"যখনি জাগিবে তুমি"বইটির প্রথম ফ্লাপের কিছু কথা: মেয়েদের যদি আমরা একজন মানুষ হিসেবে না দেখে শুধু মেয়ে হিসেবে দেখে তাদের অবমাননা। করার চেষ্টা করি তাহলে আমাদের স্বপ্ন দেখার থাকল কী? আমি খুব আশাবাদী মানুষ; আমার ভিতরে বিষয়টি নিশ্চয়ই ঘটেছে উনিশশ একাত্তর সালে। যখন টিকে থাকা দূরে থাকুক বেঁচে থাকব কী না সেটাই জানতাম না, তখনাে আমরা। ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছি-সেই স্বপ্ন একদিন সত্যি। হয়েছে, তখন আমরা আবার আরাে নতুন স্বপ্ন দেখার সাহস পেয়েছি। এই নববর্ষে আবার খুবই বড় ধরনের দুঃসময় আমাদেরকে বিপর্যস্ত করেছে-আমি কিন্তু তার মাঝে আবার স্বপ্ন দেখছি। এই দেশের মানুষ ঘটনাটি নির্লিপ্তভাবে দেখেনি। পুরাে দেশের মানুষ। প্রতিবাদে প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠেছে-আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েই দুটি বিশাল প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে-ছাত্র শিক্ষক তাদের বুকের ভেতরের ক্ষোভ সবার সামনে প্রকাশ করেছে। শুধু তাই নয়, আমি দেখেছি এই দেশের মেয়েরা মােটেও অসহায় নির্যাতিতা মেয়ে হিসেবে হতাশায় ক্রন্দন করেনি-তারাও গর্জন করে উঠেছে। আমি স্বপ্ন দেখছি আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় শক্তি এই মেয়েরাও এই দেশে অসভ্য এবং বর্বর কিছু মানুষের এই কাপুরুষােচিত আচরণকে আর সহ্য করবে না-প্রয়ােজনে তাদের উপর পাল্টা আঘাত করবে-আর এই ভীরু কাপুরুষগুলাে গর্তের ভেতর ঢুকে যাবে। হয়তাে আমরা আমাদের দায়িত্বগুলাে ঠিকভাবে পালন করিনি-আমরা হয়তাে আমাদের সন্তানদের, আমাদের নতুন প্রজন্মকে কিছু মূল্যবােধ শেখাতে ভলে গিয়েছি। হয়তাে পুরাে বিষয়টি নিয়ে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে, আমাদের সন্তানদেরকে, আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে, আমাদের নতুন প্রজন্মকে মূল্যবোেধটি শিখিয়ে। দিতে হবে। তাদেরকে বলে দিতে হবে যারা অন্যায় করে তারা আসলে ভীরু এবং কাপুরুষ। তাদেরকে হয়তাে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই দুটি লাইন বারবার মনে করিয়ে দিতে হবে : যখনি জাগিবে তুমি সম্মুখে তাহার তখনি সে ভীত কুকুরের মতাে সংকোচে
বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরী পাঠকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি মূলত এ দেশের একজন বিখ্যাত লেখক, পদার্থবিদ এবং শিক্ষাবিদ। কিশোর সাহিত্য, শিশুতোষ গ্রন্থ, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, গণিত বিষয়ক বই এর জন্য খুব অল্প সময়েই জনপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি। মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৯৫২ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। মুক্তিযোদ্ধা বাবা ফয়জুর রহমানের চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন জেলাতেই তিনি পড়াশোনা করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে পিএইচডি ডিগ্রী অজর্নের উদ্দেশ্যে স্কলারশিপ নিয়ে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। পিএইচডি সম্পন্ন করে ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে বিখ্যাত বেল কমিউনিকেশনস রিসার্চ ল্যাবেও গবেষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৪ সালে দেশে ফিরে এসে তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগ দেন। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সবসময়ই এ দেশের কিশোর-কিশোরীদের কাছে বিশেষ আবেদন নিয়ে হাজির হয়েছে। কিশোর সাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ক অজস্র গ্রন্থ দিয়ে তিনি আলোকিত করে তুলেছেন এদেশের অগণিত কিশোর-কিশোরীর মনোজগত। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সমূহ, যেমন- দীপু নাম্বার টু, আমার বন্ধু রাশেদ, আমি তপু, শান্তা পরিবার, দস্যি ক’জন ইত্যাদি ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পায়। তার বেশ কিছু গল্প পরবর্তীতে নাটক ও চলচ্চিত্র হিসেবে টিভি পর্দায় স্থান করে নিয়েছে। তিনি একজন বিশিষ্ট কলামিস্টও। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডও তাঁর ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সমগ্র সকল বইপড়ুয়াকেই আকৃষ্ট করে। সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বহুবার পুরষ্কৃত হয়েছেন। বাংলা একাডেমি পুরষ্কার (২০০৪) এবং শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হিসেবে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার (২০০৫) সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও, কাজী মাহবুবুল্লা জেবুন্নেছা পদক (২০০২), শেলটেক সাহিত্য পদক (২০০৩), ইউরো শিশুসাহিত্য পদকসহ (২০০৪) অগণিত পুরষ্কার অর্জন করেছেন গুণী এই সাহিত্যিক।