“নিজের একটি কামরা" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ “...আমি কল্পনা করি যে শেকসপিয়রের একটি মেধাবী বােন ছিল, ধরা যাক তার নাম জুডিথ ।.. শীঘ্রই, কুড়িতে পা দেবার অনেক আগেই তার বিয়ে পাকা করে ফেলা হয় পাড়ার পশম ব্যবসায়ীর ছেলের সঙ্গে। সে চিৎকার করে বলছিল যে বিয়েকে সে ঘেন্না করে, সে জন্য পিতা কর্তৃক প্রহৃত হয়। তারপর হঠাৎ বকা বন্ধ করে দেন তিনি। পরিবর্তে করজোড়ে তাকে এই বিবাহ বিষয়ে অপমান ও লজ্জায় না ফেলতে অনুরােধ করেন। মেয়েকে সুন্দর একখানা মালা অথবা সিল্কের পেটিকোট উপহার দেবেন বলেন, তার চোখে পানি দেখা দেয়। সে কী করে তাঁকে অমান্য করে? কীভাবে তার হৃদয় ভেঙে দিতে পারে সে? অতএব তার নিজের প্রতিভাই তাকে অন্য পথে। চালিত করে। সে তার যৎসামান্য সম্পত্তি পুঁটলিতে বেঁধে নিয়ে, এক গ্রীষ্মের রাতে দড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে আর লন্ডন রওনা হয়। তার বয়স তখন সতেরােও নয়। ঝােপে বসে যে-পাখি গান গায় তার গলা তার চেয়ে বেশি মিষ্টি নয়। ভাইয়ের মতাে তারও ছিল শব্দ ও সংগীতের ব্যাপারে চটজলদি প্রতিভা।। ভাইয়ের মতাে তার ছিল নাট্যবােধ। সেও তাই মঞ্চের দরজায় গিয়ে দাঁড়ায়; অভিনেত্রী হবার বাসনা প্রকাশ করে। পুরুষেরা তার মুখের ওপর হাসাহাসি করত। মােটা, মুখপাতলা ম্যানেজারটা তাকে নিয়ে ফোড়ন কাটে। কুকুর ছানার নাচ ও মেয়েদের অভিনয় করা নিয়ে কী যেন একটা বিদ্রুপাত্মক অঙ্গভঙ্গি করে—কোনাে মেয়েরই, সে বলে, অভিনয় করার ক্ষমতা নেই। সে ইঙ্গিত করে—আপনারা জানেন কীসের । সে তার পছন্দের এই শিল্পে কোনাে শিক্ষা পায় না। সে কি কোনাে সরাইখানায় রাতের খাবার কিনতে কিংবা মধ্যরাতে রাস্তায় হাঁটতে পারত? তবু। তার প্রতিভা ছিল সাহিত্যেই এবং সে ছিল তরুণী ও তার মুখে ছিল শেক্সপিয়রের আদল, একই রকম। ধূসর চোখ ও জোড়া জ্ব-অভিনেতা কাম ম্যানেজার নিক গ্রিন তার ওপর দয়াপরবশ হলেন এবং সে। নিজেকে আবিষ্কার করল তার সন্তানের জননী হিসেবে—নারীদেহে আটকে পড়া কবিহৃদয়ের উত্তাপ ও আক্রোশ পরিমাপ করবে কে?—এবং এক শীতের রাতে আত্মহত্যা করে এখন সে শুয়ে আছে ক্যাসল ও এলিফ্যান্ট এর মােড়ে যেখানে বাসগুলাে এসে থামে।”
প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক আলম খােরশেদের জন্ম ১৯৬০ সালে কুমিল্লায় । পেশায় প্রকৌশলী আলম খােরশেদ প্রবাসে উচ্চশিক্ষা ও দীর্ঘ পেশাজীবনশেষে স্থায়ীভাবে দেশে ফিরে আসেন ২০০৪ সালে। ছাত্রাবস্থা থেকেই তিনি সাহিত্যচর্চা ও নানাবিধ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত । শিল্পসাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় সমান উৎসাহী, তাঁর প্রধান আগ্রহের বিষয় অবশ্য সমকালীন বিশ্বসাহিত্য। তাঁর সম্পাদিত লাতিন আমেরিকান ছােটগল্প সংকলন জাদুবাস্তবতার গাথা আমাদের অনুবাদ সাহিত্যের একটি পথপ্রদর্শক কাজ। সম্পাদনা, অনুবাদ ও মৌলিক রচনা। মিলিয়ে তিনি এ-পর্যন্ত কুড়িটিরও অধিক গ্রন্থ রচনা। করেছেন। তাঁর উল্লেখযােগ্য সাহিত্যকীর্তির মধ্যে রয়েছে wils forat tay czas wars 23 A Room of one's Own এর অনুবাদ নিজের একটি কামরা, নােবেল-বিজয়ী কবি ভিস্লাভা শিম্বস্কার ত্রিশটি কবিতার অনুবাদ, বাংলাদেশের নারীবাদী গল্প-সংকলন কাটা জিহ্বার কথা, মূল স্প্যানিশ ভাষা থেকে অনূদিত বাের্হেস ও বিজোরিয়া ওকাম্পাের আলাপচারিতা, নগুগি ওয়া থিয়ােঙ্গোর নাট্যানুবাদ গির্জাবিয়ে, সালমান রুশদীর ভ্রমণ আখ্যান The Jaguar Smile এর অনুবাদ ইত্যাদি। বর্তমানে তিনি লেখালেখির পাশাপাশি চট্টগ্রাম শহরে তাঁর নিজের গড়া সংস্কৃতি-কেন্দ্র বিস্তার পরিচালনার কাজে ব্যাপত রয়েছেন ।