ফ্ল্যাপে লিখা কথা বাংলাদেশের জনগণের অহংকার ও গৌরব এদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ। ইতিহাসের পাতায় অবিস্মরণীয় এই মুক্তিযুদ্ধ যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে আমাদের উজ্জ্বল শিল্প মাধ্যমগুলোতে যেমন চিত্রশিল্প, সঙ্গীত, নাটক, সাহিত্য ও চলচ্চিত্রে নানা ভাবে এসেছে। এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গত পঁচিশ বছরে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ ছবিতে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিল খন্ডিত, অনেকাংশে বিকৃত বা অনুপস্থিত এবং সেজন্যই ছবিগুলো অনুল্লেখ্য।
বিশিষ্ট ঔপন্যাসিক ও নাট্যকার হুমায়ূন আহমেদ নিবেদিত মনে ও প্রাণে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করেছেন এবং এখনও করছেন। তাঁর উপন্যাস ‘আগুনের পরশমণি’ এক অসাধারণ কাহিনী। সেই অসাধারণ কাহিনীর অবিস্মরণীয় চিত্ররূপ দিয়ে অর্জন করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’৯৪-এর শ্রেষ্ঠ কাহিনীসহ পুরস্কারের বিভিন্ন শাখায় মোট ৮টি পুরস্কার। যা এদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে এক অনন্য ও বিরল ঘটনা।
এ বছর মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার রজত জয়ন্তীতে আমরা প্রকাশ করলাম মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ছবি আগুনের পরশমণি নিয়ে লেখক-পরিচালক হুমায়ূন আহমেদ- এর নতুন বই।
ছবি বানানোর গল্প এই গল্প ছাড়াও বইটিতে আরো রয়েছে চিত্রনাট্য, ওয়ার্কিং চিত্রনাট্য, মূল উপন্যাস ও অপ্রকাশিত বেশ কিছু রঙ্গীন স্থির চিত্র।
আমাদের বিশ্বাস কুশলী লেখকের ঈর্ষণীয় দক্ষতায় ও বিষয় বৈচিত্রের অনন্যতায়
ছবি বানানোর গল্প বইটি এ দেশের প্রকাশনায় সংযোজন করবে নতুনতম বিশিষ্টতা। এবং স্বভাবতঃই আমাদের প্রত্যাশা পাঠকমাত্রই তা অনুভব করবেন খুব সহজেই।
বাংলা সাহিত্যের এক কিংবদন্তী হুমায়ূন আহমেদ। বিংশ শতাব্দীর বাঙালি লেখকদের মধ্যে তিনি অন্যতম স্থান দখল করে আছেন। একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার ও নাট্যকার এ মানুষটিকে বলা হয় বাংলা সায়েন্স ফিকশনের পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবেও তিনি বেশ সমাদৃত। বাদ যায়নি গীতিকার কিংবা চিত্রশিল্পীর পরিচয়ও। সৃজনশীলতার প্রতিটি শাখায় তাঁর সমান বিচরণ ছিল। অর্জন করেছেন সর্বোচ্চ সফলতা এবং তুমুল জনপ্রিয়তা। স্বাধীনতা পরবর্তী বাঙালি জাতিকে হুমায়ুন আহমেদ উপহার দিয়েছেন তাঁর অসামান্য বই, নাটক এবং চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রের বদৌলতে মানুষকে করেছেন হলমুখী, তৈরি করে গেছেন বিশাল পাঠকশ্রেণীও। তাঁর নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘আগুনের পরশমনি’ দেখতে দর্শকের ঢল নামে। এছাড়া শ্যামল ছায়া, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, ঘেটুপুত্র কমলা প্রভৃতি চলচ্চিত্র সুধীজনের প্রশংসা পেয়েছে। অনন্য কীর্তি হিসেবে আছে তাঁর নাটকগুলো। এইসব দিনরাত্র, বহুব্রীহি, আজ রবিবার, কোথাও কেউ নেই, অয়োময়ো আজও নিন্দিত দর্শকমনে। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের জনক তিনি। রচনা করেছেন নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল কারাগার, জোছনা ও জননীর গল্পের মতো সব মাস্টারপিস। শিশুতোষ গ্রন্থ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক রচনা, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী মিলিয়ে হুমায়ূন আহমেদ এর বই সমূহ এর পাঠক সারাবিশ্বে ছড়িয়ে আছে। হুমায়ূন আহমেদ এর বই সমগ্র পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিতও হয়েছে। সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্জন করেছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), একুশে পদক (১৯৯৪), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), মাইকেল মধুসূধন দত্ত পুরস্কার (১৯৮৭), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮), শিশু একাডেমি পুরস্কার, জয়নুল আবেদীন স্বর্ণপদকসহ নানা সম্মাননা। হুমায়ূন আহমেদ এর বই, চলচ্চিত্র এবং অন্যান্য রচনা দেশের বাইরেও মূল্যায়িত হয়েছে৷ ১৯৪৮ সালের ১৩ই নভেম্বর, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে, নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলায় কুতুবপুরে পীরবংশে জন্মগ্রহণ করেন হুমায়ূন আহমেদ। কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনের বেলভ্যু হাসপাতালে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। গাজীপুরে তাঁর প্রিয় নুহাশ-পল্লীতে তাঁকে সমাহিত করা হয়।