প্ৰসঙ্গত কাল নিরবধি। সেই কালের প্রেক্ষাপটে অনেক সভ্যতা গড়ে উঠেছে। হারিয়েও গেছে। তাই চরম অনুসন্ধিৎসু মন নিয়ে বর্তমান যেমন দুর্বার গতিতে সভ্যতার স্বর্ণরথে চড়ে এগিয়ে চলেছে, তেমনি পেছনের দিগন্তের দিকেও সে আজ পিছু ফিরেছে। কবে এবং কোথায় হয়েছে এই সভ্যতার দিগন্তের শুরু। আর হারিয়ে গেল! এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে মানুষ আজ থমকে দাঁড়িয়েছে। পেছনের দিকে ফিরে তাকিয়েছে। আর তার ফলেই পেছনের দিগন্ত প্রতি বছর বিস্তৃতি লাভ করছে। বিশেষ করে কার্বন ডেটিং পদ্ধতি আবিস্কারের দৌলতে। যখন কার্বন ডেটিং পদ্ধতিটির মাধ্যমে মানুষ প্রতিটি বস্তুর সময়কাল নিরূপণ করতে সমর্থ হয়েছে। আর তাতেই মানুষ আজ স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে সভ্যতার সরু হয়েছে বহু হাজার বছর আগে। হয়তো বা- সভ্যতার রূপ এবং প্রকৃতি তখন বর্তমান সভ্যতার থেকে আলাদা ছিল। বিশেষ করে কার্বন ডেটিং পদ্ধতির আবিষ্কারের পূর্বে মানুষ বিশ্বাস করতো যে সভ্যতার জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল মধ্যপ্রাচ্য থেকে। তা'হলে প্রথম সভ্যতার শুরু কবে এবং কোথা থেকে? কিভাবেই তা ছাড়িয়ে পড়েছিল এই মহাবিশ্বের কোণে কোণে? বলা বাহুল্য এইসব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দেওয়া মানুষের পক্ষে এখনো সম্ভব হয়ে ওঠে নি। কারণ নিত্য নূতন যন্ত্র আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে মানুষও দৃষ্টির অতীতে দৃষ্টি ফেরাতে সক্ষম হচ্ছে। প্রথম সভ্যতার উন্মেষ কোথায় হয়েছিল এবং কি ভাবে সেই সভ্যতা-রশ্মি ছড়িয়ে গড়েছিল মহাবিশ্বে—এই জিজ্ঞাসা আজ সবার। মিশরীয়, সুমেরিয়, ক্রীট, ইটুরিয়া, ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জও এবং সেই সমুদ্রবর্তী অঞ্চলগুলোর সভ্যতার থেকেও প্রাচীন কোন সভ্যতার অস্তিত্ব কি ছিল, যার প্রদীপ থেকে এই সভ্যতাগুলো তাদের আলো আহরণ করে নিজেদের সভ্যতাকে প্রজ্বলিত করেছিল? এমন কি সুপ্রাচীন আমেরিকাতেও সেই ফেলে আসা সভ্যতার দেখা মিলেছে। এইসব প্রশ্নের অস্পষ্টতার কুয়াশায় মাখা অনুচ্চ উত্তর মাঝে মাঝে উঁকি দিয়ে যায় যে পৃথিবীর প্রথম সভ্যতা কি আটলান্টিসের আয়নায় মুখ দেখেছিল ! যা আজও রহস্যজনক ভাবে সমুদ্রগর্ভে নিমজ্জিত। সভ্যতার স্বর্ণখনি এই আটলান্টা কি তবে সভ্যতার শিখরে উঠে সমুদ্রের নীচে সুপ্ত। কে এই প্রশ্নের উত্তর দেবে। আটলান্টার আগেও কি সভ্যতার অস্তিত্ব ছিল—যাদের কাছ থেকে আটলান্টা সভ্যতার প্রদীপ জ্বালিয়ে নিয়েছিল। নাকি আটলান্টার অস্তিত্ব শুধু মানুষের ধারণায়। গ্রীক মহাদার্শনিক প্লেটো প্ৰথম পৃথিবীকে দিয়েছিল এই সভ্যতার খোঁজ। আর সেই সভ্য আটলান্টার খোঁজে হাজার হাজার স্কুবা ডাইভারা পৃথিবীর সমুদ্রতল তোলপাড় করে চলেছে। প্রত্যহ। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে যে পিরামিডের পরিসীমাকে পিরামিডের উচ্চতার দ্বিগুণ দিয়ে ভাগ করলে ফল হয় ৩.১.৪১৬ পাই। হাজার হাজার বছর পরে আসা গ্রীক অঙ্কবিদ্ পাই এর মূল্য নির্ধারণ করেছিল ৩.১৪২৮। পঞ্চাশ পিরামিডিয়াল ইঞ্চি হলো পৃথিবীর দশলক্ষ ভাগের দশমংশের সমান । এখানে বলা বোধহয় অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে প্রাচীন মিশরীয় পণ্ডিতবর্গ পৃথিবীর আয়তন, ওজন ইত্যাদি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানের অধিকারী ছিল। পৃথিবীর আকার সম্বন্ধেও ওদের ধারণা ছিল স্পষ্ট। যারজন্য পুরোহিতরা তাদের ছাত্রদের এই বিষয়ে বিস্তারিত শিক্ষা দিতো। আরো বলা যায় যে পিরামিডের ভূমিক্ষেত্রের পরিসীমার সমান হলো ৩৫৬, ২৪০ পিরামিডিয়াল ইঞ্চি অর্থাৎ আমাদের বর্তমান বছরের দিনগুলোর সমষ্টি। পিরামিডের উচ্চতাকে ১,০০০,০০০,০০০ দিয়ে গুণ করলে পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব পাওয়া যাবে। বিশেষ করে জল বিষুবের দিন। অর্থাৎ ২৩ সেপ্টম্বর, যেদিন দিন এবং রাত সমান। পিরামিডের ওজনকে ট্রিলিয়ান দিয়ে গুণ করলে পৃথিবীর ওজন পাওয়া সম্ভব। এবং ভূমিক্ষেত্রের পরিসীমাকে দ্বিগুণ করলে বিষুবরেখার ডিগ্রীর এক অতি ক্ষুদ্রাংশের হদিশ মেলে। এখনো পিরামিড নির্মাণের জটিল অঙ্ক শাস্ত্রের সব হিসেব মেলে নি। ভেতরের সমাধিগুলো, রাস্তা ইত্যাদিও নিশ্চয়ই অঙ্ক বা জ্যোর্তিবিজ্ঞানের কোন না কনো ফাঁদে জড়িয়ে রয়েছে। যাইহোক এই ফেলে-আসা-সভ্যতাগুলো নিয়ে কিন্তু মানুষের চিন্তা এক জায়গায় থেমে নেই। নিরন্তর গতিতে এগিয়ে চলেছে। একমাত্র আটলান্টা নিয়ে গবেষণামূলক বই লেখা হয়েছে পাঁচ হাজারের ওপরে। অন্যান্য সভ্যতাগুলো নিয়েও কম বই লেখা হয় নি। এই বইয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ কোন নির্দিষ্ট গ্রন্থের বদলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন বই এবং প্রকাশিত প্রবন্ধের সাহায্য যে নিয়েছি—সেকথা বলা বাহুল্য। মূল উদ্দেশ্য কিন্তু একটাই। পাঠক এবং পাঠিকাদের দৃষ্টি যাতে ফেলে আসা দিগন্তের দিকে নিবদ্ধ হয় ।