বাচিক শিল্পটা এখন বিশ্ব স্বীকৃত। সবারই চেষ্টা থাকে সুন্দর কথা বলার জন্য। তবে কিছু কিছু মানুষ আছে যারা শুধু সুন্দর করেই বলেন না, হয়ে ওঠেন সমাজের আয়নায় সৎ, যোগ্য ও দক্ষ নেতা । সেই যোগ্যতার মাপকাঠিতে ভর করে তিনি হয়ে ওঠেন যোগ্যতর নেতা এবং দেশ বা জাতির ত্রাতা। মানুষ তাদের কথা শোনে মুগ্ধের মতো আর পালন করে বিশ্বাস ভরে। যুগে যুগে মানুষের কল্যাণে নিবেদিত সেই সকল মানুষ সাধারণ থাকেননি। তাঁদের কর্মকান্ড আর জীবনবোধের সরলতায় এবং মানুষ, সমাজ আর দেশের প্রতি অকুণ্ঠ ভালবাসার জন্য হয়ে ওঠেন অসাধারণ আর অপরিহার্য। তাঁরা মানুষের সামনে জীবন গঠন ও পরিচালন পদ্ধতির জন্য যে বাক্যবাণ প্রয়োগ করেন অত্যন্ত দক্ষতা, সহজবোধ্য আর সাবলিলভাবে মানুষ তা গ্রহণ করে মন্ত্রমুগ্ধের মতোই। আর এই ক্রিয়া পদটি আমাদের সামনে বিশেষ কারণে হয়ে ওঠে বিশেষ্য- ‘ভাষণ’ বা ‘বক্তৃতা’ উপার্ধি নিয়ে। ভাষণ বা বক্তৃতায় যিনি যত সুন্দরভাবে, সহজ-সরল ভাষায় ও যুক্তিপূর্ণভাবে মানুষের চাওয়া-পাওয়া, প্রত্যাশার কথা বলতে পারবেন, তিনিই ততো ভালো বক্তা। দেখা গেছে, যেসব ভাষণ বা বক্তৃতায় মানুষের মুক্তির কথা, স্বাধীনতার কথা, বাক্-স্বাধীনতার কথা, সমতার কথা, সমবন্টনের কথা, অধিকারের কথা, গণতন্ত্রের কথা, একতার কথা বলা হয়েছে সেগুলোই সবথেকে বেশি জনপ্রিয় হয়েছে। কোনো কোনো ভাষণ ইতিহাসের পাতায় তাই কালান্তরের স্থান পেয়েছে। বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির স্বাধিকারের জন্য সাড়ে তের বছর কারাগারে অন্তরীণ ছিলেন। তিনি জনতার দাবির একবিন্দুও ছাড়তে রাজি হননি কখনও। শোষিতের পক্ষে থাকতে থাকতে একসময় হয়ে উঠলেন মুক্তিকামী মানুষের ত্রাতা। তাঁর ঘোষিত ছয় দফা দাবি তাই হয়ে উঠেছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। সেই মুক্তির সনদের সোপানে দাঁড়িয়ে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ দ্বীপ্ত ও দৃপ্ত কন্ঠে ঘোষণা করেন- এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। তর্জনী উঁচুতে তুলে সেদিন তিনি যে নির্দেশ নিরস্ত্র-শান্তিপ্রিয় বাঙালিকে দিয়েছিলেন, সেই দৃপ্তকণ্ঠের তেজস্বী আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি লাঠি, কোদাল, বাঁশ, বৈঠা আর মনোবল নিয়ে আধুনিক অস্ত্র আর সুসজ্জিত পাকিস্তানি হায়েনা বাহিনীর বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে মাত্র নয় মাসে দেশকে স্বাধীন করে ফেলেছিল। বঙ্গবন্ধুকে ওরা গ্রেফতার করে অজানা জায়গায় অন্তরীণ করে রাখলেও ‘যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে’র আহ্বান মাথায় নিয়েই মুক্তিযোদ্ধারা দেশ মাতৃকাকে স্বাধীন করে ফেলেছিল। ৭ই মার্চের ভাষণকে তাই বিশ্ব এখন শব্দের বাণ না বলে বলতে শুরু করেছে ৭ই মার্চের শব্দাস্ত্রই বাঙালিকে স্বাধীন করে ফেলেছিল। তাঁর সেই শব্দমালাকে ইউনেস্কো বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ ঘোষণা করেছে। আর তাঁকে আসন দিয়েছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে। ‘মহান আব্্রাহাম লিঙ্কনের বক্তৃতা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ তুলনা করা হয়, কিন্তু লক্ষ্য রাখতে হবে- সে বক্তৃতাটি ছিল মাত্র তিন মিনিটের। মার্টিন লুথার কিংয়ের বক্তব্য ছিল ১৭ মিনিটের, যা প্রথমে ছিল লিখিত এবং পরে অলিখিত। তাই পৃথিবীর কোন ভাষণের সাথে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের তুলনা হয় না। কারণ ব্যক্তিভাষণের মধ্যদিয়ে একটি জাতির জন্ম হয়েছে, এমন নজির পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয়টি নেই। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ তাই অবিনশ্বর ও অতুলনীয়।
Title
বিশ্ব সেরা একশত বক্তৃতা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ৭ই মার্চের ভাষণ
শিক্ষক পিতা জনাব মোঃ আব্দুর রশিদ তালুকদার এবং শিক্ষক মাতা রাশিদা বেগম এর আদর্শে বড় হওয়া মোঃ কামরুল আহসান তালুকদার পিএএ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একজন উপ সচিব। তিনি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপ-মন্ত্রীর একান্ত সচিব হিসেবে কাজ করছেন। ১ জানুয়ারী ১৯৭৬ সালে বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ উপজেলার হোগলাবুনিয়া ইউনিয়নের গুয়াবাড়িয়া গ্রামে এক সভ্রান্ত পরিবারে তাঁর জন্ম। কামরুল আহসান তালুকদার পিরোজপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ঢাকা নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ থেকে কৃষিতে স্নাতক এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি বনায়ন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। ২৫তম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে ২০০৬ সালের আগস্ট মাসে সরকারি চাকুরীতে প্রবেশ করেন। তিনি বিসিএস পরীক্ষায় প্রশাসন ক্যাডারে দ্বিতীয় এবং সম্মিলিত মেধা তালিকায় সপ্তম স্থান অধিকার করেন। তিনি সরকারি দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে সিংগাপুর, ভারত, অষ্ট্রিয়া, চেক রিপাবলিক, তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। ২০১৪ সালে তিনি জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে ঢাকা বিভাগে শ্রেষ্ঠ উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ২০১৫ সালে ময়মনসিংহ বিভাগে শ্রেষ্ঠ উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে মনোনীত হন । এছাড়াও তিনি ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার সম্মাননা লাভ করেন ২০১৬ সালে। তিনি ভালুকায় ইউএনও থাকাকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে একলাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া এবং তাদের অনুশীলনের সুযোগ সৃষ্টি করেন। কয়েক হাজার ক্ষুদে শিক্ষার্থীর মাঝে ৭ মার্চের ভাষণ বঙ্গবন্ধুর মতো করে উপস্থাপন প্রতিযোগীতার আয়োজন করেন। অনন্য এ আয়োজনের জন্য ২০১৮ সালে ব্যক্তিগত শ্রেণীতে জাতীয় পর্যায়ে জনপ্রশাসন পদক লাভ করেন । ২৫তম বিসিএস ফোরামের নির্বাচিত সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। স্ত্রী আবেদা সুলতানা, ছেলে আবিদ আহসান জাইম এবং কন্যা জারা আহসানকে নিয়ে তাঁর সংসার। পেশায় কলেজ শিক্ষক মোঃ শামীম আহসান তালুকদার তাঁর বড় ভাই এবং মোঃ জিয়াউল আহসান তালুকদার তাঁর ছোট ভাই যিনি পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত। ‘‘মাঠ প্রশাসনের বিবর্তন, প্রেক্ষাপটঃ বাংলাদেশ’’ তাঁর প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ।