কবিতার ভুমিকা ব্যাপক । একজন কবি অনেক স্বাধীনতা ভোগ করেন । তার নিজস্ব চিন্তা ভাবনার সাথে সমাজ সভ্যতার রেওয়ামিল টেনে এনে তিনি একজন দার্শনিক হয়ে উঠেন । ইঙ্গিত করেন সভ্যতার লক্ষ্য, নির্দেশন করেন পথচলার পাথেয় । স্বপ্ন দেখান সুন্দর সুপ্রভাত । দেখান শ্বাশত ভালোবাসার পথ । নিভৃতে কাজ করেন একজন রাখালের ভুমিকায়; একজন সারথীর ভুমিকায় । রাষ্ট্র তথা ভৌগোলিক সীমানার বাহ্যিক সীমাবদ্ধতার দেয়াল তুলে ফেলে গড়েন এক বৈশ্বিক চিন্তনের সৌষ্ঠবধারা । আহবান করেন নতুনত্বের । সেই আহবানে তাল মাতাল হয়ে পড়ে পুরো সৃষ্টিশীল । পুরাতন ছন্দে স্থান করে নেয় নতুন ছন্দ । পুরাতন মাত্রার স্থানে আসে নতুন মাত্রা । আনেন নতুন আঙ্গিক । আর এখানেই কবির স্বার্থকতা। কবি ও কবিতা জীবনবোধের এক অনন্য মৈত্রিসেতু । কবি শাহ্ কামাল তেমনই একজন কাব্যসাধক তার জীবন ভাবনাকে কবিতায় ঋদ্ধ করেছেন মননশীলতায় । তার নিরবচ্ছিন্ন সাহিত্যেচর্চা, শব্দ নিয়ে সৃজনশীলতায় নিবেদিত থাকার প্রয়াস অনন্য। ‘কড়া রোদের গল্প ’এমনি একটি কাব্যগ্রন্থ । এতে টি কবিতা মুদ্রিত হয়েছে । এই কাব্যগ্রন্থে নাম ভুমিকায় একটি কবিতা থাকলেও এই কাব্যগ্রন্থের অন্যান্য কবিতার সাথে এক গভীরতম যোগসূত্র রয়েছে । শীতের সকালে রোদ খুবই মিঠা আরামদায়ক বটে, তবে গ্রীষ্মের রোদ বড়ই প্রখর কড়া । শরীর রোম কাটা দিয়ে উঠে । শরীর পুড়ে পুড়ে যায় । ঠিক তদ্রুপ এই সমাজ সভ্যতার নানা ঘাতে প্রতিঘাতে এই মানবজীবনের গল্প সংকলন । এই সংকলনের এক একটি শব্দ, বাক্য, চিত্র, চিত্রকল্প এক একটি কবিতা । ‘কড়া রোদের গল্প ’কবিতায় কবি বলেছেন – আমাকে স্বাক্ষী রেখে চলে সন্ধ্যার আগের শান্ত মাঠ ঘাট আর গাছ গাছালি আর শহুরে ইট কাঠ পাথর আর রাজপথের ব্যস্ততা তাদের কড়া রোদের গল্প কত মুখ ঝলসে যায় জীবনের খোঁজে কত মুখ আসে নিষিদ্ধ পল্লীর ক্যাম্পাস থেকে পোড়া পোড়া মাংসের স্বাদ গ্রিল নান তন্দুরির মতো এই রোদ যৌবনের এই রোদ মদ আর মাদকের এই রোদের ক্যাম্পাসে ওড়ে কালো পানকৌড়ি আর পানকৌড়ির রক্ত ভেসে আসে এই শান্ত বিকেলের কন্যাকুমারীর বুকে। এই কবিতায় যে চিত্রকল্প প্রকাশ পেয়েছে তা শুধু কবির অন্তর্নিহিত কথা নয়— এটি সর্বজনীন । এমন করেই রচিত হয়েছে অন্য কবিতাগুলো । আশা করি কবিতাগুলো পাঠকের ভালো লাগবে।