ডারউইন যখন অরিজিন অব স্পিসিস প্রকাশ করেছিলেন, তখন বিকল্প আরেকটি তত্ত্ব ছিল, সেটি হচ্ছে সৃষ্টিতত্ত্ববাদ বা ক্রিয়েশনিজম, জীবনের বৈচিত্র্য ব্যাখ্যা করার জন্য ধর্মবিশ্বাস-প্রসূত যে ব্যাখ্যাটিকে একমাত্র গ্রহণযোগ্য তত্ত্ব হিসেবে বিবেচনা করা হত। সুতরাং এই বইয়ের প্রমাণগুলো সজ্জিত সৃষ্টিতত্ত্ববাদের বির্বতন-বিরোধী অযৌক্তিক অবস্থানটি চিহ্নিত করে। যেভাবে বিজ্ঞানে সাধারণত প্রতিদ্বন্দ্বী তত্ত্বগুলোকে তুলনামূলক বিচার পর্যালোচনা করে তাদের মধ্যে সত্যতা যাচাই করা হয়। আর সে-কারণেই বইটি লেখা। কয়েন বইটিতে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার সময় পাঠকদের বারবার প্রশ্ন করেছেন, তাদের চিন্তা ও বিশ্লেষণী মননকে নাড়া দিয়ে—সৃষ্টিতত্ত্ববাদীরা তাহলে জীববিজ্ঞানের এই বিষয়টি কিভাবে ব্যাখ্যা দেবে? স্পষ্টতই প্রমাণ বলে দিচ্ছে সৃষ্টিতত্ত্ববাদ এর ব্যাখ্যা দিতে পারে না। সুতরাং শুধুমাত্র বিবর্তনের সপক্ষে প্রমাণ উপস্থাপন শেখানোই এই বইটির মূল উদ্দেশ্য নয়, এর উদ্দেশ্য ভালো আর খারাপ বিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য শনাক্ত করারও কৌশল শেখানো।
জেরি কয়েনের সুপরিচিত, বহুলপঠিত এই বইটি অনুবাদের কারণ প্রথমত, বিবর্তন সম্বন্ধে বিদ্যমান ভুল ধারণাগুলোর প্রতি কিছু যুক্তি উপস্থাপন। এই বইটি যে শৈলীতে লেখা হয়েছে সেটি স্পষ্টতই একটি বিতর্কের আঙ্গিকে। ২০০৯ সাল অবধি বিবর্তনের সপক্ষে বিজ্ঞানের নানা ক্ষেত্র থেকে সংগৃহীত গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণগুলো তিনি এই বইটিতে জড়ো করেছেন পাঠকদের প্রতি একটি প্রশ্ন উপস্থাপন করার উদ্দেশ্যে—‘বিবর্তন ছাড়া সেই বিষয়গুলো কি ব্যাখ্যা দিতে পারে এর বিকল্প হিসেবে দাবিকৃত সৃষ্টিতত্ত্ববাদ কিংবা এর ছদ্মরূপ ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন মতবাদ?’ শিক্ষকসুলভ সংযত দৃঢ়তায় জেরি কয়েন বইটিতে এই প্রশ্নের সঠিক উত্তরের সপক্ষে তাঁর যুক্তিগুলো উপস্থাপন করেছেন। এই প্রমাণগুলোই পাঠককে তার উত্তর খুঁজতে সাহায্য করবে এবং বিবর্তনবিরোধীদের প্রশ্নের জবাব দেয়ার জন্য আরো কিছু প্রয়োজনীয় যুক্তি পাঠক তাঁদের হাতের নাগালেই পাবেন। মনে রাখতে হবে, প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তনের ধারণাটির মতো আর কোনো বৈজ্ঞানিক তত্ত্বই এতটা বেশি বিপক্ষতার মুখোমুখি হয়নি। এর কারণ মানুষ হিসেবে আমাদের অস্তিত্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো এটি উত্থাপন করেছিল : আমরা কিভাবে এলাম—আমাদের জীবনের উদ্দেশ্যটাই-বা কী? কিন্তু বিবর্তনের ধারণাটি কোনোভাবেই আমাদের এই বিস্ময়কর অস্তিত্বটিকে অবমূল্যায়ন করেনি বরং আরো মর্যাদাশীল করে তুলেছে, কারণ পৃথিবীতে আমরা মানুষেরাই হচ্ছি একমাত্র প্রজাতি, যারা এই প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করার মতো বুদ্ধিমত্তা বিবর্তন করতে পেরেছি। সূচি অনুবাদকের কথা [৯-৭১] মূল লেখকের প্রাককথন [৭৩-৮১] মূল লেখকের ভূমিকা [৮৩-৯৩] প্রথম অধ্যায় : বিবর্তন কী? [৯৫-১৩০] দ্বিতীয় অধ্যায় : যে ইতিহাস লেখা আছে পাথরে [১৩১-১৯০] তৃতীয় অধ্যায় : অবশিষ্টাংশ : নিষ্ক্রিয় অঙ্গ বা ভেস্টিজ, ভ্রুণ এবং খারাপ ডিজাইন [১৯১-২৪০] চতুর্থ অধ্যায় : জীবনের ভূগোল [২৪১-২৮০] পঞ্চম অধ্যায় : বিবর্তনের ইঞ্জিন [২৮১-৩৩৬] ষষ্ঠ অধ্যায় : যৌনপ্রজনন কিভাবে বিবর্তনকে পরিচালিত করে [৩৩৭-৩৭৭] সপ্তম অধ্যায় : প্রজাতির উৎপত্তি [৩৭৯-৪১৭] অষ্টম অধ্যায় : তাহলে আমরা? [৪১৯-৪৬৮] নবম অধ্যায় : পুনরুজ্জীবিত বিবর্তন [৪৬৯-৪৮৯] শব্দকোষ [৪৯০-৪৯৪] গ্রন্থ তালিকা [৪৯৫-৫০১] তথ্যসূত্র [৫০২-৫১৯] ব্যবহৃত ছবিগুলোর জন্য কৃতজ্ঞতা [৫২০-৫২১] লেখক পরিচিতি [৫২২-৫৩২]