প্রাণ কুমার শর্মা, জন্ম পাকিস্তানের লাহোরে, তবে তার বেড়ে ওঠা ভারতের গোয়ালিয়রে। ১৯৩৮ সালের ১৫ আগস্ট কাসুরে জন্মগ্রহণ করেন প্রাণ। পরবর্তীতে ১৯৪৭ এ দেশভাগের পর তার পরিবার ভারতে চলে আসে। আঁকাবুকির নেশা বাল্যকাল থেকেই, পেয়েছিলেন বড় ভায়ের কাছ থেকে, আর অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য ছিলেন মা। তবে আনুষ্ঠানিক পড়ালেখার পাঠ চুকিয়েছেন পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পলিটিক্যাল সায়েন্সে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার মাধ্যমে। শিল্পচর্চার প্রতি গভীর আগ্রহ থেকে তিনি মুম্বাইয়ের ‘স্যার জামসেদজী জীজাভয় স্কুল অফ আর্ট’ এ ৫ বছরের কোর্সে ভর্তি হন। সংবাদপত্র মিলাপের কার্টুনিস্ট হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু। মূলত মিলাপের জন্য তিনি সৃষ্টি করেছিলেন ‘ডাবু’কে। এখান থেকেই তার কমিক্সের জগতে প্রবেশ। এটি ১৯৬০ সালের কথা যখন ভারতীয় উপমহাদেশে পাঠককে কমিক্সের স্বাদ দেওয়ার জন্য যোগ্য কোনো কার্টুনিস্ট ছিলেন না। ফলে পাঠকেরা ইংরেজি কমিক্সে বুঁদ হয়ে থাকতেন। প্রাণের আঁকা নানা কমিক্সে তখন তারা নিজেদের খুঁজে পাওয়া শুরু করলেন। সাফল্যের ছোঁয়া পেতে তাকে আরো অপেক্ষা করতে হয়েছে ৮ বছর। ১৯৬৯ সালে ম্যাগাজিন ‘লটপট’ এর জন্য ‘চাচা চৌধুরী’ চরিত্রটির জন্ম দিয়েছিলেন। এই চরিত্রটি ক্রমে বিখ্যাত হতে থাকে। প্রাণ এর বই সমূহ বলতে আমরা মূলত বুঝি কমিক্স বইগুলোকে। এই কমিক্স বইগুলোর মধ্য দিয়ে তৎকালীন সমাজব্যবস্থা ও সাধারণ মানুষের জীবনকে ফুটিয়ে তোলাই ছিলো তার মূল লক্ষ্য। প্রাণ এর বই সমগ্র এর মাধ্যমে আমরা পেয়েছি মজার মজার কিছু চরিত্র যা বছরের পর বছর অমর হয়ে রয়েছে। এমন বিশেষ চরিত্রগুলো হলো- চাচা চৌধুরী, সাবু, পিংকী, বিল্লু, রমণ, শ্রীমতিজী। চাচা চৌধুরীর কুকুর রকেট ও পিংকীর কাঠবিড়ালীর কথা না উল্লেখ করলেই নয়। তবে উপমহাদেশ বলি বা পাশ্চাত্য পূর্বে কোথাওই কমিক্স রাইটারদের প্রতি যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শণ করা হতো না। ফলে অমর চরিত্র সৃষ্টিকারী লেখকেরা সহজে অমর হতে পারতেন না ভক্তদের কাছে। এরকমও শোনা গিয়েছিলো যে অনেকে ভাবতো কমিক্সটির নামই বুঝি ‘প্রাণ চাচা চৌধুরী বই’, কেননা প্রাণের নামটি লিখা থাকতো কমিক্সের উপরেই ছোট করে। কিন্তু এসব বিড়ম্বনা ক্ষুদ্র লাগে যখন দেখা যায় তার ৫০ বছরেরও বেশি শিল্পীজীবনে তিনি লিখে ফেলেছেন ৪০০ কমিক্স বই। ২০১৪ সালে এই প্রতিভাবান কার্টুনিস্ট শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।