ভাব ভাষার থেকেও ছন্দের গতিময়তা ছড়ার জন্য জরুরি। তাই ছড়াকার ছন্দে দক্ষ না হলে তাদের ছড়া হয়ে পড়ে অপাঠ্য। ওসমান মাহমুদ ছড়ার একজন দক্ষ কারিগর বলা যায়। ২০১৮ সালে প্রকাশিত ‘মন ছুটে যায় জারুলবনে’ তার একটি ছড়াগ্রন্থ। এই বইটির মধ্যে শুধু ছন্দই না, ভাব ও ভাষারও বৈচিত্র্য খুঁজে পাওয়া যায়। বর্তমানে যারা ছড়া সাহিত্য নিয়ে কাজ করছেন এদের মধ্যে শিশু-কিশোর উপযোগী ছড়া লেখার প্রবণতা কেন যেনো কমে যাচ্ছে! সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নানা বিষয় নিয়েই এদের ছড়ার পরিক্রমা। এক্ষেত্রে ওসমান মাহমুদ ব্যতিক্রম ও স্বতন্ত্র। তিনি বোঝেন শিশু কিশোর মনের স্বপ্ন, কল্পনা ও আশার টুপটাপ। হেমন্ত ও ফাগুন নিয়ে তিনি লিখেছেন- ‘মাঠভরা ওই সোনালি ধানের খুশবু লেগেছে বায়ে/ভোরের সুবাসে দোয়েলের শিস্ ভেসে আসে দূর গাঁয়ে।/প্রভাতপাখির কাকলিমুখর কুয়াশা কিরণ মেশে/নিসর্গ সাজে মায়াপুরী যেন শিশির নিশুতি শেষে।’ (হেমন্ত/পৃষ্ঠা-০৩) ‘আগুন-লাগা ফাগুন জেগে উঠলো বনের গাত্রে/গাইছে কোকিল আর পাপিয়া হরেক পাখির জাত রে।/হঠাৎ আলোর ঝলকানিতে প্রাণ নেচে যায় শূন্যে/আঁকতে ছবি রং-তুলি আর কৃষ্ণচূড়ার খুন নে।’ (আগুন-লাগা ফাগুন/পৃষ্ঠা-০৮) স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাঙালি দেখেছিলো মূলত সেই বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। ভাষা আন্দোলন ও ভাষা শহীদদের নিয়ে এ পর্যন্ত লেখা হয়েছে অসংখ্য ছড়া, কবিতা। বায়ান্ন ও স্বাধীনতাকে নিয়ে ওসমান মাহমুদও লিখেছেন ‘বাংলা ভাষার কথা’ ও ‘ভাষা ও স্বাধীনতা’ শিরোনামে ছড়া- ‘বায়ান্ন সাল ফেব্রæয়ারির একুশ তারিখ দিনটি/বিশ্বসভায় উঠলো বেজে বাংলা ভাষার বীণটি।/জালিমশাহি উঠলো ক্ষেপে শূল হানে এই বঙ্গে/উর্দুতে বোল চালতে হবে থাকলে তাদের সঙ্গে।’ (বাংলা ভাষার কথা/পৃষ্ঠা-১২) ‘ভাষার প্রাণে লুকিয়ে থাকে/স্বাধীনতার চারা/এই সু-খবর প্রথম জানে/বাংলাভাষী যারা।’ (ভাষা ও স্বাধীনতা/পৃষ্ঠা-১৩) গ্রামীণ প্রকৃতি, ফুল, পাখি, ফসল, নদী এসব অনায়াসে উঠে এসেছে তার ছড়াগুলোর মধ্যে। বাংলার অপরূপ রূপকে তিনি তার ছড়ায় ধারণ করেন শিল্পীর মতো। শব্দের তুলিতে তিনি আঁকেন একটি কল্পনার জগৎ। তার ছড়া পাঠে আনন্দ ও উদ্দীপনা জাগে। সরল ও শুভ বুদ্ধির উন্মেষে এ ছড়াগুলো পাঠ আবশ্যক। এ বইটি প্রকৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের একটি মৌলিক ছড়ার বই। ২৪ পৃষ্ঠার এ বইটির প্রচ্ছদ ও অলংকরণ খুবই চমৎকার। এক কথায় এই বইটিকে বাংলা ছড়া সাহিত্যের একটি অমূল্য সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা যায়।
ওসমান মাহমুদ। কবি ও ছড়াকার। জন্ম ৩১ ডিসেম্বর ১৯৮৩ সালে নোয়াখালীর সেনবাগ থানার এনায়েতপুর গ্রামে। পিতা মোহাম্মদ আবুল হোসেন ও মাতা মানকিরেন নিসা। প্রকাশিত গ্রন্থ : স্নেহের গিলাফ, খুনঝরা ফাল্গুন, মন ছুটে যায় জারুলবনে, মনটা আমার উড়ালপাখি।