"আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১১তম খণ্ড" বইটি সম্পর্কে কিছু কথাঃ ‘আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া’ প্রখ্যাত মুফাসৃসির ও ইতিহাসবেত্তা আল্লামা ইবন কাসীর (র) প্রণীত একটি সুবৃহৎ ইতিহাস গ্রন্থ। এই গ্রন্থে সৃষ্টির শুরু তথা আরশ, কুরসী, নভােমণ্ডল, ভূ-মণ্ডল প্রভৃতি এবং সৃষ্টির শেষ তথা হাশর, নশর, কিয়ামত, জান্নাত, জাহান্নাম, প্রভৃতি সম্বন্ধে আলােচনা করা হয়েছে। এই বৃহৎ মূল গ্রন্থটি মােট ৮ খণ্ডে সমাপ্ত হয়েছে। এই গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলাে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ভাগে আরশ, কুরসী, ভূমণ্ডল, নভােমণ্ডল এতদুভয়ের অন্তর্বর্তী ঘটনাবলী তথা ফেরেশতা, জিন, শয়তান, আদম (আ)-এর সৃষ্টি, যুগে যুগে আবির্ভূত নবীরাসূলগণের ঘটনা, বনী ইসরাঈল, ইসলামপূর্ব যুগের ঘটনাবলী এবং মুহাম্মদ (সা)-এর জীবনচরিত আলােচনা করা হয়েছে। দ্বিতীয় ভাগে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর ওফাতকাল থেকে ৭৬৮ হিজরী সাল পর্যন্ত সুদীর্ঘকালের বিভিন্ন ঘটনা এবং মনীষীদের জীবনী আলােচিত হয়েছে। তৃতীয় ভাগে রয়েছে ফিতনা-ফাসাদ, যুদ্ধ-বিগ্রহ, কিয়ামতের আলামত, হাশর-ন, জান্নাত ও জাহান্নামের বিবরণ ইত্যাদি। লেখক তাঁর এই গ্রন্থের প্রতিটি আলােচনা পবিত্র কুরআন, হাদীস, সাহাবাগণের বর্ণনা, তাবেঈন ও অন্যান্য মনীষীর উক্তি দ্বারা সমৃদ্ধ করেছেন। ইন হাজার আসকালানী (র), ইবনুল ইমাদ আল-হাম্বলী (র) প্রমুখ ইতিহাসবিদ এই গ্রন্থের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। বদরুদ্দীন। আইনী (র) এবং ইবন হাজার আসকালানী (র) গ্রন্থটির সার-সংক্ষেপ রচনা করেছেন। বিজ্ঞজনদের মতে, এ গ্রন্থের লেখক ইবন কাসীর (র) ইমাম তাবারী, ইবনুল আসীর, মাসউদী ও ইবন খালদূনের ন্যায় উচ্চস্তরের ভাষাবিদ, সাহিত্যিক ও ইতিহাসবেত্তা ছিলেন। বিখ্যাত এ গ্রন্থটির বাংলা অনুবাদের চতুর্দশ খণ্ডের মাধ্যমে সর্বশেষ খণ্ডটি পাঠকের হাতে তুলে দিতে পেরে আমরা আল্লাহ্ তা'আলার শুকরিয়া আদায় করছি। গ্রন্থখানির অনুবাদক ও সম্পাদকমণ্ডলীকে আন্তরিক মুবারকবাদ জানাচ্ছি। গ্রন্থটির প্রকাশনার ক্ষেত্রে অন্য যারা সাহায্য-সহযােগিতা করেছেন তাঁদের সবাইকে মুবারকবাদ জানাচ্ছি।
আল্লামা ইবনে কাছীর রহ. এর জন্ম ১৩০১ খ্রিস্টাব্দে বসরার (বর্তমান সিরিয়া) মামলুক সালতানাতে। তার পুরো নাম ইসমাঈল ইবন উমর ইবন কাসীর ইবন দূ ইবন কাসীর ইবন দিরা আল-কুরায়শী হলেও তিনি ইবনে কাছীর নামেই সমধিক পরিচিত। তিনি কুরায়েশ বংশের বনী হাসালা গোত্রের সন্তান। তার জন্মস্থান এবং জন্ম তারিখ নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। তার শিক্ষাজীবন এবং শৈশব নিয়েও খুব বেশি তথ্য জানা যায় না। তবে মামলুক সালতানাতেই তিনি বড় হয়েছেন, এ ব্যাপারে ইতিহাসবিদগণ নিশ্চিত। কৈশোরে তিনি ফিরিঙ্গীদের যুদ্ধ, ক্রুসেড, তাতারদের আক্রমণ, শাসকদের অন্তর্কোন্দল, বিদ্রোহ করে ক্ষুদ্র রাজ্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াস, দুর্ভিক্ষে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণহানির মতো যাবতীয় দুর্যোগ আর দুর্দশা দেখে দেখে বড় হয়েছেন। কর্মজীবনে ইবনে কাছীর রহ. উন্মুসসা’ ওয়াত তানাকুরিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। কুরআন, হাদিস, তাফসির, ইতিহাস, গণিত সহ জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় তিনি বিচরণ করেন। শায়খ তকী উদ্দী (রহঃ), উস্তাদ হাজরী (রহঃ), ইবনুল কালানসী (রহঃ) প্রমুখ প্রবাদত্যুল্য শিক্ষকের সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন। পরবর্তীতে নিজের জ্ঞানের আলোয় তিনি আলোকিত করেছিলেন মধ্যযুগীয় মুসলিম জ্ঞানপিপাসুদের। ১৩৭৩ খ্রিস্টাব্দে দামেস্কে তার মৃত্যু হয়। আল্লামা ইব্নে কাছীর রহ. এর বই সমূহ ইসলামি দর্শন, ফিকহ শাস্ত্র, তাফসির ও ইতিহাস নির্ভর। তার রচিত ‘তাফসিরে ইবনে কাছীর’-এর জন্য তিনি বিশ্বজোড়া সমাদৃত। পবিত্র কুরআনের কাছীরগুলোর মাঝে তার এই গ্রন্থটিই সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য এবং প্রামাণ্য। ১১ খণ্ডে প্রকাশিত ‘তাফসিরে ইবনে কাছীর’, ‘কাসাসুল আম্বিয়া’, ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’, ‘কিতাবুল আহকাম’ সহ বেশ কিছু জ্ঞানগর্ভ বই রয়েছে আল্লামা ইবনে কাছীর রহ. এর বই সমগ্রতে।