"ভালোবাসা, প্রেম নয় "বইটির মুখবন্ধ:
মুখবন্ধ
আমি আমার বন্ধু কামালের জীবনের একটি অধ্যায় লিখছি। কামালের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা নিউ ইয়র্কের গ্রে-হাউন্ড বাস টার্মিনালে। বেশ নাটকীয় সেই সাক্ষাৎকার। সেটা ছিল নভেম্বর মাস, তখনও জাঁকিয়ে শীত পড়ে নি, কিন্তু যে-কোনাে সময় তুষারপাত হতে পারে। তাই প্রচুর গরম জোব্বা-জাব্বা সমেত আমাদের সঙ্গে বেশ ভারি মােট-ঘাট। সেখানে আমাদের জন্য কারুর অপেক্ষা করার কথা ছিল না, কোনাে চেনা মুখ দেখতে পাবাে এমন আশাও করিনি।
গ্রে-হাউন্ড বাস টার্মিনাল একটি বিশাল ব্যাপার। আমাদের হাওড়া রেল স্টেশনের চেয়েও অনেক বড় তাে বটেই এবং বেশ কয়েকতলা মিলিয়ে তার বিস্তার। প্রথম এলে একটু দিশেহারার মতন লাগে। আমি অবশ্য আগে এখানে বার দুয়েক এসেছি, তা অনেক বছর আগে, এর মধ্যে অনেক কিছুই বদলে গেছে। সুতরাং আমার অবস্থাও নবাগতের মতনই, তাহলেও আমি স্বাতীকে আশ্বস্ত করছিলুম, যে চিন্তার কিছু নেই, ঠিকই রাস্তা খুঁজে পাবাে।
আমাদের আমন্ত্রণ ছিল স্নিগ্ধা মুখার্জি ও অম্বুজ মুখার্জির বাড়িতে আতিথ্য নেবার। ওঁরা থাকেন নিউইয়র্ক শহর ছাড়িয়ে খানিকটা দূরে স্কারসডেল-এ! গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল স্টেশনে গিয়ে আমাদের শহরতলির ট্রেন ধরতে হবে। ভিড় ঠেলেঠুলে বাইরের রাস্তার দিকে এগুচ্ছি, হঠাৎ ফিটফাট পোেষাক পরা এক সুদর্শন যুবক আমার সামনে এসে জিজ্ঞেস করল, তােমার নাম সুনীল তাে? আর এ নিশ্চয়ই স্বাতী? চল—
উত্তরের অপেক্ষা না করেই সে আমার কাছ থেকে নিয়ে নিল সবচেয়ে ভারি সুটকেসটা। স্বাতীর হাতের ব্যাগটাও সে তুলে নিল প্রায় জোর করেই। তারপর সে এত দ্রুত হাঁটতে লাগল তা আমাদের প্রায় ছুটতে হল ওকে ধরবার জন্য।
বাইরে বেরিয়ে বলল, আমার সঙ্গে একটা গাড়ি আছে, তাতে অবশ্য নানান মালপত্র ঠাসা, তােমাদের একটু অসুবিধে হবে, যাই হােক, কষ্ট করে চলে যাবে, ঘণ্টা দেড়েকের তাে মাত্র জার্নি। ও আমার নামটাই তাে বলা হয়নি। আমার নাম কামাল। স্নিগ্ধাদি বললেন—তােমরা আসছাে, আমি এই পথেই যাচ্ছিলাম...! | গ্রে-হাউন্ড বাস টার্মিনালে পঞ্চাশ জাতের মানুষ, ভারতীয়ের সংখ্যাও তার মধ্যে কম নয়। কামাল আমাদের চিনল কী করে? বিদেশের এয়ারপেটি বা ট্রেন-বাস টার্মিনালে অপরিচিত কারুকে রিসিভ করতে এলে সাধারণত হাতে একটা ছবি নিয়ে আসতে হয়। ছবি না থাকলে একটা বাের্ডে অতিথির নাম লিখে সেটা উঁচু করে তুলে ধরে। থাকে অনেকে।
কামাল বলল—আমার ওসব কিছু দরকার হয় না, আমি ঠিক বুঝতে পারি। এ পর্যন্ত কত লােককে রিসিভ করতে এসেছি, আমার একবারও ভুল হয়নি।
কামাল আমাকে জীবনে আগে কখনও দেখেনি তাে বটেই, ছবিও দেখেনি, আমার লমও আগে শুনেছিল কীনা সন্দেহ। আমাকে একজন লেখক হিসেবেও সে চিনত না। এই না-চেনার অনেকগুলাে কারণ থাকতে পারে, তার মধ্যে একটা হচ্ছে এই যে,
Read More