প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
সূচিপত্র
প্রকাশকের কথা
ভূমিকা
অধ্যায়-১ পবিত্র বংশধারা
অধ্যায়-২ জন্ম ও বাল্যজীবন
অধ্যায়-৩ হযরত আবুল ফজল আব্বাসের বংশধর
অধ্যায়-৪ উপাধি
অধ্যায়-৫ ব্যক্তিত্ব
অধ্যায়-৬ মহান ইমামদের দৃষ্টিতে হযরত আবুল ফজল আব্বাস
অধ্যায়-৭ কারবালার প্রেক্ষাপট
অধ্যায়-৮ ইমাম হুসাইনের বিপ্লব
অধ্যায়-৯ আশুরার দিন ও হযরত আবুল ফজল আব্বাসের শাহাদত
অধ্যায়-১০ পবিত্র সমাধি
অধ্যায়-১১ অলৌকিকত্ব
প্রকাশকের কথা
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম। সুপ্রতিষ্ঠিত প্রশংসা মহান রবের যিনি সৃষ্টিকুলের মাঝে জিন ও ইনসানের জন্য তাঁর মারেফাতের অবারিত দুয়ার উন্মোচিত করে দিয়েছেন। হাজার দরুদ ও সালাম মানবতার মুক্তিসংগ্রামের রচয়িতা সাইয়্যেদুল মুরসালিন হযরত মুহাম্মাদ মুস্তাফা (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের প্রতি। বিনম্র সালাম ও দরুদ আখেরি জামানার হুজ্জাত, মহান রাব্বুল আলামিনের প্রজ্বলিত নূর, হেদায়েতের অবারিত আলোকধারা ইমামুজ্জামান আল মাহ্দী (আ.)-এর প্রতি। আল্লাহ তাঁর আগমণকে দ্রুত ত্বরান্বিত করুন।
ইতিহাসের আলোকে বলা যেতে পারে যে, একটি সভ্য জাতি গঠিত হয় জাতির ধারকদের চিন্তা, চেতনা, আদর্শ ইত্যাদি মানবীয় গুণাবলি কেন্দ্র করে। চিন্তার ক্ষেত্রে যে জাতি যত স্বচ্ছ সে জাতি নিজেদের মর্যাদা রক্ষায় ততোধিক সচেতন। যে জাতির নিকট তাদের চেতনা যত স্পষ্ট তাদের গঠন ততো মজবুত। যারা আদর্শের দিক থেকে যতো অনমনীয়, তাদের উত্থান স্তিমিত করে দেয়া ততই দুরূহ।
আর আদর্শের অবকাঠামো তৈরি হয় ঐতিহাসিক অবদানের মধ্য দিয়ে। সমাজ বিনির্মাণে যারা অবদান রেখেছেন তাদের আদর্শিক ধারাতেই গঠিত হয় উক্ত জাতির কাঠামো। তাই যদি সেই সকল ঐতিহাসিক আদর্শের স্বরূপ মানুষের সম্মুখে তুলে ধরা না যায় তবে জাতিকে আভ্যন্তরীণ দিক থেকে শক্তিশালী করা সম্ভব নয়। সুতরাং মুসলিম উম্মাহকে শক্তিশালী করার জন্য এই জাতির ঐতিহাসিক আদর্শগুলোর মূল্যায়ন একান্ত আবশ্যক। নিজেদের ঐতিহ্যের ধারায় যাঁরা মহীয়ান তাদের স্বরূপ চিহ্নিত না করে নিজেদেরকে আদর্শের পথে পরিচালিত করার প্রচেষ্টা নিজের সাথে প্রতারণার শামিল। এই আত্মপ্র্রবঞ্চনা অন্যের দাসত্বে মানুষকে বাধ্য করে নেয়, একেবারে নিজের অজান্তেই। আত্মভোলা ব্যক্তি নিজের মর্যাদা জানে না বলেই যে কেউ তাকে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী পরিচালিত করার ফন্দি করে। এ জন্যই আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী ইবনে আবু তালিব বলেছেনÑ “যে স্বীয় পরিচয়ে পরিচিত হতে পারে, সে-ই তাঁর রবের সাথে পরিচিত হতে পারে।”
একটি জাতিকে ভিতর থেকে শক্তিশালী করার জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী আদর্শিক অবকাঠামো। আদর্শিক ভিত্তি যদি মজবুত না হয়, তবে সামাজিক অবকাঠামো হয়ে পড়ে নির্জীব। সেখানে তখন দানা বাঁধে অসাধুতা, অকল্যাণ, হিংসা, সীমাহীন প্রতিযোগিতা, দ্বন্দ্ব-বিচ্ছেদ, সর্বোপরি অশান্তিময় এক পরিস্থিতি। ফলে সেই জাতি দুনিয়ার বুকে আগাছার ন্যায় বিবেচিত হয়।
তাই মুসলিম জাতিকে আত্মবলে বলিয়ান হতে হলে ফিরে যেতে হবে সেই সকল ঐতিহাসিক আদর্শের দিকে যারা নিজেদের কর্মের দ্বারা সমাজকে গঠন করেছেন এবং মানুষের সম্মুখে তুলে ধরেছেন উত্তরণের শক্তিশালী পন্থা। ইসলামের ইতিহাসের সেই সকল ঐতিহাসিক চরিত্রের মূল্যায়ন একান্ত আবশ্যক, যারা মুসলিম উম্মাহর সামনে আদর্শের মৌলিক ধারার সাথে যুক্ত ছিলেন এবং সুনিশ্চিত ধারায় সংযুক্ত থেকে পরিচিত হয়েছেন স্বকীয় মর্যাদায়।
ইসলামের প্রধান দুটি গোত্রের (বনু হাশিম ও বনু উমাইয়্যা) ইতিহাস থেকেও আমরা উপরিউক্ত কথাগুলোর সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারি। যেখানে দুই গোত্র ছিল পরস্পরের বিরোধী। যাদের মধ্যে এক গোত্র ছিল আদর্শের ধারক আর অন্য গোত্র আদর্শের মর্যাদাকে দু পায়ে দলিত মথিত করার প্রয়াসে ব্যস্ত। বনু হাশিম ও বনু উমাইয়্যার মধ্যকার শত্রুতার মূল কারণ সামাজিক আধিপত্য নয়, বরং আদর্শিক। ইতিহাসে যতটুকু পাওয়া যায় ততটুকুতেই বলা যায় যে, উমাইয়্যা ও হাশিমের মধ্যকার প্রতিহিংসা কোনো সামাজিক মর্যাদাকে কেন্দ্র করে ছিল না। বনু হাশিম সর্বদাই সমাজে মার্জিত, নম্র, জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের প্রতিনিধিত্ব করে আসছিল। তাঁদের ব্যক্তিগত জীবন থেকে সামাজিক জীবন আদ্যপ্রন্তই ছিল সরল, আকর্ষণীয় এবং মানুষের জন্য অনুকরণীয়। মক্কাবাসী তাঁদের সঙ্গ সবসময় পছন্দ করত। বনু উমাইয়্যা যখন দেখল যে, সমাজের ব্যবসা, ক্ষমতা সব কিছু তাদের হাতে থাকা সত্ত্বেও তারা সমাজে সম্মান ও মর্যাদার স্থান থেকে বহু দূরে, তখন তাদের অন্তরে পরাজয়ের তিক্ততা জেগে উঠত। তাদের অনন্তর প্রচেষ্টা ছিল মক্কাবাসীদের থেকে বনু হাশিমের মর্যাদার স্থান ছিনিয়ে নেয়া। কিন্তু এতে তারা বরাবরই ছিল ব্যর্থ, কারণ বনু হাশিমের মর্যাদা সুদূর অতীত থেকেই সমাজের মূলে ছিল বদ্ধমূল।
বরাবরই বনু হাশিম মানুষের নিকট নির্ভরযোগ্য, আমানতদার এবং বিশ্বাসের কষ্টিপাথরে পরিণত হতে যাচ্ছিল। রাসূল (সা.)-এর জন্ম এ ধরায় যত নিকটে আসছিল ততই বনু হাশিমের গোত্রপতিদের জীবনযাত্রা, লেনদেন, মানুষের সাথে সম্পর্ক, আধ্যাত্মিকতা এবং সমাজ দর্শনে সাধারণ মক্কাবাসী আমূল পরিবর্তন লক্ষ করতে লাগল। রাসূল (সা.)-এর প্রায় প্রত্যেক আদিপিতার যুগেই সমাজে নতুন নতুন মোজেজার অবতারণা হয়েছিল। তাঁদের প্রতি সমাজের মানুষের আস্থা ছিল চোখে পড়ার মতো। তাঁরা যখনই কথা বলতেন তখন প্রজ্ঞাপূর্ণ কথাই বলতেন। তাঁরা সকলে ছিলেন আমানতদার, সত্যবাদী, ওয়াদাপালনকারী। ফলে সমাজের মধ্যে তাঁদের প্রভাব ছিল সত্যিই ঈর্ষণীয়।
আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী ইবনে আবু তালিবের পুত্র হযরত আবুল ফজল আব্বাস তাঁদেরই ধারারই একজন। আদর্শের ক্ষেত্রে যিনি অনন্য, অনুকরণের ক্ষেত্রে যিনি অতুলনীয়, অনুসরণে যিনি অনতিক্রম্য। হযরত আবুল ফজল আব্বাস ইসলামের এমন এক ইতিহাস, যার আবেদন কখনও ¤¬ান হওয়ার নয়। তিনি এমন এক সঞ্জীবনী শক্তি, যার প্রয়োজনীয়তা উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই।
কারবালার সুমহান আন্দোলন থেকে যার প্রতি মুসলিম উম্মাহর দৃষ্টি বদ্ধ হয়, তিনি ছিলেন এমন এক অনুগত ব্যক্তিত্ব, যার আনুগত্য সকল মাখলুক উদাহরণ হিসেবে নিজেদের মধ্যে ব্যবহার করে ও করবে। আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী ইবনে আবু তালিবের যুগ থেকে শুরু করে কারবালায় শাহাদতের পূর্ব পর্যন্ত হযরত আবুল ফজল আব্বাসের আনুগত্য এমন এক মর্যাদার আসনে অবস্থিত, যার সমমর্যাদায় উত্তীর্ণ হওয়া অসম্ভব। এই আনুগত্যের অবস্থান থেকে কেবলমাত্র অনুকরণীয় দিকগুলো অবলোকন করে নিজেকে সে রকম গঠন করা সম্ভব, যার কোনো বিকল্প নেই। কীভাবে নিজের আনুগত্যকে গ্রহণযোগ্য করে তোলা যায়, তা হযরত আব্বাস আলামদারের অনুসরণ না করলে পালন করা সম্ভব নয়। কীভাবে নিজেকে এতায়াতের (আনুগত্য) সাথে একীভূত করা যায়, তা তাঁর জীবনের দিকে না তাকালে অর্জন করা মোটেই সম্ভব নয়।
হযরত আবুল ফজল আব্বাস প্রেমের এমন এক স্তম্ভ যার প্রতি মস্তক অবণত না করে নিজেকে আশেক দাবি করা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার সমতুল্য, আর তা এমন এক অপরাধ যার কোনো ক্ষমা নেই। আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী ইবনে আবু তালিব থেকে শুরু করে ইমাম হুসাইন ইবনে আলীর শাহাদত পর্যন্ত তিন জন পূতপবিত্র ইমাম ও তাঁদের স্বজনদের প্রতি হযরত আবুল ফজল আব্বাসের প্রেম, ভক্তি, ভালোবাসা, ত্যাগ মুসলিম উম্মাহর সামনে চিরঞ্জীব উদাহরণের চিরভাস্বর এক মিনারসম। সে জন্যই যখন তিনি শাহাদতের অমিয় সুধা পান করে পরপারে চলে গিয়েছিলেন তখন ইমাম হুসাইন নিঃসঙ্গতা সহ্য করতে না পেরে উক্তি করেছিলেনÑ “আজ যেন আমার কোমর ভেঙ্গে গেল। ও আব্বাস! তোমার বিদায়ে আমি আজ নিঃসঙ্গ হয়ে গেলাম।” ইমাম হুসাইনের জন্য তিনি প্রেমের এমনই এক উৎস ছিলেন যে, তাঁর শাহাদতের পর ইমাম বেঁচে থাকার আর কোনো প্রয়োজনীয়তা বোধ করছিলেন না। যেন তিনি দুনিয়ার প্রতি সকল আকর্ষণই হারিয়ে ফেলেছিলেন। তাঁর প্রেমের অবদানকে স্বীকৃতি দিতেই যেন, রাব্বুল আলামিন ইমাম হুসাইনের পূর্বে হযরত আবুল ফজল আব্বাস ব্যতীত ইমামের কাফেলায় আর কাউকে জীবিত থাকার সুযোগ দেননি। তিনিই ছিলেন, যার প্রয়াণে ইমাম নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিলেন। আল কোরআনে সূরা আশ-শুরার ২৩ নং আয়াতে রাব্বুল আলামিন রাসূল (সা.)-এর পক্ষ হয়ে মানুষের কাছ থেকে রেসালাতের যে বিনিময় চেয়েছেন তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছেন ‘ক্বামার-এ-বনু হাশিম’ তথা হযরত আবুল ফজল আব্বাস।
হযরত আবুল ফজল আব্বাসের জীবনী প্রকাশে আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য মুসলিম উম্মাহকে তাঁর জীবনের উজ্বলতম দিকগুলোর সাথে পরিচিত করা। যাতে করে মুসলমানেরা হযরত আব্বাস আলামদারের জীবন থেকে প্রেম, আনুগত্য, ত্যাগের মহিমায় আলোকিত হতে পারে এবং নিজেদের জীবনকে ইমাম-এ-জামান আল মাহদী (আ.)-এর পথে অবিচল আস্থার পথে বিলিয়ে দিতে পারে। দ্বিতীয় কোনো আব্বাস আলামদারের উপস্থিতি সম্ভব না হলেও তাঁর রঙে রঙিন একটি জাতি গঠন সম্ভব, যাদের প্রেম, ত্যাগ, আনুগত্যের উপর নির্ভর করে কায়েমুজ্জামান আল মাহদী (আ.) তাঁর বিজয়ের পতাকা উড্ডীন করবেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে সেই অনুযায়ী প্রস্তুত হওয়ার তৌফিক দান করুন, যেভাবে প্রস্তুত হলে তাঁর বিজয় সুনিশ্চিত করা সম্ভব হয়। আমিন।
ওয়াসসালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ
প্রকাশক
আলে রাসূল পাবলিকেশন্স
Title | হযরত আবুল ফজল আব্বাস |
Author | আবু তালেব আত-তাবরিযী |
Publisher | আলে রাসূল পাবলিকেশনস্ |
Edition | 1st Published, 2014 |
Number of Pages | 136 |
Country | বাংলাদেশ |
Language | বাংলা |
Have a question regarding the product? Ask Us
Please log in to write question Log in
Help: 16297 24 Hours a Day, 7 Days a Week
Pay cash on delivery Pay cash at your doorstep
Service All over Bangladesh
Happy Return All over Bangladesh