল মুক্তির পর সব ভুলে গিয়ে আবার সনাতন রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। আমাদের রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির কারণে জরুরী সরকারের সময়ে রাজনীতিবিদদের কি অবস্থা ছিল এবং তাদের সেই সময়কার অনুভূমিকে মনে করিয়ে দেয়ার জন্য এ বই সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি থেকে রাজনীতিবিদদের মুক্তহতে অনুপ্রাণিত করতে পারে বলে আশা করা যায়। বিশেষ করে জরুরী আইনের ছত্রছায়ায় পরিচালিত তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়কালীন বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের একটি তথ্যকোষ হিসেবে গবেষক, রাজনীতি বিশ্লেষকদের এ বইটি কাজে লাগবে বলে আমার বিশ্বাস। মেহেদী হাসান পলাশ
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ১৯৪৬ সালে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দিতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূতত্ত্ব বিষয়ে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৯ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেমায় যোগদান করেন। একই বছর ‘কলম্বো প্লান স্কলারশীপ’ লাভ করে উচ্চ শিক্সার জন্য লন্ডন গমন করেন। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে তিনি ১৯৭০ সালে এমএসসি, ১৯৭৩ সালে ডিআইসি এবং ১৯৭৪ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। উচ্চ শিক্ষা লাভ করে ১৯৭৫ সালে দেশে প্রত্যাবর্তন করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ১৯৭৯ সালে সহযোগী অধ্যাপক, ১৯৮৬ সালে অধ্যাপক এবং ১৯৮৭-১৯৯০ মেয়াদে ভূতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন শিক্ষাজীবনে ছাত্র-রাজনীতিতে সত্রিয় ছিলেন। তিনি সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্রসংসদের নির্বাচিত এজিএস এবং হাজী মোহাম্মদ হমসিন হল ছাত্রসংসদের নির্বাচিত ভিপি ছিলেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তিনি যুক্তরাজ্যস্থ বাংলাদেশ ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের আহ্বয়াক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ১৯৭৯ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আহ্বানে এবং তাঁর আদর্শের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে যোগদান করেন। ১৯৯৪ সালে তিনি বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে মনোনীত হন এবং অদ্যাবধি এই পদে বহাল আছেন। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ৫ম, ৬ষ্ঠ, ৭ম, ও ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সেই সাথে বিভিন্ন সময়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, স্বরাষ্ট্র এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন জেনেভায় অনুষ্ঠিত ২০০৩ সালে ৫৬ তম বিশ্বস্বাস্থ্য সম্মেলনের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ২০০৪ সালে বিশ্বব্যাপী তামাক বিরোধী আন্দোলনে অসাধারণ ভূমিকার জন্য ৫৬ তম বিশ্বস্বাস্থ্য সম্মেলনে তাঁকে `World No Tobacco Award’ এ ভূষিত করা হয়। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিভিন্ন গবেষণামূলক প্রবন্ধ দেশ ও বিদেশের বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। ভূতত্ত্ব ভিষয়ে তাঁর একটি মৌলিক উদ্ভাবন `Hossain’s Method of Extension’ নামে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ২ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তানের জনক।