ফ্ল্যাপে লিখা কথা আবু জাফর শামসুদ্দীন বাংলা ১৩১৭ সালের ফাল্গুন (মার্চ ,১৯৯১) তৎকালীন ঢাকা জেলার কালীগঞ্জ থানার দক্ষিণবাগ গ্রামে এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩২ সালে তাঁর সাহিত্য জীবনের শুরু। তিনি অসংখ্য গল্প, বেশকিছুসংখ্যক উপন্যাস ,নাটক,মননশীল প্রবন্ধ,ভ্রমণ কাহিনী প্রভৃতি রচনা করেছেন। তাঁর রচিত এবং প্রকাশিত পুস্তকের সংখ্যা তিরিশটির অধিক। তাঁর ১১৫৫ পৃষ্ঠার সুবৃহৎ উপন্যাস ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’ বাংলা সাহিত্যের একটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। উভয় বাংলায় এ গ্রন্থ উচ্চ প্রশংসা অর্জন করে। আবু জাফর শামসুদ্দীনের গল্প ইংরেজেী, জাপানি, হিন্দি ,উর্দূ, মারাঠি প্রভৃতি ভাষায় অনূদিত ও প্রকাশিত হয়েছে।উপমহাদেশের একজন প্রথম সারির সাংবাদিক এবং কলামিস্ট রূপে তাঁর খ্যাতি রয়েছে। ১৯৭৫ সাল থেকে দৈনিক ‘সংবাদ’ এ ‘অল্পদর্শী’এই ছদ্মনাম ‘বৈহাসিকের পার্শ্বচিন্তা’ শীর্ষক কলাম মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত নিয়মিত লিখে গেছেন। সাহিত্য এবং সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বিশিষ্ট অবদান রাখার স্বীকৃতি রূপ তিনি বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার ,একুশে পদক ,বেগম জেবুন্নিসা কাজী-মাহবুবুল্লাহগ স্বর্ণপদক , জহুর হোসেন চৌধুরী স্মৃতি স্বর্ণপদক ,সমকাল সাহিত্য পুরস্কার,মুক্তধারা সাহিত্য পুরস্কার, ফিলিপস পুরস্কার (মরণোত্তর) প্রভৃতি লাভ করেন। তিনি সৃজণশীল লেখার পাশাপাশি মানব মুক্তি ও বিশ্ব শান্তির আদর্শে বিশ্বাসী বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন। বাংলা ১৩৯৫ সালের ৭ ভাদ্র(২৪ আগস্ট ১৯৮৮) তিনি পরলোক গমন করেন।
ভূমিকা আবু জাফর শামসুদ্দীনের কোন পুস্তকের ভূমিকা লেখা আমার পক্ষে ধৃষ্টতা মনে হয়। বাংলাদেশের সাংবাদিক-সাহিত্যিক রূপে তাঁর মতো পরিচিত নামের পূর্ণপরিচয় নেহাৎ বাড়তি ব্যাপার। হ্যারিকেনের সাহায্যে কাউকে সূর্য দেখানোর মতো তা হাস্যকর । তবু অনুরোধ পাশে ঠেলে সরিয়ে রাখতে পারিনি। ১৯৭৬। বারো বছর আগেকার কথা। স্বৈরাচারী শাসনের দাপটে ত্রস্ত সারা বাংলাদেশ। প্রতিবাদের টু-শব্দ উচ্চারণেরর এতটুকু সাহস কারো নাই। রাজনীতিবিদগণ খোলে গুটিয়ে গেছেন। শ্বাসরোধী আবহাওয়া। জানালা-কপাট বন্ধ। সেই ক্রান্তিকালে আবু জাফর শামসুদ্দীন এগিয়ৈ এলেন তাঁর নির্ভীক উচ্চারণ নিয়ে। তখন তাঁর বয়স ছেষট্রি বছর।এই প্রৌঢ়জনের বুকে পাটা এত বিস্তৃত হতে পারে ,ভাবা দায়। কিন্তু ইতিহাসে নকিবের দায়িত্ব যাঁরা পালন করেন, বয়সে অত তোয়াক্কা তাঁদের প্রয়োজন হয় না। মৃদুভাষী প্রৌঢ় মানুষটিড ,কিন্তুতাঁর উচ্চারণে দৃঢ়তা ছিল। তাই বৃথা গেল না। ঝিরিঝিরি স্রোত ক্রমশ আশপাশ মাটি সরিয়ে নদীর পথ রচনা করতে লাগল। তেমনিই ব্যাপার ঘটল সেদিন বাংলাদেশে। সময় স্মরণীয় :১৯৭৬ খ্রীস্টাব্দ। কিন্তু আবু জাফর শামসুদ্দীন কেবল সাংবাদিক ছিলেন না। তিনি সাহিত্যিক। লিখেছেন গল্প, উপন্যাস, নাটকও বাদ দেন নি। প্রবন্ধকার রূপে তাঁর খ্যাতিও প্রচুর। রন বক্ষ্যমান গ্রন্থটি আবু জাফর শামসুদ্দীনে আত্নজীবনী। ২৪ আগস্ট ১৯৮৮ তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। আমাদের দূর্ভাগ্য : বর্তমান সঙ্কটকালে তাঁর কণ্ঠস্বরের বড় প্রয়োজন ছিল। আবু জাফর শামসুদ্দীনের সেজ ছেলে আহমেদ পারভেয শামসুদ্দীন প্রয়াত পিতার রচনা জন -সমক্ষে প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়ে গভীর সামাজিক দায়িত্ব সচেতনতার পরিচয় দিয়েছে। সুবাদের জন্যে আমি তাকে ধন্যবাদা দিতে অপরাগ। আমি আশা করি,এই পুস্তক জন-সমাদৃত হবে। শওকত ওসমান
সূচিপত্র
প্রথম খণ্ড * আমার পাঠশালার দিনগুলি * বৃহত্তর ভারতে * পাকিস্তানে