১ লাখ টাকার গিফট ভাউচার জেতার সুযোগ! ৫৯৯+ টাকার বই অর্ডারে 'MUJIB' প্রোমোকোড ব্যবহার করলে দৈবচয়নে ৫০ জন সর্বমোট ১ লাখ টাকার গিফট ভাউচার পাবেন। (৩১ আগস্ট, ২০২২ পর্যন্ত)
"ভালোবাসা, প্রেম নয় "বইটির মুখবন্ধ: মুখবন্ধ আমি আমার বন্ধু কামালের জীবনের একটি অধ্যায় লিখছি। কামালের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা নিউ ইয়র্কের গ্রে-হাউন্ড বাস টার্মিনালে। বেশ নাটকীয় সেই সাক্ষাৎকার। সেটা ছিল নভেম্বর মাস, তখনও জাঁকিয়ে শীত পড়ে নি, কিন্তু যে-কোনাে সময় তুষারপাত হতে পারে। তাই প্রচুর গরম জোব্বা-জাব্বা সমেত আমাদের সঙ্গে বেশ ভারি মােট-ঘাট। সেখানে আমাদের জন্য কারুর অপেক্ষা করার কথা ছিল না, কোনাে চেনা মুখ দেখতে পাবাে এমন আশাও করিনি। গ্রে-হাউন্ড বাস টার্মিনাল একটি বিশাল ব্যাপার। আমাদের হাওড়া রেল স্টেশনের চেয়েও অনেক বড় তাে বটেই এবং বেশ কয়েকতলা মিলিয়ে তার বিস্তার। প্রথম এলে একটু দিশেহারার মতন লাগে। আমি অবশ্য আগে এখানে বার দুয়েক এসেছি, তা অনেক বছর আগে, এর মধ্যে অনেক কিছুই বদলে গেছে। সুতরাং আমার অবস্থাও নবাগতের মতনই, তাহলেও আমি স্বাতীকে আশ্বস্ত করছিলুম, যে চিন্তার কিছু নেই, ঠিকই রাস্তা খুঁজে পাবাে। আমাদের আমন্ত্রণ ছিল স্নিগ্ধা মুখার্জি ও অম্বুজ মুখার্জির বাড়িতে আতিথ্য নেবার। ওঁরা থাকেন নিউইয়র্ক শহর ছাড়িয়ে খানিকটা দূরে স্কারসডেল-এ! গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল স্টেশনে গিয়ে আমাদের শহরতলির ট্রেন ধরতে হবে। ভিড় ঠেলেঠুলে বাইরের রাস্তার দিকে এগুচ্ছি, হঠাৎ ফিটফাট পোেষাক পরা এক সুদর্শন যুবক আমার সামনে এসে জিজ্ঞেস করল, তােমার নাম সুনীল তাে? আর এ নিশ্চয়ই স্বাতী? চল— উত্তরের অপেক্ষা না করেই সে আমার কাছ থেকে নিয়ে নিল সবচেয়ে ভারি সুটকেসটা। স্বাতীর হাতের ব্যাগটাও সে তুলে নিল প্রায় জোর করেই। তারপর সে এত দ্রুত হাঁটতে লাগল তা আমাদের প্রায় ছুটতে হল ওকে ধরবার জন্য। বাইরে বেরিয়ে বলল, আমার সঙ্গে একটা গাড়ি আছে, তাতে অবশ্য নানান মালপত্র ঠাসা, তােমাদের একটু অসুবিধে হবে, যাই হােক, কষ্ট করে চলে যাবে, ঘণ্টা দেড়েকের তাে মাত্র জার্নি। ও আমার নামটাই তাে বলা হয়নি। আমার নাম কামাল। স্নিগ্ধাদি বললেন—তােমরা আসছাে, আমি এই পথেই যাচ্ছিলাম...! | গ্রে-হাউন্ড বাস টার্মিনালে পঞ্চাশ জাতের মানুষ, ভারতীয়ের সংখ্যাও তার মধ্যে কম নয়। কামাল আমাদের চিনল কী করে? বিদেশের এয়ারপেটি বা ট্রেন-বাস টার্মিনালে অপরিচিত কারুকে রিসিভ করতে এলে সাধারণত হাতে একটা ছবি নিয়ে আসতে হয়। ছবি না থাকলে একটা বাের্ডে অতিথির নাম লিখে সেটা উঁচু করে তুলে ধরে। থাকে অনেকে। কামাল বলল—আমার ওসব কিছু দরকার হয় না, আমি ঠিক বুঝতে পারি। এ পর্যন্ত কত লােককে রিসিভ করতে এসেছি, আমার একবারও ভুল হয়নি। কামাল আমাকে জীবনে আগে কখনও দেখেনি তাে বটেই, ছবিও দেখেনি, আমার লমও আগে শুনেছিল কীনা সন্দেহ। আমাকে একজন লেখক হিসেবেও সে চিনত না। এই না-চেনার অনেকগুলাে কারণ থাকতে পারে, তার মধ্যে একটা হচ্ছে এই যে,
বিশ শতকের শেষাংশে জন্ম নেওয়া সব্যসাচী একজন বাঙ্গালি সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট- এমন বহু পরিচয়ে সাহিত্যের অগণিত ক্ষেত্রে তিনি রেখেছেন তাঁর সুকুমার ছাপ। নীললোহিত, সনাতন পাঠক কিংবা কখনো নীল উপাধ্যায় ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়েছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই সমূহ। অধুনা বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪। কিন্তু মাত্র চার বছর বয়সেই স্কুল শিক্ষক বাবার হাত ধরে সপরিবারে পাড়ি দিয়েছিলেন কলকাতায়। ১৯৫৩ সালে সাহিত্যে বিচরণ শুরু হয় কৃত্তিবাস নামের কাব্যপত্রিকার সম্পাদনার মধ্য দিয়ে। ১৯৫৮ সালে প্রকাশ পায় প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘একা এবং কয়েকজন’। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই মানেই পাঠকের কাছে আধুনিকতা আর রোমান্টিকতার মেলবন্ধন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কবিতার বই হলো ‘আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি’, ‘যুগলবন্দী’ (শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে), ‘হঠাৎ নীরার জন্য’, ‘রাত্রির রঁদেভূ’ ইত্যাদি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বই সমগ্র ‘পূর্ব-পশ্চিম’, ‘সেইসময়’ এবং ‘প্রথম আলো’ তাঁকে এপার, ওপার আর সারাবিশ্বের বাঙালির কাছে করেছে স্মরণীয়। ‘কাকাবাবু-সন্তু’ জুটির গোয়েন্দা সিরিজ শিশুসাহিত্যে তাকে এনে দিয়েছিলো অনন্য পাঠকপ্রিয়তা। তাঁরই উপন্যাস অবলম্বনে কিংবদন্তী পরিচালক সত্যজিৎ রায় পরিচালনা করেছিলেন ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ এবং ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’র মতো চলচ্চিত্র। পাঠক সমাদৃত ভ্রমণকাহিনী ‘ছবির দেশে কবিতার দেশে’ কিংবা আত্মজীবনীমূলক ‘অর্ধেক জীবন বই’তে সাহিত্যগুণে তুলে ধরেছিলেন নিজেরই জীবনের গল্প। ২০১২ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চার দশকে তিনি পরিচিত ছিলেন জীবনানন্দ পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি এবং বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে।