ভূমিকা সঙ্গীত কখন, কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে তার কোনো নির্ধারিত দিন, ক্ষণ উদঘাটিত হয়নি। তবে সঙ্গীত বিষয়ক গ্রন্থে সঙ্গীতের জন্ম বা সৃষ্টি বেশ প্রাচীন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রাচীন সঙ্গীতের দুটো ধারার কথা বলা হয়েছে। একটি মার্গ সঙ্গীত এবং অন্যাটি দেশী সঙ্গীত। মার্গ শব্দের অভিধানিক অর্থ ‘সঙ্গীতের খাঁটি শাস্ত্রীয় রূপ’। সঙ্গীত শাস্তকারগণ বলেছেন, ’মার্গ’ শব্দের অর্থ অনুসরণ করা, অন্বেষণ করা। এই অন্বেষণের ভেতর দিয়ে সঙ্গীতের সন্ধান পাওয়া যায়। সঙ্গীত গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে, ‘খ্রিষ্টপূর্ব যুগে বৈদিক গান, সাম গান থেকে যে অভিজাত গানের সৃষ্টি হয় সেই সঙ্গীত মার্গ সংগীত বা অনুসৃত বা অন্বেষিত সঙ্গীত নামে পরিচিত। এ থেকে মার্গ সঙ্গীতের প্রচীনত্বেরও প্রমাণ পাওয়া যায়। মূলত বিশেষ বিশেষ নিয়ম অনুসারে যে সকল সঙ্গীত পরিবেশিত হয় তাকেই মার্গ সঙ্গীত বলা হয়েছে। বর্তমানে প্রচলিত ক্ল্যাসিকেল বা উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত মার্গ প্রকৃতি সম্পন্ন সঙ্গীত হিসেবেই পরিচিত। দিন বদলের পালায় সেই সঙ্গীত-ধারা আমাদের দেশে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত বা শাস্ত্রীয় সঙ্গীত নাম ধারণ করে ত্রয়োদশ শতক থেকে নতুন রূপে সঙ্গীতের ভুবনে আবির্ভূত হয়। আর এই নতুন রূপের প্রবর্তন করেন দিল্লীর সুলতান আলাউদ্দিন খিলজির সভাসঙ্গীতজ্ঞ সঙ্গীতের দিকপাল আমির খসরু। আমির খসরু পবর্তিত সেই সঙ্গীত ধারা যুগের কালক্রমে শত শত বৎসর পার হয়ে বর্তমান যুগে এসে পৌছেছে। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে যুক্ত হয়েছে কণ্ঠসঙ্গীত ও যন্ত্রসঙ্গীত। যন্ত্রসঙ্গীতের একটি বিশেষ বাদ্যযন্ত্র বাঁশি। বাঁশি ফুঁ দিয়ে বাজাতে হয়। তাই এই যন্ত্রটিকে ফুৎকার বা শুষির যন্ত্র বলা হয। বাঁশ থেকে তৈরি বলে এই যন্ত্রের নাম বাঁশি। বাঁশির আরও অনেক নাম রয়েছে যেমন বেণু, বাঁশরি, মুরলী, বংশী। বাঁশির অনেক প্রকার ভেদও রয়েছে। যেমন সরল বাঁশি, আড় বাঁশি বা মুরলী, টিপরা বাঁশি, বেণু ও লয়া বাঁশি। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত পরিবেশনে ব্যবহৃত হয় আড় বাঁশি এবং টিপরা বাঁশি। বাঁশি পৃথিবীর প্রাচীন শুষির বাদ্যয্নত্র। প্রাচীন ভারতে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা ধর্মগান পরিবেশনের সঙ্গে বাঁশি ব্যবহার করতো। খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীর গোড়াতে সাঁচীর ভাস্কর্য থেকে এই সত্য প্রতীয়মান হয়। অমরাবতীর ভাস্কর্য এবং অজন্তা ও ইলোর গুহার দেয়াল চিত্রেও বাঁশির নিদর্শন পাওয়া যায়। হিন্দুধর্মের শ্রীকৃষ্ণ বাঁশি বাজিয়ে গরু চড়াতেন সে তথ্যও পাওয়া যায়। বাঁশি লোকসঙ্গীতের অনুষঙ্গ বাদ্যযন্ত্র হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। বাঁশি যন্ত্রটিকে অবলম্বন করে বিশিষ্ট বংশীবাদক উত্তম চক্রবর্তী রচনা করেছেন উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত বিষয়ক একটি গ্রন্থ যার নাম ‘বাঁশির প্রথম পাঠ’। গ্রন্থে বাঁশিতে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের চর্চাকে তিনি শুরুত্ব সহকারে উপস্থাপন করেছেন। বংলাদেশের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত ভূবনে সঙ্গীতগ্রন্থেরে উপস্থিতি নিতান্তই কম। বংশীশিল্পী উত্তম চক্রবর্তীকে গ্রন্থ রচয়িতা হিসেবে সঙ্গীত ভুবনে আবির্ভাবকে সর্বান্তঃকারণে স্বাগত জানাই।
সূচি উত্তমের বাঁশি - কবি আল মাহমুদ বাঁশি - ড. আশরাফ সিদ্দিকী সঙ্গীতের রূপ - মোবারক হোসেন খান ওগো বাঁশিওয়ালা - রবিশঙ্কর মৈত্রী বাঁশির কথা - উত্তম চক্রবর্তী বাঁশি বা বাঁশরীর আবিষ্কার প্রথম অধ্যায় - তত্বমূলক সঙ্গীত ঠাট স্বরলিপি পদ্ধতি বাঁশি বাজাবার নিয়ম দ্বিতীয় অধ্যায় - স্বরলিপি বিভাগ তৃতীয় অধ্যায় - রাগ বিভাগ চতুর্থ অধ্যায় - তাল বিভাগ
টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুরে উত্তম চক্রবর্তীর জন্ম। পিতা : স্কুল শিক্ষক প্রয়াত বিশ্বেশ্বর চক্রবর্তী, মাতা : ইন্দিরা চক্রবর্তী। রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে উত্তম চক্রবর্তীর বেড়ে ওঠা। পিতৃব্য ডা: ভূবনেশ্বর চক্রবর্তী ছিলেন একজন রাজনীতিবিদ ও উচ্চাঙ্গ সংগীতের গুণী শিল্পী। জ্যাঠামহাশয় ডা: ভুবনেশ্বর ছিলেন লেখকের প্রেরণার উৎস। কিশাের বয়সেই উত্তমের বিকাশ ঘটেছিল বাদ্য-বাজনার আকাঙ্ক্ষা। ১৯৮৫ সালে ঢাকার বিখ্যাত নাট্যদল আরণ্যকের সঙ্গে যুক্ত হন। সেখানে তার দ্বৈত ভূমিকা ছিল অভিনেতা ও বাদন পরিচালকের। বর্তমানে প্রাচ্য নাটের সাথে জড়িত উত্তমের সফল ভূমিকার অভিব্যক্তি ঘটেছে অনেকগুলাে একক অনুষ্ঠানে। তার মধ্যে উল্লেখযােগ্য-বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, হােটেল শেরাটন উইন্টার গার্ডেন, রুশ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, জার্মান কালচার ইন্সটিটিউট এবং বঙ্গভবন। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে ১৯৯৭-এ লস এঞ্জেলস নগরে আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়ে সফল ভূমিকা রেখেছেন উত্তম চক্রবর্তী।