বিদ্রোহী কবি হিসেবেই কাজী নজরুল ইসলাম সমধিক পরিচিত। প্রাবন্ধিক হিসেবেও তাঁর একটা স্বতন্ত্র পরিচয় আছে। অবশ্য প্রবন্ধের জগতেও তিনি কবিতার মতো বিদ্রোহের বাণী প্রচার করেছেন। কবিতার চেয়ে প্রবন্ধে তাঁর বিদ্রোহ শাণিত, পরিশীলিত ও তীক্ষ্ণ। তিনি যে কথাগুলো কবি হিসেবে উপমা, অলঙ্কার, রূপকের আড়ালে বলেছেন সাংবাদিক হিসেবে সেই কথাগুলোকে সরাসরি বলতে হয়েছে। সেই কথাগুলোর গ্রন্থবদ্ধ রূপ তাঁর প্রবন্ধসাহিত্য। তাই প্রাবন্ধিক নজরুলের মধ্যে আমরা সত্যিকারের নজরুলকে খুঁজে পাই। প্রাবন্ধিক নজরুল যুগচেতনা এবং যুগের বাণীকে যেভাবে ধারণ করেছিলেন তা সমকালে আর কোনো সাহিত্যিকের মধ্যে দেখা যায় না। তিনি যেটাকে সত্য বলে জেনেছেন সেটা অকপটে প্রকাশ করেছেন। এতে তাঁর কোনো সমস্যা হবে কিনা তা ভাবার অবকাশ পাননি। এজন্য অনেক সময় তাঁকে চরম মূল্য দিতে হয়েছে। কিন্তু নিজের অন্তরের সত্য থেকে পিছিয়ে আসেননি। কাজী নজরুল ইসলামের প্রবন্ধ: যুগচেতনা ও জীবনবোধ গ্রন্থটি নজরুলের প্রবন্ধের আলোচনা। তাঁর প্রবন্ধ আলোচনা করতে গিয়ে ব্যক্তি নজরুল যেমন আলোচ্য বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে তেমনিভাবে তাঁর সমসাময়িক কালও আলোচনার কলেবরকে সমৃদ্ধ করেছে। তবে আলোচ্য বিষয় যেহেতু প্রবন্ধকেন্দ্রিক সেহেতু অন্যান্য আলোচনা যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত পরিসরে সীমাবদ্ধ রাখার প্রয়াস চালানো হয়েছে। কাজী নজরুল ইসলাম সমকালে একশ্রেণির কাছে যেমন ছিলেন নন্দিত তেমনিভাবে একটা নির্দিষ্ট শ্রেণি তাঁকে নানাভাবে নিন্দা করেছে। তাঁর অবদানকে নানাভাবে ছোট করে দেখানোর প্রয়াসও দেখা যায়। এই দুইটি বিষয়ই তাঁর প্রবন্ধে উঠে এসেছে। এগুলো শুধু নজরুল সমকালে নয়; বরং সকল কালে, সকল ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক। ভালো-মন্দ নিয়েই আমাদের চলতে হয়। নজরুলকেও এই বাস্তবতার মুখোমুখী হতে হয়েছে।