"বিজ্ঞান কল্পকাহিনী ইরন"বইটির প্রথমের কিছু অংশ: ইরন দীর্ঘসময় থেকে সমুদ্রের তীরে নির্জন বিস্তৃত বালুবেলায় একাকী বসে আছে। তার মন বিষন্ন, বিষন্নতার ঠিক কারণটি জানা নেই বলে একধরনের অস্থিরতা তার মনকে অশান্ত করে রেখেছে। ইরন অন্যমনস্কভাবে আকাশের দিকে তাকায় একটা ভাঙা চাঁদ মেঘের আড়াল থেকে বের হওয়ার মিথ্যে চেষ্টা করে আবার মেঘের আড়াল হয়ে গেল। মেঘে ঢাকা চাঁদের কোমল আলােতে চোখের রেটিনায় বর্ণ অসংবেদী রড গুলি কাজ করছে— তাই চারিদিক আবছা এবং ধূসর। মধ্যরাত্রিতে নির্জন বালুবেলায় সামনের বিস্তৃত নিস্তরঙ্গ সমুদ্রটিকে একটি অতিপ্রাকৃতিক দৃশ্য বলে মনে হয়। ইরনের পিছনে দীর্ঘ ঝাউগাছ, সমুদ্রের নােনা ভেজা হাওয়ায় সেগুলি দীর্ঘশ্বাসের মতাে শব্দ করছে। হাহাকারের মতাে সেই শব্দ শুনলেই বুকের মাঝে বিচিত্র একধরনের শূন্যতা এসে ভর করে। ইরন তার বুকের মাঝে দুর্বোধ্য সেই শূন্যতা নিয়ে নিজের হাঁটুর উপর মাথা রেখে নিঃশব্দে বসে থাকে। হঠাৎ করে সে বুঝতে পারে সে বড় নিঃসঙ্গ এবং একাকী। তার বুকের ভিতরে যে বিষন্নতা তার সাথে সে পরিচিত নয়, যে হতাশা তার মুখােমুখি হওয়ার সাহস নেই । অথচ এরকমটি হওয়ার কথা ছিল না। ইরন সুদর্শন, সুস্থ, সবল, নীরােগ একজন পুরুষ, তার বয়স মাত্র সাতাশ, এরকম বয়সে একজন মানুষ দীর্ঘ প্রস্তুতির পর প্রথমবার সত্যিকার জীবনে প্রবেশ করে। নিজে দায়িত্ব বুঝে নেয়, নেতৃত্ব দেয়া শুরু করে, আশেপাশে অন্য মানুষেরা তার চিন্তা-ভাবনা-সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করতে শুরু করে। ইরন মেধাবী এবং পরিশ্রমী মানুষ ছিল। তার ভিতরে তীক্ষ্ম একধরনের সৃজনশীলতা ছিল, জীবনকে ভালবাসার ক্ষমতা ছিল, উপভােগ করার আগ্রহ ছিল। সবচেয়ে বড় কথা তার ভিতরে সহজাত নেতৃত্বের একটা
বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরী পাঠকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি মূলত এ দেশের একজন বিখ্যাত লেখক, পদার্থবিদ এবং শিক্ষাবিদ। কিশোর সাহিত্য, শিশুতোষ গ্রন্থ, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, গণিত বিষয়ক বই এর জন্য খুব অল্প সময়েই জনপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি। মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৯৫২ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। মুক্তিযোদ্ধা বাবা ফয়জুর রহমানের চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন জেলাতেই তিনি পড়াশোনা করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে পিএইচডি ডিগ্রী অজর্নের উদ্দেশ্যে স্কলারশিপ নিয়ে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। পিএইচডি সম্পন্ন করে ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে বিখ্যাত বেল কমিউনিকেশনস রিসার্চ ল্যাবেও গবেষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৪ সালে দেশে ফিরে এসে তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগ দেন। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সবসময়ই এ দেশের কিশোর-কিশোরীদের কাছে বিশেষ আবেদন নিয়ে হাজির হয়েছে। কিশোর সাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ক অজস্র গ্রন্থ দিয়ে তিনি আলোকিত করে তুলেছেন এদেশের অগণিত কিশোর-কিশোরীর মনোজগত। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সমূহ, যেমন- দীপু নাম্বার টু, আমার বন্ধু রাশেদ, আমি তপু, শান্তা পরিবার, দস্যি ক’জন ইত্যাদি ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পায়। তার বেশ কিছু গল্প পরবর্তীতে নাটক ও চলচ্চিত্র হিসেবে টিভি পর্দায় স্থান করে নিয়েছে। তিনি একজন বিশিষ্ট কলামিস্টও। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডও তাঁর ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সমগ্র সকল বইপড়ুয়াকেই আকৃষ্ট করে। সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বহুবার পুরষ্কৃত হয়েছেন। বাংলা একাডেমি পুরষ্কার (২০০৪) এবং শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হিসেবে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার (২০০৫) সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও, কাজী মাহবুবুল্লা জেবুন্নেছা পদক (২০০২), শেলটেক সাহিত্য পদক (২০০৩), ইউরো শিশুসাহিত্য পদকসহ (২০০৪) অগণিত পুরষ্কার অর্জন করেছেন গুণী এই সাহিত্যিক।