চাঁদের মৃদু আলোর ঝলকানিতে ঝলমল করছে সমগ্র সমুদ্রের তীর। আকাশে গোল থালার মত একটি বিশাল চাঁদ উদয় হয়েছে। সমুদ্রের পানিগুলো মৃদু ঢেউয়ে দোল খেয়ে চলেছে। চাঁদের আলো সমুদ্ররে প্রতিফলন ঘটায় চিকচিক করছে দোল খাওয়া মৃদু ঢেউগুলো। যেন মুক্তের ন্যায় নড়াচড়া করা হচ্ছে। রাত খুব একাঁ গভীর নয়। তবুও গভীর রাত মনে হচ্ছে। নেই কোনো কোলাহল। আর নেই কোনো জনমানবের চিহ্ন। চারদিকে বিভিন্ন প্রকৃতির গাছপালা দিয়ে সাজানো একটি আইল্যান্ড। সমুদ্রের শান্ত পানিগুলোকে অশান্ত করে দিয়ে অদ্ভুত রকমের প্রাণী পানির উপরে ভেসে এলো। তাদের দেহের উপরিভাগ মানুষের মতো। কিন্তু নিচের অংকাঁ সম্পূর্ণ মাছের লেজের অনুরূপ। সমুদ্রের পানি অশান্ত করে দিয়ে এ ধরণের কয়েকটি প্রাণী তীরে উঠে এলো। আমরা কমবেশ সবাই এদের সাথে পরিচিত। তাদের আদৌ মানুষ বলা ঠিক হবে কি—না তা নিয়ে কিছুটা সংশয়। চাঁদের আলো তাদের দেহের মধ্যভাগ থেকে শুরু করে নিচ পর্যন্ত প্রতিফলিত হয়ে ঝলমল করছে। তীরে উঠে আসা অদ্ভুত প্রাণীগুলোর সবার গায়ের রঙ এক রকম হলেও তাদের মধ্যে থাকা দুজন ব্যক্তিটির দেহের রঙ কিছুটা ভিন্ন। একজনের দেহে ভিন্নধর্মী যুদ্ধের পোশাক একটু ভিন্ন রকমের। অপরজন হচ্ছে মৎস কন্যা। মাথায় রাজমুকুট থাকার কারণে তাকে চিহ্নিত করতে খুব একাঁ বেগ পোহাতে হয়নি। মৎস রাজ কন্যার দেহে নীলাভ আভা ফুটে উঠেছে। চাঁদের ঝিকিমিকি আলোতে আরও বাড়িয়ে তুলছে মৎস কন্যার রূপ—লাবণ্য। মৎস কন্যার সুরক্ষার কাজে চারদিকে নিয়োজিত রয়েছে আটজন মৎস মানব। সবাই তীরে উঠে এসে তীব্র আক্ষেপ নিয়ে সমুদ্রের দিকে চেয়ে আছে। হয়তো কোনো কিছুর অপেক্ষা করছে। আকস্মিকভাবে মৎস কন্যার দেহের নিম্ন ভাগ মৎস রূপ থেকে মানুষের মতো দুই পায়ে রূপান্তর হলো। এছাড়া সাথে দেহেরও পরিবর্তন ঘটতে লাগে। মাথায় রাজমুকুট দেয়া। চুলগুলো মৃদু বাতাসে আলোতে পরশ দিয়ে যাচ্ছে। তাদের সাথে আলিঙ্গন করে মাথার চুলগুলো পাল্লা ধরে দোল খাচ্ছে। দেহে মানুষ রূপ ফিরে আসতেই মৎস কন্যার গায়ে সাদা রঙের একটি বিস্তৃত পোশাকে আবর্তিত হয়ে যায়। দেখতে একদম সাদা পরীদের মতো মনে হচ্ছে। পেছনে ডানা নেই, কিন্তু তবুও পরীর মত দেখাচ্ছে। হোক না সে জলপরী। পরী তো! মৎস্য কন্যার সুরক্ষার কাজে নিয়োজিত সেনাগুলো নিজেদের দেহের নিম্ন ভাগ মানুষের দুই পায়ের মতো হতেই উভয়ে মানুষ রূপ ফিরে পান। এছাড়াও সকলের গায়ে একটি গেঞ্জি জাতীয় জামা এবং নিচে পরনে রয়েছে ধুতি জাতীয় পাজামা। প্রত্যেকের হাতে রয়েছে একটি করে বল্লম। তবে আমাদের চিরচেনা সেই বল্লমের চাইতে বেশ ভিন্ন। বল্লমগুলো খুব সম্ভবত পানি দিয়ে তৈরি। তবে অত্যন্ত শক্ত এবং ধারালো। যা হয়তো হিরা কাটারও ক্ষমতা রাখে। বেশ কিছু সময় যাবত অপেক্ষা করছে তারা। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত জিনিসটির দেখা এখনো পায়নি। যার নিমিত্ত উভয়েই আগ্রহান্বিত হয়ে সমুদ্রের পানির দিকে তাকিয়ে আছে। আচমকাই চোখ দুটি বুজে নেয় রাজকন্যা। কিছু শোনার চেষ্টা করেছে সে। কিন্তু তেমন কিছুই অনুভব করতে সক্ষম হয় না। এবার কিঞ্চিৎ রাগান্বিত স্বরে সেনাপতির উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করে রাজকুমারী, ‘আর কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে? এখনও তো সেনাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।’ কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বললেন সেনাপতি, ‘রাজকুমারী, সেনারা এতক্ষণে যাত্রাপথে থাকার কথা। কিন্তু এখনও এলো না কেন? বিষয়টা ভেবে সামান্য চিন্তা হচ্ছে।’ ‘কতদূর এসেছে তা জানাও।’ ‘যথা আজ্ঞা রাজকুমারী।’
যাবেদ খান আবু বকর। মাতার নাম ফরিদা খান। ২০০৩ সালের মহান বিজয় দিবস দিবাগত রাতে মায়ের কোল আলোকিত করে ভুমিষ্ট হন তিনি। ঢাকা বিভাগের শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলায় তার জন্ম। লোনসিং উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তিনি মাধ্যমিক পাশ করেন। নড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন। অতঃপর একই কলেজের অধীনে বিবিএস প্রথম বর্ষে বর্তমানে অধ্যয়নরত অবস্থায় রয়েছেন। লেখালিখির যাত্রাটা তার খুব বেশি বড়োও না আবার ছোটোও নয়। ছোটোবেলা থেকেই তার গল্পের প্রতি আলাদা অনুভূতি ছিল। সেখান থেকে ধীরে ধীরে আগ্রহটা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি প্রথম গল্প লিখেন। দীর্ঘ দিন লেখালিখির পর অতঃপর বইয়ের পাতায় নিজের নাম দেখার ইচ্ছা পোষণ করেন। সেখান থেকেই তিনি তার মারমেইড সিরিজের তিনটি বই লিখেছেন। তার সৃষ্ট মারমেইড সিরিজে রয়েছে ‘সি অব মারমেইড, কিং অব মারমেইড এবং দ্য রিটার্ন অব মারমেইড’। পাঠকদের ভালোবাসা কামনা করছেন তিনি।