ডাবল পয়েন্ট অর্ডার করলেই! প্রতি ১০০ টাকায় এখন ২০ পয়েন্ট! (১৮-২০ আগস্ট)
১ লাখ টাকার গিফট ভাউচার জেতার সুযোগ! ৫৯৯+ টাকার বই অর্ডারে 'MUJIB' প্রোমোকোড ব্যবহার করলে দৈবচয়নে ৫০ জন সর্বমোট ১ লাখ টাকার গিফট ভাউচার পাবেন। (৩১ আগস্ট, ২০২২ পর্যন্ত)
"তাফসীরে ইবনে কাছীর : ৩য় খণ্ড" বইয়ের গ্রন্থকার পরিচিতি ইমাম হাফিয আল্লামা ইমাদুদ্দীন আবুল ফিদা ইসমাঈল ইবন উমর ইবন কাছীর আলকারশী আল-বাসরী (র) ৭০০ হিজরী মুতাবিক ১৩০০ খ্রিস্টাব্দে সিরিয়ার বসরা শহরে এক সম্ভ্রান্ত শিক্ষিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁহার পিতা শায়খ আবু হাফস শিহাবুদ্দীন উমর (র) সেখানকার খতীবে আযম পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তাঁহার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা শায়খ আবদুল ওহাব (র) সমসাময়িককালে একজন খ্যাতনামা আলিম, হাদীসবেত্তা ও তাফসীরকার ছিলেন। তাঁহার দুই পুত্র যয়নুদ্দীন ও বদরুদ্দীন সেই যুগের প্রখ্যাত হাদীসবেত্তা ছিলেন। মােটকথা, তাহার গােটা পরিবারই ছিল সেকালের জ্ঞান-জগতের উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক স্বরূপ। মাত্র তিন বৎসর বয়সে ৭০৩ হিজরীতে তিনি পিতৃহারা হন। তখন তাঁহার অগ্রজ শায়খ আবদুল ওহাব তাহার অভিভাবকের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হন। ৭০৬ হিজরীতে তাঁহার অগ্রজের সহিত বিদ্যার্জনের জন্য তিনি তৎকালীন শ্রেষ্ঠতম শিক্ষাকেন্দ্র বাগদাদে উপনীত হন। তাঁহার প্রাথমিক শিক্ষাপর্ব জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা শায়খ আবদুল ওহাবের কাছেই সম্পন্ন হয়। অতঃপর তিনি শায়খ বুরহানুদ্দীন ইবন আবদুর রহমান ফাযারী ও শায়খ কামালুদ্দীন ইবন কাযী শাহবার কাছে ফিকহশাস্ত্র অধ্যয়ন সমাপ্ত করেন। ইত্যবসরে তিনি শায়খ আবূ ইসহাক সিরাজীর ‘আত-তাম্বীহ ফী ফুরাইশ-শাফিঈয়া ও আল্লামা ইবন হাজিব মালিকীর মুখতাসার' নামক গ্রন্থদ্বয় আদ্যোপান্ত কণ্ঠস্থ করেন। ইহা হইতেই তাহার অসাধারণ স্মৃতিশক্তির পরিচয় পাওয়া যায়। খ্যাতনামা হাদীস শাস্ত্রবিদ মুসনিদুদ দুনিয়া রিহলাতুল আফাক ইন শাহনা হাজ্জারের কাছে তিনি হাদীসশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। হাদীসশাস্ত্রে তাঁহার অন্যান্য ওস্তাদ হইতেছেন ? বাহাউদ্দীন ইব্ন কাসিম ইবন মুজাফফার ইব্ন আসাকির, শায়খুয যাহির আফীফুদ্দীন ইসহাক ইবন ইয়াহিয়া আল-আমিদী, ঈসা ইবনুল মুতইম, মুহাম্মাদ ইবন যিয়াদ, বদরুদ্দীন মুহাম্মদ ইবন ইব্রাহীম ইবন সুয়ায়দী, ইবনুর রাযী, হাফিয জামালুদ্দীন ইউসুফ আল-মিযী শাফিঈ, শায়খুল ইসলাম তকীউদ্দীন আহমদ ইবন তায়মিয়া আল-হাররানী, আল্লামা হাফিয কামালুদ্দীন যাহবী ও আল্লামা ইমাদুদ্দীন মুহাম্মদ ইবনুস সিরাজী। তন্মধ্যে তিনি সর্বাধিক শিক্ষালাভ করেন ‘তাহযীবুল কামাল প্রণেতা সিরিয়ার মুহাদ্দিস আল্লামা হাফিয জামালুদ্দীন ইউসুফ ইবুন আবদুর রহমান মিযী আশ-শাফিঈ (র) হইতে। পরবর্তীকালে তাঁহারই কন্যার সহিত তিনি পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। অতঃপর বেশ কিছুকাল তিনি শ্বশুরের সান্নিধ্যে থাকিয়া তাঁহার রচিত ‘তাহযীবুল কামাল’ ও অন্যান্য হাদীস সংকলন অত্যন্ত নিষ্ঠার সহিত গভীরভাবে অধ্যয়ন করেন। ফলে হাদীসশাস্ত্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁহার অগাধ পাণ্ডিত্য অর্জিত হয়। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবন তায়মিয়া (র)-এর সান্নিধ্যেও তিনি বেশ কিছুকাল অধ্যয়নরত ছিলেন। তাঁহার নিকট তিনি বিভিন্ন জ্ঞানে ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। তাহা ছাড়া মিসরের ইমাম আবুল ফাতাহ দাবুসী, ইমাম আলী ওয়ানী ও ইমাম ইউসুফ খুতনী তাঁহাকে মুহাদ্দিস হিসাবে স্বীকৃতি দান পূর্বক হাদীসশাস্ত্র অধ্যাপনার অনুমতি প্রদান করেন।
আল্লামা ইবনে কাছীর রহ. এর জন্ম ১৩০১ খ্রিস্টাব্দে বসরার (বর্তমান সিরিয়া) মামলুক সালতানাতে। তার পুরো নাম ইসমাঈল ইবন উমর ইবন কাসীর ইবন দূ ইবন কাসীর ইবন দিরা আল-কুরায়শী হলেও তিনি ইবনে কাছীর নামেই সমধিক পরিচিত। তিনি কুরায়েশ বংশের বনী হাসালা গোত্রের সন্তান। তার জন্মস্থান এবং জন্ম তারিখ নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। তার শিক্ষাজীবন এবং শৈশব নিয়েও খুব বেশি তথ্য জানা যায় না। তবে মামলুক সালতানাতেই তিনি বড় হয়েছেন, এ ব্যাপারে ইতিহাসবিদগণ নিশ্চিত। কৈশোরে তিনি ফিরিঙ্গীদের যুদ্ধ, ক্রুসেড, তাতারদের আক্রমণ, শাসকদের অন্তর্কোন্দল, বিদ্রোহ করে ক্ষুদ্র রাজ্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াস, দুর্ভিক্ষে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণহানির মতো যাবতীয় দুর্যোগ আর দুর্দশা দেখে দেখে বড় হয়েছেন। কর্মজীবনে ইবনে কাছীর রহ. উন্মুসসা’ ওয়াত তানাকুরিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। কুরআন, হাদিস, তাফসির, ইতিহাস, গণিত সহ জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় তিনি বিচরণ করেন। শায়খ তকী উদ্দী (রহঃ), উস্তাদ হাজরী (রহঃ), ইবনুল কালানসী (রহঃ) প্রমুখ প্রবাদত্যুল্য শিক্ষকের সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন। পরবর্তীতে নিজের জ্ঞানের আলোয় তিনি আলোকিত করেছিলেন মধ্যযুগীয় মুসলিম জ্ঞানপিপাসুদের। ১৩৭৩ খ্রিস্টাব্দে দামেস্কে তার মৃত্যু হয়। আল্লামা ইব্নে কাছীর রহ. এর বই সমূহ ইসলামি দর্শন, ফিকহ শাস্ত্র, তাফসির ও ইতিহাস নির্ভর। তার রচিত ‘তাফসিরে ইবনে কাছীর’-এর জন্য তিনি বিশ্বজোড়া সমাদৃত। পবিত্র কুরআনের কাছীরগুলোর মাঝে তার এই গ্রন্থটিই সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য এবং প্রামাণ্য। ১১ খণ্ডে প্রকাশিত ‘তাফসিরে ইবনে কাছীর’, ‘কাসাসুল আম্বিয়া’, ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’, ‘কিতাবুল আহকাম’ সহ বেশ কিছু জ্ঞানগর্ভ বই রয়েছে আল্লামা ইবনে কাছীর রহ. এর বই সমগ্রতে।