এ বইয়ের লেখাগুলো ২০০৩ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে বিভিন্ন পত্রিকায় বিভিন্ন সময়ে এবং বিভিন্ন প্রসঙ্গে লেখা নিবন্ধের সংকলন। অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন কারণে বন্যপ্রাণীদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসছে। তবে আশার কথা এই যে, আজকের জনগণ ৫০ বছর আগেকার মানুষদের চাইতে এ বিপর্যয় সম্বন্ধে অনেক বেশি সচেতন। তা সত্ত্বেও বন্যপ্রাণীরা ক্রমশ বিলীন হয়ে যাওয়ার পথে। তার কারণ আমরা আগের তুলনায় বেশি সজাগ হলেও বাস্তবক্ষেত্রে সঠিক কাজটি করছিনা। এমন এক সময় ছিল যখন বাঘ ও মানুষের একে অন্যকে নিধন করার ক্ষমতার মধ্যে তেমন কোনো বৈষম্য ছিলনা। অর্থাৎ মানুষ যত বাঘনিধন করত, বাঘও তত মানুষ মারত, বরং বেশিই মারত। কিন্তু এ হচ্ছে কয়েক বছর আগের কথা। এখনকার অবস্থা একেবারে ভিন্ন। নানাধরনের মারণাস্ত্রের সুবাদে এবং জনসংখ্যার বৃদ্ধির ফলে মানুষ পৃথিবীর বিশাল অংশ দখল করে নিয়েছে এবং বাঁচার প্রতিযোগিতায় বাঘের মত অন্য বন্যপ্রাণীরাও অসহায় হয়ে পড়েছে। প্রাণীদের বেঁচে থাকা এখন মানুষের ইচ্ছের ওপর নির্ভরশীল। উদ্ভিদ ও প্রাণীদের সমন্বয়ে গঠিত মানুষের বাসোপযোগী জৈব পরিবেশ আছে বলেই আমরাও বেঁচে আছি। এটা আমরা এখন বেশ বুঝি যে বন্য প্রাণীরা এখন সম্পূর্ণভাবে আমাদের ওপর নির্ভরশীল। প্রাকৃতিক পরিবেশে বাঁচিয়ে রাখতে হলে বন্যপ্রাণীদের বেঁচে থাকতে হবে এবং আমাদের নিজেদের স্বার্থেই তা হতে হবে। "Live and let live" বা নিজে বাঁচো এবং অন্যকে বাঁচতে দাও'- প্রয়োজন হলে নিজেদের স্বার্থ কিছুটা বিসর্জন দিয়ে হলেও বন্যপ্রাণী ও তাদের পরিবেশ বাঁচিয়ে রাখার সব দায়িত্ব আমাদের। আমরা এ সংকলনের লেখাগুলোতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সে ইচ্ছেটাকেই তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। পাঠকদের কেউ যদি তা বুঝতে পারেন, তবে নিজেকে ধন্য মনে করব। অবশেষে বলব, পরিবেশ বিষয়ে লেখালেখি করার জন্য আনেকেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমাকে উৎসাহিত এবং সাহায্য করেছেন। আমি বিশেষ করে শিশুসাহিত্যিক বন্ধুবর জনাব আলমগীর হোসেন খান এবং ঝিঙ্গেফুলের প্রোগ্রাইটার জনাব গিয়াসউদ্দীন খসরু সাহেবকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাব।