‘মানবজনম’ বইয়ের ফ্ল্যাপের কথাঃ .... হেমার খুব বাসায় যেতে ইচ্ছে করে। তারপর তার সেই একলার বারান্দাটায় চুপচাপ বসে থাকতে ইচ্ছে করে। সজনে গাছগুলো কি পাতা ছেড়েছে? ঝুম বৃষ্টিতে সেই পাতাগুলো এখন নিশ্চয়ই গাঢ় সবুজ হয়ে উঠেছে। হেমার বুকের ভেতরটা কেমন তড়পায়। এত ভেবেও নিজেকে কেন সে অনুভূতিহীন করতে পারে না? মানুষ এমন কেন? একটা পাতার জন্য, একটা ফুলের জন্য, এক ফোঁটা শিশিরের জন্য, একটা কল্পনার নদী, খানিক মেঘ, একটা পাহাড়, খানিক বৃষ্টি, খানিক স্মৃতি, খানিক স্পর্শ কিংবা ভুলে যাওয়া একটা গোটা মানুষের জন্যও কেন তার মন কেমন করে! মানুষ হয়ে জন্মানোর এই এক কষ্ট! সকলই কেমন বুকের ভেতর ডুবে ডুবে লুকিয়ে থাকে। তারপর সুযোগ পেলেই ভেসে ভেসে ওঠে। তারপর বানের জলের মতন সকল কিছু ভাসিয়ে দেয়। ভূমিকা আমি বিস্তৃত পরিসরে গল্প বলতে পছন্দ করি। এ কারণেই আমার উপন্যাসগুলোর দৈর্ঘ্যও বড় হয়। মজার বিষয়, এই উপন্যাস লেখার সময় প্রায়ই নানাজন বিভিন্নভাবে আমাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আচ্ছা আপনার এবারের উপন্যাসের ঘটনা কী? কী কাহিনি নিয়ে লিখছেন? বিষয়বস্তু কী? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আমি খানিকটা থমকে যাই। আসলেই তো, আমার উপন্যাসের কাহিনি কী? বিষয়বস্তু কী? আমি প্রশ্নকর্তাকে বিনয়ের সাথে বলি, ‘আমি এখনও জানি না, আমার উপন্যাসের কাহিনি কী? তিনি সরু চোখে আমার দিকে তাকান। তারপর বলেন, আপনি একটা উপন্যাস লিখছেন, আর আপনিই জানেন না উপন্যাসের কাহিনি কী? কেমন লেখক আপনি? তার এই কথায় আমি দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে যাই। আসলেই তো! কেমন লেখক আমি? যে লেখক উপন্যাস শেষ হওয়ার আগপর্যন্ত জানেন না, উপন্যাসের কাহিনি কী? ঘটনা কোনদিকে মোড় নিবে? কেন্দ্রীয় চরিত্র কোনটি? এ কেমন লেখক? এ এক রহস্যময় ব্যাপার। এই নিয়ে আমি অনেক ভেবেছিও। ভেবে ভেবে এই রহস্যের কূল-কিনারা করতে পেরেছি। আমার মনে হয়, আমি আসলে আগেভাগে, ভেবেচিন্তে, বড় কোনো প্লট মাথায় নিয়ে, উপন্যাসের শেষ হবে কীভাবে তা সুনির্দিষ্টভাবে ভেবে, গভীর চিন্তাভাবনা করে, প্রস্তুতি নিয়ে লিখতে পারি না। আমি লিখি একদম হুটহাট। হয়তো হঠাৎ করেই একটা নাম চলে এলো আমার মাথায়, কিংবা কোনো একটা শব্দ গেঁথে গেল মনে, কিংবা কোনো একটা ছোট্ট পঙক্তি। আমি সেই সামান্য শব্দ, নাম, বা ছোট্ট পঙক্তি থেকেই শত শত পৃষ্ঠার উপন্যাস লিখে ফেলি। বিষয়টা অনেকটা সামান্য বীজ থেকে ডালপালা ছড়ানো বিশাল বৃক্ষের জন্মের মতো। ছোট্ট এক দানা থেকে যেমন মহীরুহ হয়, ঠিক তেমন। তবে পার্থক্য একটাই, শিমুল তুলোর বীজ থেকে যেমন শিমুল গাছ হয়, তাল গাছ হয় না, আমার....
স্নাতকোত্তর, নৃবিজ্ঞান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। সাদাত হোসাইন নিজেকে বলেন গল্পের মানুষ। তাঁর কাছে চারপাশের জীবন ও জগত, মন ও মানুষ সকলই গল্প। তিনি মনে করেন, সিনেমা থেকে পেইন্টিং, আলোকচিত্র থেকে ভাস্কর্য, গান থেকে কবিতা- উপন্যাস-নাটক, সৃজনশীল এই প্রতিটি মাধ্যমই মূলত গল্প বলে। গল্প বলার সেই আগ্রহ থেকেই একের পর এক লিখেছেন- আরশিনগর, অন্দরমহল, মানবজনম, নিঃসঙ্গ নক্ষত্র, নির্বাসন, ছদ্মবেশ, মেঘেদের দিন ও অর্ধবৃত্তের মতো তুমুল জনপ্রিয় উপন্যাস। ‘কাজল চোখের মেয়ে’, তোমাকে দেখার অসুখ'সহ দারুণ সব পাঠকপ্রিয় কবিতার বই। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বোধ, দ্য শুজ, প্রযত্নের পাশাপাশি' নির্মাণ করেছেন 'গহীনের গান' এর মতো ব্যতিক্রমধর্মী পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রও। জিতেছেন জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রকার পুরস্কার, এসবিএসপি-আরপি ফাউন্ডেশন সাহিত্য পুরস্কার, পশ্চমিবঙ্গের চোখ সাহত্যি পুরস্কার, শুভজন সাহিত্য সম্মাননা ও এক্সিম ব্যাংক- অন্যদিন হুমায়ূন আহমদে সাহিত্য পুরস্কার ২০১৯। তাঁর জন্ম ১৯৮৪ সালের ২১ মে, মাদারীপুর জেলার, কালকিনি থানার কয়ারিয়া গ্রামে।