একটি সংক্ষিপ্ত পরিচিতি বাংলাদেশ! আমাদের প্রিয় জন্মভূমি। মাথার ওপর নীল ছামিয়ানা উঁচিয়ে সদা দণ্ডায়মান আসমান। দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠে দোল দিয়ে যায় ঝিরিঝিরি বাতাস, অন্তরে বুলিয়ে দেয় প্রশান্তির ছোঁয়া। কুলুকুলু রব তুলে বহমান পদ্মা, মেঘনা, যমুনাসহ অজস্র নদী-নালার বুকে বয়ে চলে নৌকা। বাংলার দক্ষিণ অঞ্চলকে ঘিরে রেখেছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন। এতো এতো রূপ-রস-গন্ধে ভরা এই অনিন্দ্য সুন্দর দেশটির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে শীতের মৌসুমে অতিথি পাখিরা এসে ভিড় জমায়। কার না ভালো লাগে এই দেশ! তাইতো একেক সময় একেক দেশ তাদের কুনজর নিয়ে শাসন করতে এসেছিল এদেশকে। কিন্তু শাসনের নামে তাদের সেই শোষণকে মেনে নিতে পারেনি দেশপ্রেমিক মানুষ। বাংলামায়ের দামাল ছেলেরা তাদেরকে রুখে দিয়েছে। তথাপি এখনও থেমে নেই বিদেশীদের লোলুপ দৃষ্টি। তাই এই সুজলা-সুফলা-শস্যশ্যামলা বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনার সম্ভারকে রক্ষা ও তার পরিচর্যার জন্য প্রয়োজন একদল সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক মানুষের এবং সেই সাথে প্রয়োজন আমাদের গৌরবময় ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরার মতো নির্ভিক কলমসৈনিক। জাতির সেই প্রত্যাশা পূরণের জন্য ১৯৮৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম প্রকাশিত হয় কিশোরকণ্ঠ নামক শিশু-কিশোর মাসিক পত্রিকাটি। প্রকাশের পর থেকেই পরিণত হয় দেশের অগণন শিশু-কিশোরদের প্রিয় পত্রিকায়। ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে, এমনকি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সার্কভুক্তদেশ তথা ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ভুটান, আফগানিস্তানসহ সমগ্র এশিয়া মহাদেশ এবং আফ্রিকা, ইউরোপ, ওশেনিয়া ও আমেরিকা মহাদেশে। একটি পত্রিকার এতো দ্রুত সম্প্রসারণের ফলে প্রয়োজন হয়ে পড়ে একটি ফাউন্ডেশনের ভিত রচনার। তারই ফলশ্রুতিতে অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ২০০২ সালে সরকারি রেজিস্ট্রিভুক্ত হয় কিশোরকণ্ঠ ফাউন্ডেশন। আর পত্রিকার রেজিস্ট্রেশন হয় ২০০৪ সালের মার্চ মাসে। তবে পত্রিকাটির অফিসিয়াল নাম হয়ে যায় “নতুন কিশোরকণ্ঠ”। কিশোরকণ্ঠ ফাউন্ডেশন থেকে ২০০৮ সালে সাধারণ জ্ঞানভিত্তিক মাসিক পত্রিকা “কারেন্ট ইস্যু” ও কার্টুন মাসিক “নয়া চাবুক” বের করা হয়। পত্রিকা দু’টির প্রকাশনা আপাতত বন্ধ আছে। কিশোরকণ্ঠ আজ শুধু একটি পত্রিকার নাম নয়, এটি একটি প্রতিষ্ঠানে রূপ লাভ করেছে। কালের পরিক্রমায় আজ এক মহীরুহ রূপ ধারণ করেছে।
মোশাররফ হোসেন খান। আশির দশক থেকে কবিতা, ছড়া, গল্প, উপন্যাস, জীবনমুখী গদ্যসাহিত্যসহ শিশু-কিশোরদের সাহসী স্বপ্নবোনার নানা অনুষঙ্গ নিয়ে নিরলসভাবে লেখালেখি করছেন এই কীর্তিমান। ১৯৫৭ সালের ২৪ আগস্ট যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ডা. এম এ ওয়াজেদ খান এবং বেগম কুলসুম ওয়াজেদ তাঁর গর্বিত বাবা-মা। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত 'হৃদয় দিয়ে আগুন' কাব্যগ্রন্থটি মোশাররফ হোসেন খানকে কবিতার মাঠে করিয়ে দেয় সাহসের সাথে। অতঃপর ‘নেচে ওঠা সমুদ্র', 'আরাধ্য অরণ্যে', ‘বিরল বাতাসের টানে' কাব্যগ্রন্থগুলো তাঁকে ঝড়ের মাঝে শক্তমাঝির ভূমিকায় পরিচিত করে। তবে ১৯৯৫ সালে কবিতার মাঠে হৈচৈ ফেলে দেয় তাঁর কাব্যগ্রন্থ 'পাথরে পারদ জ্বলে'। ‘ক্রীতদাসের চোখ', 'নতুনের কবিতা', 'বৃষ্টি ছুঁয়েছে মনের মৃত্তিকা’, ‘দাহন বেলায়’, ‘কবিতাসমগ্র', 'কবিতাসমগ্র-২’, ‘সবুজ পৃথিবীর কম্পন’, ‘পিতার পাঠশালা', 'স্বপ্নের সানুদেশ’ তাঁকে কাব্যভুবনে শক্তিশালী অবস্থানে অধিষ্ঠিত করে। গদ্য সাহিত্যের ক্ষেত্রে তাঁকে খ্যাতির দুয়ারে পৌঁছে দিয়েছে তাঁর 'সাহসী মানুষের গল্প'। ‘রহস্যের চাদর’, ‘অবাক সেনাপতি', 'দূর সাগরের ডাক', ‘কিশোর কমান্ডার’, ‘ছড়ির তরবারি', কিশোর গল্প 'জীবন জাগার গল্প’, ‘সুবাসিত শীতল হাওয়া’, ‘আগুন নদীতে সাঁতার’, ‘অবাক করা আলোর পরশ', ‘ছোটদের বিশ্বনবী'সহ নানা জীবনীগ্রন্থ তাঁকে শিশু-কিশোর সাহিত্যে করে তুলেছে খ্যাতিমান। গল্পগ্রন্থ 'প্রচ্ছন্ন মানবী', 'সময় ও সাম্পান, ডুবসাঁতার এবং কিশোর উপন্যাস ‘বিপ্লবের ঘোড়া', 'সাগর ভাঙার দিন', 'ঝিমায় যখন ঝিকরগাছা’, ‘কিশোর উপন্যাসসমগ্র', 'স্বপ্নের ঠিকানা' এবং ‘বাঁকড়া বিলের বালিহাঁস' মোশাররফ হোসেন খানকে কথাসাহিত্যে এনে দিয়েছে বিশেষ জনপ্রিয়তা। ইতোমধ্যে ইংরেজি, আরবি, উর্দু, ফারসি, হিন্দি, গুজরাটি, অহমিয়া এবং রুশ ভাষাসহ বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়ে তাঁর কবিতা-গল্প প্রকাশিত হচ্ছে। পুরস্কার : গোলাম মোহাম্মদ সম্মাননা-২০১৯, সিএনসি ফররুখ পুরস্কার-২০১৬, পরিচয় সাহিত্য পদক। কবি স্ত্রী বেবী মোশাররফ, পুত্র নাহিদ জিবরান, কন্যা নাওশিন মুশতারী ও নাওরিন মুশতারীকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করছেন দীর্ঘদিন থেকে।