‘দেখা আলো না দেখা রূপ’ বইয়ের সামারি: পড়ার বইয়ের সমস্যা হচ্ছে সেটা নির্দিষ্ট গ্রুপের মানুষ ছাড়া পড়তে পারে না। এই বইটার এখানেই সবচেয়ে বেশি মজা, বইটি যদিও পড়ার বইয়ের উপর তবুও এতো সুন্দর করে লেখা ও মজা করে লেখা যে যে কেউ পড়তে পারবে। বইটি মূলত ১০-১৬ বছরের সবার জন্য খুবই উপযোগী। বইটিতে আলো নিয়ে সব আলোচনা করা হয়েছে। সাথে সবচেয়ে উপকারি প্রত্যেকটা টপিকের সাথে ১/২ টা বাস্তবিক উদাহরণ আছে। এবং এক্সপেরিমেন্ট গুলো এতো সহজ যে কেউ খুবই সাধারন কম্পোনেন্ট দিয়ে বানাতে পারবেন। যে কোন ধরনের বিজ্ঞান প্রতিযোগিতার জন্য বেশ কাজের একটা বই। যারা নবম দশম বা একাদশ দ্বাদশেও এসে আলো নিয়ে বুঝতে সমস্যা হয় তাঁরা পড়তে পারে, এখানে বেসিক বিষয় গুলো সুন্দর করে ও চিত্র সহ দেয়া আছে। ‘দেখা আলো না দেখা রূপ’ বইয়ের সূচীপত্র: * আলো ০৭ * আলোর বেগ ০৮ * আলো ও আইনস্টাইনের তত্ত্ব ১০ * আলো সরল রেখায় যায় ১৪ * প্রতিফলন ১৭ * প্রতিসরণ ২১ * বিশোষণ ২৯ * পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন ৩৩ * লেন্স ৩৮ * লেন্সের ব্যবহার ৪৫ * আলো ও তরঙ্গ 8৯ * বর্ণালী ৫৬ * আলোর ব্যতিচার ৬১ * আলোর অপবর্তন ৬৭ * আলোর বিক্ষেপণ ৭০ * অনুপ্ৰস্থ ও অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ ৭৩ * পোলারায়ণ ৭৬ * চোখ ৮০ * রঙ ৮৭ * চোখের অন্য ব্যবহার ৯৪ * দেখা, দেখে না দেখা, না দেখে দেখা ৯৯ * আলোর উৎস ১০২ * পরিশিষ্ট ১০৪
কেন আমরা আলোর ঝলক বিজ্ঞানবাক্সটি তৈরি করেছি? আগে সোহমের গল্প শুনুন! ক্লাশ ওয়ানে পড়া এই শিশুটি এখনই আলোর প্রতিফলনের সূত্র ভালোভাবে বুঝে গেছে পেরিস্কোপের এক্সপেরিমেন্ট করে। তার ভাবনার জগৎটা কতখানি সমৃদ্ধ হলো ভেবে দেখেছেন?
আমরা চাই আমাদের শিশুদের ভাবনার জগৎটা রঙিন হোক। আলোর প্রতিফলন, প্রতিসরণ, বিচ্ছুরণের মত কঠিন কঠিন তত্ত্বগুলো যে আসলে খুব মজার বিষয় এ কথাটি যখন একটি শিশু জানতে পারবে তার নিশ্চয়ই আনন্দের সীমা থাকবে না! এই যে সোহম শিখে গেছে পেরিস্কোপের আয়নাগুলো ৪৫ ডিগ্রি কোণে মুখোমুখি বসালে যে দৃশ্যসীমার বাইরের বস্তু দেখা যায়, বড় হলে সে তো ফিজিক্স বইয়ের আলোর অধ্যায়টি হাসতে হাসতে শিখে যাবে। নিউটনের বর্ণ চাকতির এক্সপেরিমেন্ট করে জেনে গেছে মৌলিক রঙ কাকে বলে, কীভাবে এক রঙের সাথে আরেক রঙ মিশিয়ে নতুন রঙ তৈরি করা যায়। বিজ্ঞান শিক্ষা তাঁর কাছে এখন সহজ আর আনন্দময়!
কী কী আছে আলোর ঝলকে? ছিদ্রযুক্ত কাগজ, মোমবাতি, কার্ডবোর্ড, পিনহোল ক্যামেরা বক্স, বাউন্সিং বল, আয়না, পেরিস্কোপ বক্স, ক্যালাইডোস্কোপ বক্স, ফ্ল্যাশ লাইট, স্ট্রোবোস্কোপ, মোটর, উত্তল লেন্স, ব্যাটারি এবং কেসিং, বর্ণ চাকতি এবং মজার চশমা। এছাড়াও সংগ্রহ করে নিতে হবে রঙিন কাপ, গ্লাস, বাটি, প্লাস্টিক বোতল, পেন্সিল ইত্যাদি।
কী কী করা যায় এগুলো দিয়ে? আলোর বিভিন্ন তত্ত্ব, যেমন প্রতিফলন, প্রতিসরণ ইত্যাদি সূত্র ব্যবহার করে মোট ২৫টি এক্সপেরিমেন্ট করা যায়। যেমন, আগুন ছাড়াই কাগজ জ্বালানো, অদৃশ্য কয়েন আবিষ্কার করা, আয়না দিয়ে রংধনু তৈরি করা, পেরিস্কোপের সাহায্যে দৃষ্টিসীমার বাইরের দৃশ্য দেখা, ক্যালাইডোস্কোপের বর্ণিল জগতে ঢুকে পড়া, আলোকে বলের মত বাউন্স দেয়া, স্ট্রোবোস্কোপ দিয়ে দুনিয়া দেখা, লেজার লাইট দিয়ে তরল আলো তৈরি করা, জাল টাকা ধরা ইত্যাদি!
ক্যালাইডোস্কোপ, পেরিস্কোপ, স্ট্রোবোস্কোপ এসব অদ্ভুত জিনিস কোথায় পাবে? কোথায় আবার! আলোর ঝলকে! দেখে নাও আলোর ঝলকের উপকরণগুলি।
আলো কীভাবে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে? বাতাস থেকে পানিতে যাবার সময় আলো বেঁকে যাওয়ার ফলে কী হয়? আলো কীভাবে বলের মত বাউন্স খায়? এমন মোট ২৫টি মজার এক্সপেরিমেন্ট দিয়ে ভরা এক মজাদার বাক্স হলো “আলোর ঝলক”!
বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরী পাঠকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি মূলত এ দেশের একজন বিখ্যাত লেখক, পদার্থবিদ এবং শিক্ষাবিদ। কিশোর সাহিত্য, শিশুতোষ গ্রন্থ, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, গণিত বিষয়ক বই এর জন্য খুব অল্প সময়েই জনপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি। মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৯৫২ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। মুক্তিযোদ্ধা বাবা ফয়জুর রহমানের চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন জেলাতেই তিনি পড়াশোনা করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে পিএইচডি ডিগ্রী অজর্নের উদ্দেশ্যে স্কলারশিপ নিয়ে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। পিএইচডি সম্পন্ন করে ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে বিখ্যাত বেল কমিউনিকেশনস রিসার্চ ল্যাবেও গবেষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৪ সালে দেশে ফিরে এসে তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগ দেন। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সবসময়ই এ দেশের কিশোর-কিশোরীদের কাছে বিশেষ আবেদন নিয়ে হাজির হয়েছে। কিশোর সাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ক অজস্র গ্রন্থ দিয়ে তিনি আলোকিত করে তুলেছেন এদেশের অগণিত কিশোর-কিশোরীর মনোজগত। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সমূহ, যেমন- দীপু নাম্বার টু, আমার বন্ধু রাশেদ, আমি তপু, শান্তা পরিবার, দস্যি ক’জন ইত্যাদি ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পায়। তার বেশ কিছু গল্প পরবর্তীতে নাটক ও চলচ্চিত্র হিসেবে টিভি পর্দায় স্থান করে নিয়েছে। তিনি একজন বিশিষ্ট কলামিস্টও। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডও তাঁর ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সমগ্র সকল বইপড়ুয়াকেই আকৃষ্ট করে। সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বহুবার পুরষ্কৃত হয়েছেন। বাংলা একাডেমি পুরষ্কার (২০০৪) এবং শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হিসেবে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার (২০০৫) সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও, কাজী মাহবুবুল্লা জেবুন্নেছা পদক (২০০২), শেলটেক সাহিত্য পদক (২০০৩), ইউরো শিশুসাহিত্য পদকসহ (২০০৪) অগণিত পুরষ্কার অর্জন করেছেন গুণী এই সাহিত্যিক।