বাংলাদেশ এক অমর কবিতা বাংলাদেশ এক অমর কবিতার নাম লিখেছেন জনতার কবি শেখ মুজিবুর রহমান। রাত জেগে জেগে যৌবনের সোনালি অক্ষরে আরাধ্য সেই কবিতায় শোষিত মানুষের দুঃখদশার কথা বলেছেন তাদের বঞ্চিত মৌলিক অধিকারের কান্নার কথা এঁকেছেন। ‘সবার উপরে মানুষ সত্য’ চ-িদাসের এই শাশ^ত বাণীকে শিরোধার্য করে আর্তনাদ করেছেন মধুসূদন রবি নজরুল সুকান্ত, তারা চোখের জলে নদী নির্মাণ করেছেন ঘরভাঙা পাখির করুণ পালকের ফটোগ্রাফে রিক্ত বনবীথি দেখেছেন বুকের গহীনে পুড়িয়েছেন নিজেদের অক্ষমতার কথা। জনতার কবি ব্যর্থতার করুণ রাগীনি নয় শুনিয়েছেন দুরন্ত বাঁশির সুর যেনো হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা যেনো জাদুকরী ঐক্যের কারিগর, মাঠের রাখাল ছুটে এসেছেন হাতের লাঠি উঁচিয়ে ফসলের কৃষক ছুটে এসেছেন কাস্তে উঁচিয়ে যে রমণী অনুচ্চ কণ্ঠে শুনিয়েছেন প্রিয়জনকে ভালোবাসা সেও বীরাঙ্গনা সখিনা তেজোদীপ্ত প্রীতিলতা ও দুর্বিনীত ইলা মিত্রের মতো কোমরে আঁচল পেঁচিয়ে উঁচিয়েছেন হাতের আটপৌরে দা এইভাবে জাল রেখে জেলে, কলম রেখে ছাত্র-ছাত্রী কারখানা ফেলে শ্রমিক, স্টেশন ফেলে কুলি যার যা আছে তাই নিয়ে উচ্চকিত হয়েছেন স্বাধীনতার শপথে। কবি হেঁটেছেন ক্ষিপ্রতার ধুলি উড়িয়ে সমুদ্র আর পাহাড়ের দুর্দমনীয় শক্তির হুংকারে কাঁপিয়েছেন শোষকের মসনদ ভেঙে করেছেন বিচূর্ণ হানাদারের অপবিত্র হাত। সমবেত জনতা ফুঁসে উঠেছে সমুদ্রের উত্তাল উর্মির মতো তথাকথিত রাজনীতির মিথ্যাচার নয় কপট নেতার কথার ফুলঝুরি নয় জনতার কবি তখন উঁচিয়ে তর্জনী কবিতায় দিলেন পথের ঠিকানা আকাশে বাতাসে উঠলো কবিতার রণধ্বনি- ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো। এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ’ তারপর পদ্মা-মেঘনা-যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের দুর্বিনীত ঢেউ ভেঙে পিতা ও মাতার কঙ্কাল করোটি থেকে ভ্রাতা ও ভগ্নির তপ্ত রক্তের স্রোত থেকে নির্মিত হলো সবুজ-শ্যামলে ভরা এক দেশ-বাংলাদেশ সেই থেকে পৃথিবীর গৌরব-গ্রন্থে উদ্ভাসিত অমর এক কবিতা- স্বাধীন স্বদেশ আমার বাংলাদেশ।