*শবে কদরের গুরুত্ব ও ফযীলত* প্রাচীনকালের লোকেরা লম্বা লম্বা 'হায়াত' পেত, আর সেই দীর্ঘ জীবনে বহু বাদত করার সুযোগ তারা লাভ করত। আগেকার জমানার মানুষের তুলনায় আমাদের আয়ু অনেক কম বিধায় আমরা তাদের মত অধিক ইবাদত করার সুযোগ পাইনা। অথচ আমরা ইবাদতের দিক হতে অন্যান্য উমতের তুলনায় পশ্চাতে থাকি, তা মাওলার ইচ্ছা নয়। সে জন্য তিনি দয়া করে আমাদেরকে এমন কতকগুলি উপলক্ষ দান করেছেন, যেগুলিতে খাটি অন্তরে অল্প ইবাদত করেই আমরা শত শত বছর আয়ুপ্রাপ্ত ইবাদত গোজার লোকদের সমান বরং তাদের চেয়ে বেশী নেকী হাসিল করতে। পারি। ঐ সমস্ত উপলক্ষের অন্যতম হল শবে কদর। এই রাত্রির ফযীলত ও বরকত অসাম। কুরআন মাজীদেও সূরাতুল ক্বাদরে আল্লাহ জাল্লাশানহু ইরশাদ করেনঃ- لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِنْ الْفِ شَهْرٍ অর্থাৎ লাইলাতুল ক্বদর রজনীটি এক হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্ত ‘মাযাহিরে হক' নামক কিতাবে বর্ণিত আছে যে, এই রাত্রিতে ফেরেশতাদে সৃষ্টি করা হয়েছিল, এই রাত্রিতে হযরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করার জ মূল উপাদানগুলি একত্র করা হয়েছিল, এই রাত্রিতে বেহেশতের বাগি সমূহের প্রথম বৃক্ষ রোপন করা হয়েছিল, এই রাত্রিতে হযরত ঈসা (আ.)কে আসমানে তুলে নেওয়া হয় এবং এই রাত্রে ব্যাপকহারে আল্লাহর দরবারে হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, হযরত রাসূলে পাক (সাঃ) ইরশাদ إذَا كَانَ لَيْلَةُ الْقَدْرِ نَزَلَ جِبْرَئِيلُ فِي كَبُكَبَةِ مِنَ الْمَلَائِكَةِ يُصَلُّونَ عَلَى كُلِّ عَبْدٍ করেছেন- বান্দাদের নেক দোয়া কবুল হয়। قَائِمٍ أَوْ قَاعِدِ يَذْكُرُ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ অর্থাৎ, “শবে ক্বদরে হযরত জিবরাঈল (আঃ) ফেরেশতাদের একটি। জমিনে অবতরণ করেন এবং যে সকল বান্দা বান্দি দাঁড়ানো কিংবা ব অবস্থায় আল্লাহর যিকিরে মশগুল থাকেন, তাদের কল্যাণের জন্য তারা দোয়া করে থাকেন। হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত অপর এক হাদীসে আছে, হযরত রাসূল (সাঃ) বলেছেন- وَفِيهِ لَيْلَةٌ خَيْرٌ مِنْ الْفِ شَهْرٍ مَنْ حَرَّمَهَا فَقَدْ حَرَّمَ الْخَيْرَ كَلَّهَا وَلَا يَحرَمُ خَيْرَهَا إِلا الْمَحْرُوم অর্থাৎ- “রমযান মাসে এমন ফযীলত বিশিষ্ট একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাস অপেক্ষা উৎকৃষ্ট। যে ব্যক্তি ঐ রাত্রির “খায়ের ও বরকত” হতে মাহরূম থাকে, সে সমুদয় কল্যাণ হতে বঞ্চিত থাকল। বস্তুতঃ নিতান্ত হতভাগ্য ছাড়া কেহই এই রাত্রির কল্যাণ হতে বঞ্চিত থাকে না।
হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী, ভারতীয় উপমহাদেশ এবং এর গন্ডি পেরিয়ে যিনি হাজারো মানুষকে দিয়েছেন আত্মশুদ্ধি ও তাসাওউফ এর শিক্ষা। যার কারণে তাঁর উপাধি ছিলো ‘হাকীমুল উম্মাত’ বা উম্মাহর আত্মিক চিকিৎসক। উপমহাদেশে মুসলমানদের মাঝে সুন্নতের জ্ঞান প্রচারে তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংস্থা ‘দাওয়াতুল হক’ এর অবদানের জন্যও প্রসিদ্ধ মাওলানা আশরাফ আলী থানভীর নাম। মাওলানা আশরাফ আলী থানভী ১৯ আগস্ট, ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে (রবিউস সানী ৫, ১২৮০ হিজরী) ভারতের উত্তর প্রদেশের থানাভবনে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবেই হাফেয হোসাইন আলী রাহ.-এর কাছে সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্থ করার মধ্য দিয়ে শুরু হয় তাঁর শিক্ষাজীবন। নিজগ্রামেই ছোটবেলায় হযরত মাওলানা ফতেহ মুহাম্মদ থানভী রাহ.-এর কাছ থেকে আরবি ও ফার্সি ভাষার প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। ১২৯৫ হিজরীতে তিনি দারূল উলুম দেওবন্দে ভর্তি হন ইসলামি জ্ঞান-বিজ্ঞানের উচ্চতর শাখাগুলোয় বিচরণ করার আগ্রহে। সেখানে তিনি পাঁচ বছর হাদীস, তাফসীর, আরবি সাহিত্য, ইসলামী দর্শন, যুক্তিবিজ্ঞান, ইসলামি আইন এবং ইতিহাস বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। দেওবন্দে শিক্ষার অধ্যায় সমাপ্ত করে মক্কা মুকাররমায় মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ্ মুহাজিরে মক্কীর কাছে কেরাত ও তাজবীদ শেখেন। তিনি কানপুরের একটি মাদ্রাসায় মাত্র ২৫ টাকা বেতনে শিক্ষকের পদ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে কানপুরের টপকাপুরে জামিউল উলূম মাদ্রাসার প্রধান পরিচালকের আসন অলংকৃত করেন এবং দীর্ঘ ১৪ বছর সেখানে শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীতে তাঁর শিক্ষক হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কীর রহ. পরামর্শে তিনি থানা ভবনের খানকাহে ইমদাদিয়ায় অবস্থান গ্রহণ করেন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। সারা জীবনে আশরাফ আলী থানভী এর সকল বই এর হিসেব করতে গেলে ছোট-বড় মিলিয়ে তা সাড়ে বারো হাজার ছাড়িয়ে যায়। হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. এর বই সমূহ এর মধ্যে ফিকাহ বিষয়ক বই ‘বেহেশতী জেওর’ উপমহাদেশের মুসলমানদের মাঝে বহুল পঠিত। এছাড়া তাঁর রচিত কুরআন শরীফের উর্দু তরজমার গ্রন্থ বয়ানুল কুরআনও (কুরআনের ব্যাখ্যা) এর ভাষা ও ব্যখ্যাশৈলীর জন্য প্রসিদ্ধ। হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. এর বই সমগ্র এর স্বত্ত্ব তিনি জাতির কল্যাণে উন্মুক্ত করে রেখে গেছেন। জুলাই ১৯, ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে (১৬ রজব, ১৩৬২ হিজরী) আল্লামা থানভী রহ. তাঁর জন্মস্থান থানা ভবনেই মৃত্যুবরণ করেন।