শ্রীচৈতন্যদেব ২০০৪ সালে বিবিসি-র সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি যে বিশজনের নাম নির্বাচিত হয়েছিল তাঁদের মধ্যে শ্রীচৈতন্যদেবের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি। প্রধানত ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত থাকাতেই একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক মানুষ কর্তৃক তার অবদান খানিকটা হলেও অগ্রাহ্য হবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মজার বিষয় হলাে বাঙালির গত সহস্র বছরের ইতিহাসে অন্যতম যে মানুষটি ব্যক্তিজীবনের সকল ধর্মীয় সংস্কারকে ভেঙে ফেলতে পেরেছিলেন, সমাজের বিরাট অংশকে আলােড়িত করেছিলেন এক দশক ধরে, যে আলােড়নের ঢেউ পরের দুই শতক জুড়ে বাংলার সীমানা ছাড়িয়ে অবাঙালি প্রান্তরেও আছড়ে পড়েছিল সেই মহামানব হলেন শ্রীচৈতন্যদেব। বিশ শতকের পুরােটা জুড়ে তার হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র শান্তির বার্তা পৌঁছেছে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে। আর তাই ভারতবর্ষের সীমানার বাইরে যে কোনাে বড় শহরে বাঙালি যে মানুষটি পরিচিত তিনি হলেন শ্রীচৈতন্যদেব। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে একই তলে বিবেচনা করার ঔদ্ধত্য নিয়ে আর কোনাে বাঙালি সম্ভবত জন্মগ্রহণ করেননি। বাংলা ভাষায় রচিত সাহিত্য, বাংলাভাষী অঞ্চলে প্রচারিত সংগীত ও নৃত্যে শ্রীচৈতন্যের বিশাল অবদানের কথা নতুন নতুন প্রজন্মে বাঙালি স্মরণ করতে বাধ্য। তবে তার শ্রেষ্ঠত্ব সম্ভবত ছিল তার নেতৃত্বগুণ এবং সাংগঠনিক দক্ষতায়। শ্রীচৈতন্যদেবের জীবন ও কর্ম নিয়ে একবিংশ শতাব্দীর নতুন প্রজন্মের লেখকের মূল্যায়ন পাঠককে নতুন করে এই যুগপুরুষকে জানতে সহায়তা করবে বলেই বিশ্বাস।
ধর্মীয় আচারে একনিষ্ঠ না হলেও হিন্দুধর্মের ইতিহাস ও দর্শনে আগ্রহী সুব্রত কুমার দাসের জন্ম বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার কামারখালীতে, ১৯৬৪ সালের ৪ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে সম্মানসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর অধ্যাপনা করেছেন বিভিন্ন কলেজে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও সাহিত্য পড়িয়েছেন কয়েক বছর । সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন ব্র্যাকের প্রধান কার্যালয়ে। ১৯৯২ সাল থেকে লেখালেখির সাথে যুক্ত সুব্রত’র গ্রন্থসংখ্যা ছাব্বিশ । ২০০৩ সাল থেকে বাংলাদেশের উপন্যাস নিয়ে ওয়েবসাইট বাংলাদেশি নভেলস্ (bdnovels.org) নিয়ে কাজ করে চলেছেন। তার আগ্রহের বিষয় প্রকাশিত গ্রন্থের শিরােনাম থেকেই স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায়: আমার মহাভারত (২০১৪), নজরুল-বীক্ষা’ (২০১৩), রবীন্দ্রনাথ: ইংরেজি শেখানাে’ (২০১২), রবীন্দ্রনাথ : কম-জানা, অজানা (২০১১), বাংলা কথাসাহিত্য: যাদুবাস্তবতা এবং অন্যান্য (২০০২) ইত্যাদি। গ্রন্থের সম্পাদিত মধ্যে রয়েছে: ‘সেকালের বাংলা সাময়িকপত্রে জাপান’ (২০১২), অগ্রন্থিত মােজাফফর হােসেন (২০১১), ‘কোড়কদী একটি গ্রাম’ (২০১১) ইত্যাদি। অনুবাদ গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে : Rabindranath Tatore: India-Japan Cooperation Perspectives (২০১১), Kazi Nazrul Islam : Selected Prose (২০০৪) ইত্যাদি। সুব্রত কুমার দাসকে নিয়ে প্রকাশিত দুটি গ্রন্থ হলাে : ‘সুবর্ণ জন্মজয়ন্তী : সুব্রত কুমার দাস (২০১৪, সম্পাদক: বরুণ কুমার বিশ্বাস) এবং তিনি এবং আমরা' (২০১৩, লেখক: রাজিউল হাসান)।। ২০১৩ সাল থেকে সুব্রত সপরিবার টরন্টোতে বসবাস করছেন।