এ. জেড. এম. শামসুল আলম ১৯৩৭ সালে কুমিল্লা জেলার বরুড়া থানাধীন আদ্রা গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মরহুম আব্দুল গফুর চৌধুরী। জনাব শামসুল আলম ১৯৫২ সালে পূর্ববাংলা মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে কৃতিত্বের সাথে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৪ সালে ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বিভাগে পাস করেন। অতঃপর ১৯৫৭ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বি.এ অনার্স ও ১৯৫৮ সালে এম.এ ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৭২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের উইলিয়াম কলেজ থেকে M.A.in development (Eco.) ডিগ্রী অর্জন করেন। কর্মজীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও দারুল এহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের মেম্বর, সিনেট ও সিন্ডিকট সদস্য ছিলেন। সিভিল সার্ভিসে যোগদানের পূর্বে ১৯৬৩ সালে তিনি যথাক্রমে ঢাকা কলেজ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক ছিলেন। ১৯৬৩ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তাঁর চাকরি জীবনে তিনি বাংলাদেশ সরকারের এসডিও, এডিসি, উপ-সচিব, যুগ্ম-সচিব ও সচিব পর্যায়ে ৩০টি পদে চাকরি করেন। এছাড়া বহু আন্তর্জাতিক সম্মেলনসমূহে তিনি অংশগ্রহণ করেন। যেমন- ১. খাদ্য ও কৃষি সম্মেলন (FAO) রোম, ১৯৭৭ ২. বিশ্ব খাদ্য সম্মেলন, ম্যানিলা, ফিলিপাইন, ১৯৭৭ ৩. আন্তর্জাতিক মুসলিম শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্মেলন, ঢাকা, ১৯৮০ ৪ . তৃতীয় বিশ্বের ইসলামিক সম্মেলন, ঢাকা, ১৯৮১ ৫. আন্তর্জাতিক কুরআন সম্মেলন, ক্যানবেরা, অস্ট্রেলিয়া, ১৯৮১ ৬. ইসলামে মানবাধিকার (সচিব পর্যায়ের) সম্মেলন, জেদ্দা, ১৯৮১ ৭. ‘সর্বজনীন ইসলাম'-এর উপর আন্তর্জাতিক সেমিনার, শ্রীলংকা ১৯৮২ ৮. ১৯৮১ সালে ইরাকে অনুষ্ঠিত রেভ্যুলেশনারি সেলিব্রেশন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে জনাব শামসুল আলম বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেন । জনাব শামসুল আলম শিক্ষা সফরের উদ্দেশ্যে নিম্নোক্ত দেশ ও প্রতিষ্ঠানসমূহ পরিদর্শন করেন। যেমন- ১. ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কৃষি প্রকল্প পরিদর্শনকারী দলের প্রধান হিসেবে (১৯৯৫-১৯৯৬) সালে দশ দিনের ইন্দোনেশিয়া সফর করেন। ২. BPATC এর প্রতিনিধি দলের প্রধান হিসেবে ১৯৯০ সালে দু'সপ্তাহকাল আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় এবং মিশর সফর করেন। ৩. ১৯৬৮ সালে ইরানের কৃষি প্রকল্প পরিদর্শন করেন। ৪. ১৯৯৪ সালে ব্যাংককে অবস্থিত এশিয়ান উন্নয়ন ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করেন। ১৯৭৮ সালে ২ সপ্তাহের জন্য মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুর শিক্ষা ভ্রমণ করেন। ব্রিটিশ কাউন্সিলের ভিজিটরশীপ প্রোগ্রামের অধীনে তিনি ইংল্যান্ডের হেনলি ম্যানেজমেন্ট কলেজ, বার্মিংহাম স্থানীয় সরকার শিক্ষা ইনস্টিটিউট, অক্সফোর্ডের টেমপটন কলেজ, ব্রাইটনের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের জনশক্তি শিক্ষা ইনস্টিটিউট, ব্রেডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিকল্পনা কেন্দ্র, বার্কসায়ারের সিভিল সার্ভিস কলেজ, ইংল্যান্ডের উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডনের রয়েল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (RIPA) পরিদর্শনসহ সম্প্রতি ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। আন্তর্জাতিক পরিদর্শন কার্যক্রমের আওতায় তিনি ১৯৮৩ সালে এক মাস আমেরিকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও শহর পরিদর্শন করেন। একই সালে সাউথ বেন ইন্ডিয়ানায় অবস্থিত নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয় (U.S.A) পরিদর্শন করেন। ১৯৮১ সালে তুর্কি, জর্ডান, মরক্কো ও তিউনিসিয়ায় পরিবার পরিকল্পনার ধারণা ও চর্চার উপর USIAD- এর স্পন্সরকৃত শিক্ষা সফর কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন। ইসলামী শিক্ষা, ইসলামী অর্থনীতি, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স প্রভৃতি বিষয় সংক্রান্ত বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের বিভিন্ন সেমিনারে তিনি অংশগ্রহণ করেন । তিনি শিক্ষা, গবেষণা, সেমিনার-সম্মেলন প্রভৃতি উদ্দেশ্যে তিনি বিশ্বের প্রায় ৪২টি দেশ ভ্রমণ করেন। তিনি ইসলামী একাডেমী পূর্ববঙ্গ, বাংলা একাডেমী, নজরুল একাডেমী, আবুজর গিফারী (রা) সোসাইটি, এশিয়াটিক সোসাইটি, ইসলামিক লাইব্রেরি এসোসিয়েশন ও মসজিদ সোসাইটি বাংলাদেশের আজীবন সদস্য। তিনি বাংলাদেশের বহু ইসলামী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা এবং উপদেষ্টা । জনাব শামসুল আলম ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালনকালে গৃহীত প্রকাশনা প্রকল্প, বিশ্বকোষ প্রকল্প, ইমাম প্রশিক্ষণ প্রকল্প, ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রকল্প ও মসজিদ পাঠাগার প্রকল্প ইত্যাদি ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন। তার প্রচেষ্টায় আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ইসলামী কমার্শিয়াল ইনস্যুরেন্সসহ বহু সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়।