"বাইবেল কোরআন ও বিজ্ঞান "বইটির গোড়ার কথা: একত্ববাদী বলে পরিচিত তিনটি ধর্মেরই নিজ নিজ ধর্মগ্রন্থ রয়েছে। যারা বিশ্বাসী তারা ইহুদী, খ্রীস্টান অথবা মুসলমান যা-ই হােন না কেন, এইসব সঙ্কলিত দলিল তথা ধর্মগ্রন্থ হচ্ছে তাদের বিশ্বাসের বুনিয়াদ। তাদের কাছে এইসব ধর্মগ্রন্থ হচ্ছে সেই ধরনের আসমানী ওহীর লিপিবদ্ধ রূপ, যে ধরনের ওহী হজরত ইবরাহিম (আঃ) এবং হজরত মূসা (আঃ) সরাসরি আল্লাহর কাছ থেকে পেয়েছিলেন এবং যে ওহী হজরত ঈসা (আঃ) লাভ করেছিলেন ফাদার বা পিতার নামে : আর হজরত মােহাম্মদ (দঃ) লাভ করেছিলেন প্রধান ফিরিস্তা জিব্রাঈলের মাধ্যমে। ধর্মীয় ইতিহাসের নিরপেক্ষ বিচারে তাওরাত, জবুর, ইঞ্জিল (অর্থাৎ বাইবেলের পুরাতন ও নতুন নিয়ম) এবং কোরআন একই ধরনের ওই বা প্রত্যাদেশপ্রাপ্ত ধর্মগ্রন্থ। মুসলমানেরা যদিও এই নীতি মেনে চলেন কিন্তু পাশ্চাত্যের ইহুদী-খ্রস্টান সংখ্যাগুরু সমাজ কোরআনকে প্রত্যাদেশপ্রাপ্ত ধর্মগ্রন্থ হিসাবে স্বীকার করতে চান না। পরস্পরের ধর্মগ্রন্থ সম্পর্কে এই যে দৃষ্টিভঙ্গি, খুব সম্ভব এর থেকেই বােঝা যাবে যে, একটি ধর্মীয় সমাজ অপর ধর্মীয় সমাজ সম্পর্কে কি ধরনের মনােভাব পােষণ করে। হিব্রু ভাষার বাইবেল হলাে ইহুদীদের পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ। উল্লেখ্য যে, হিব্রু বাইবেল খ্রীস্টানদের বাইবেলের অন্তর্ভুক্ত ওল্ড টেস্টামেন্ট বা পুরাতন নিয়ম থেকে কিছুটা আলাদা। খ্রীস্টানরা এই ওল্ড টেস্টামেন্টে এমন বেশ কয়েকটি অধ্যায় সংযােজিত করেছেন যা হিব্রু বাইবেলে নাই। এই সংযােজনা কিন্তু বাস্তবে ইহুদী মতবাদে তেমন কোনাে পরিবর্তন ঘটাতে পেরেছে বলে মনে হয় না। কেননা, নিজস্ব হিব্রু বাইবেলের পরে আর কোনাে ধর্মগ্রন্থ অবতীর্ণ হওয়ার কথা ইহুদীরা স্বীকার করেন না। খ্রীস্টানরা হিব্রু বাইবেল যেমনটি ছিল তেমনিভাবে সেটিকে গ্রহণ করেছেন এবং তার সঙ্গে আরও কিছু অধ্যায় সংযুক্ত করে নিয়েছেন। অন্যদিকে খ্রীস্টানরা নিজেরাও কিন্তু যীশুর (হজরত ঈসার) ধর্মপ্রচারের সাথে সংশ্লিষ্ট এবং মানুষের কাছে পরিচিত সবগুলি রচনাকে ধর্মগ্রন্থ হিসাবে গ্রহণ করেন নাই। যীশুর জীবনী ও শিক্ষা-সংক্রান্ত পুস্তকের সংখ্যা কম ছিল না। কিন্তু গির্জার পুরােহিত-অধিকারীরা তাওরাত বলতে বাইবেলের পুরাতন নিয়মের পঁাচটি পুস্তককে বােঝায়, এগুলি হজরত মূসার পটিয়াক নামে পরিচিত। যথা (বাংলা বাইবেল অনুরে) : আদিপুস্তক, যাত্রাপুস্তক, গণনাপুস্তক, লেবীয় পুস্তক ও দ্বিতীয় বিবরণ।
আখতার-উল-আলম রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার অন্তর্গত তাজনগর গ্রামের সম্রান্ত শাহ পরিবারের সন্তান আখতার-উল-আলম, জন্ম ১৯৩৯ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারী। পিতা শাহ আবুল কশেম, মাতা রমিছা খাতুন। জনাব আলম বলদিপুকুর প্রাইমারী স্কুল, রাণীপুকুর হাইস্কুল, রংপুর কারমাইকেল কলেজ ও ঢাকা সরকারী কলেজের ছাত্র ছিলেন এবং প্রথম ব্যাচের ছাত্র হিসাবে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় এম.এ ডিগ্রী লাভ করেন। জনাব আলমের সাংবাদিকতা জীবনের সূচনা ৬০ দশকের শুরুতে বাংলাদেশের প্রাচীনতম দৈনিক আজাদে। তখন দৈনিক আজাদ গ্রুপ অব পাবলিকেশন্স-এর সুপ্রসিদ্ধ মাসিক পত্রিকা মােহাম্মদীর তিনি ছিলেন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। একই সঙ্গে মাওলানা মােহাম্মদ আকরম খার তত্ত্বাবধানে তিনি দৈনিক আজাদের সম্পাদকীয় এবং কলাম লেখকের দায়িত্ব পালন করেন। মাঝখানে তিনি তাঁর সাংবাদিকতা জগতের অন্যতম ওস্তাদ মরহুম মুজিবুর রহমান খার অনুরােধে দৈনিক পয়গাম (অধুনালুপ্ত)-এর সহকারী সম্পাদক পদে যােগদান করেন। কিন্তু মাতামতের মিল না হওয়ায় তিনি সহকারী সম্পাদক ও কলামিষ্ট হিসাবে পুনরায় দৈনিক আজাদে ফিরে আসেন। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ মিলিটারী ক্র্যাক-ডাউনের পর তিনিই প্রথম সাংবাদিক যাকে পাকিস্তানী আর্মিরা অস্ত্রের মুখে দৈনিক আজাদ থেকে ধরে নিয়ে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বন্দী করে রাখে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে জনাব আলম দৈনিক ইত্তেফাকে সহকারী সম্পাদক হিসাবে যােগদান করেন। অল্পকালের মধ্যে ইত্তেফাকে তার স্থান-কাল-পাত্র’ কলামটি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হয়। ৭০ ও ৮০ দশকে লুব্ধকএর এই কলামটি ছিল এদেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় কলাম । ১৯৮৫ সালে জনাব আলম ইত্তেফাকের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক নিযুক্ত হন। এই সময়ে ইত্তেফাক দেশে শীর্ষস্থানীয় পত্রিকায় পরিণত হয়। ১৯৯২ সালে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনের জন্য জনাব আলম বাহরাইন গমন করেন এবং ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত যােগ্যতার সাথে এই দায়িত্ব পালন। করেন। ইতিমধ্যে দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ঘটে। তিনি রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব ত্যাগ করে পুনরায় সংবাদিকতা পেশায় ফিরে আসেন এবং দৈনিক দিনকালের সম্পাদক হিসাবে কাজ শুরু করেন। পরে ২০০১ সালের ১লা জানুয়ারী উপদেষ্টা সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করে তিনি পুনরায় দৈনিক ইত্তেফাকে যােগদান করেন। সাংবাদিকতা ছাড়াও আখতার-উল্-আলম এক সময়ে নিয়মিত কবিতা, গল্প, উপন্যাস লিখতেন। সাংবাদিকতা জীবনের ফাঁকে ফাঁকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ। অনুবাদের কাজও করেছেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩৩। ব্যক্তিগত জীবনে জনাব আলম জাতীয়তাবাদী আদর্শে অনুপ্রাণিত এবং উদার ইসলামিক ঐতিহ্যে সমর্পিত। পেশাগত জীবনে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ জনাব আলম ডজনাধিক পুরস্কার ও পদক পেয়েছেন। এশিয়ার মধ্যে তিনি অন্যতম ব্যক্তিত্ব যিনি সাংবাদিক হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের নেবরাস্কা স্টেটের অনারারী সিটিজেনশীপ লাভ করেন ১৯৮২ সালে। ২০০০ সালে সউদী আরবের সরকারি পত্রিকা ‘সাউদী গেজেট’ তাঁকে বিশ্বের ‘ফাইভ লিডিং মুসলিম জার্নালিষ্ট'-এর একজন হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান করে। জনাব আলমের স্ত্রী ডাঃ রেজিনা বেগম একজন উপ-সহকারী কমুনিটি মেডিক্যাল অফিসার রেজিনা বেগমের সাড়া জাগানাে পুস্তক ‘দি ম্যান অব দি মিডল ইস্ট ১৯৯৬ সালে লণ্ডনের মিনার্ভা প্রেস কর্তৃক প্রকাশিত হয়। তাঁদের দুই ছেলে এক মেয়ে।