বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের একটি জেলা রাজসাহী পদ্মার উত্তরপার্শ্বে অবস্থিত। সড়ক, নদীপথ ও রেলপথের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলার সঙ্গে যুক্ত। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের এই গুরুত্বপূর্ণ জেলাটির আয়তন ৯,৪৫৬ বর্গ কিলোমিটার। চারটি জেলা রাজসাহী, নওগাঁ, নাটোর, নবাবগঞ্জ নিয়ে বর্তমান বৃহত্তর রাজসাহী জেলা। একাধিক বার জেলার আয়তনে পরিবর্তন ঘটেছে। সর্বশেষ পরিবর্তন ঘটে ১৯৪৭ সালে এবং তারপর। দেশভাগের সময় মালদহ জেলার নওয়াবগঞ্জ, ভোলাহাট, নাচোল, গোমস্তাপুর ও শিবগঞ্জ থানা যুক্ত হয় রাজসাহীর সঙ্গে। এই পাঁচটি থানা নিয়ে পরবর্তীকালে গঠিত হয় নওয়াবগঞ্জ মহকুমা—এখন জেলা। অবিভক্ত দিনাজপুর জেলার পোরশা, পত্নীতলা ও ধামইরহাট থানা দেশভাগের সময় বগুড়ায় যুক্ত করা হলেও ১৯৪৯ সালে যুক্ত হয় রাজসাহী জেলার সঙ্গে। ১৯৫৪ সালে মুর্শিদাবাদ জেলার ৩৬টি মৌজা (আয়তন ২৪,৭৪০ একর) রাজসাহীর সঙ্গে যুক্ত হয়। এবং রাজসাহী জেলার ২২টি মৌজা যুক্ত হয় মুর্শিদাবাদের সঙ্গে। প্রাচীন বরেন্দ্র ভূমির অন্তর্গত ছিল রাজসাহী, দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া ও মালদহ। এখানকার লালমাটি বৈশিষ্ট্যে চিহ্নিত। এর মধ্যে আছে ভারতে মালদহ এবং দিনাজপুর জেলার একাংশ । রাজসাহীর বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে ছিল হিন্দু জমিদারদের আধিপত্য। জেলার সার্বিক উন্নয়নে তাদের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। কালীনাথ চৌধুরীর “রাজসাহীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস” প্রকাশিত হয় ১৩০৮ সালে। স্থানীয় জমিদার পরিবারের সন্তান কালীনাথ। আত্রাই থানার মির্জাপুরে তাঁর জন্ম। রাজসাহী জেলার ডেপুটি ইনসপেক্টর হিসাবে সুনাম অর্জন করেন। রাজসাহীর মাটির সঙ্গে তাঁর আত্মার যোগ। বইয়ের আয়তন বড় না হলেও, গ্রন্থটি রচনায় কালীনাথ বিপুল পরিমাণ তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন। বইটি প্রকাশের পর সেকালের পত্রপত্রিকায় সপ্রশংস আলোচনা প্রকাশিত হতে থাকে। ঐতিহাসিক অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় বইটি সম্পর্কে লিখেছিলেন : “শ্রীযুক্ত কালীনাথ চৌধুরী মহাশয়ের রাজসাহীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস পাঠ করিয়া প্রীতিলাভ করিলাম। রাজসাহীর কোন ইতিহাস ছিল না, সেই অভাব দূর করিয়া কালীনাথবাবু রাজসাহীবাসীর কৃতজ্ঞতা লাভ করিয়াছেন। এরূপ গ্রন্থের উৎসাহ দান করা রাজসাহীবাসী সম্ভ্রান্ত মহাশয়গণের গৌরবের বিষয়। এই গ্রন্থে অধিকাংশ সম্ভ্রান্ত বংশের ইতিবৃত্ত আলোচিত হইয়াছে।” অক্ষয়কুমারও রাজসাহীর সন্তান। নিজের জন্মস্থানের ইতিহাস জানতে কার না ইচ্ছা করে। কালীনাথের বইটি তাঁকে খুশি করেছিল। আঞ্চলিক প্রীতির থেকেও বড় কথা, বিষয় সম্পর্কে তথ্যপূর্ণ বিবরণ প্রকাশে কালীনাথ চৌধুরীর দক্ষতা। যা অক্ষয়কুমারের মত ইতিহাস সচেতন মানুষকেও অভিভূত করেছিল। গ্রন্থটি সম্পর্কে সমকালীন পত্রপত্রিকা ও ব্যক্তিবিশেষের মন্তব্য এখানে উদ্ধৃত হল। “এ গ্রন্থ রত্নবিশেষ। এইরূপ গ্রন্থের আমরা চিরপক্ষপাতী ; কিন্তু এরূপ গ্রন্থের গ্রাহক যে অধিক হইবে, তৎপক্ষে আমাদের সন্দেহ আছে। ধৈর্য ধরিতে সক্ষম এবং শিক্ষালাভার্থ যত্নপরায়ণ বাঙালি কয়জন আছে? ...