"চেনা শোনা" বইটির 'নিজের কথা' অংশ থেকে নেয়াঃ
শুরুর কথাগুলো চেয়েছিলাম নিশাত জাহান রানাই লিখুন। তিনি রাজি নন। তাঁর স্বভাবজাত বিনয়। আমি পরাস্ত। অবশ্য একদিক থেকে ভালোই হলো। আমার কথাগুলো রানা লিখতেন না। আমি সুযোগ পেলাম।
রানা যখন এখানে এসে বইটি করার কথা তোলেন, এই খুচরো লেখা ক’টি তখন আমার সম্বল। তাও সব নয়। পরে লেখা বেশ ক’টা। না পড়েই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। এখানে মুহিত হাসানকে ভার দিয়ে যান, লেখাগুলো গোছগাছ করার। আগে কি পরে, মনে পড়ছে না--এখন প্রান্তবেলায় বিস্মৃতির দাপট বেশি--তিনি তাঁর লেখা অঞ্জলিভাষা বইটি আমাকে উপহার দেন। পেয়ে খুশি হই। টেবিলে হাতের কাছে রাখি। কিন্তু তারপরে আরো কিছু বই-এর সঙ্গে মিশে গিয়ে তা তলে পড়ে যায়। দিনগত পাপক্ষয় আমার নিয়তি। এ বোঝাপড়ায় ব্যস্ত থাকা ঠেকাতে পারি না। একসময় বইটির কথা বেমালুম মাথা থেকে বেরিয়ে যায়। পরে রানা আর-একবার এখানে আসেন। অনেক কথার ভেতর তাঁর বইটির প্রসঙ্গও ওঠে। আমি নির্বিকার জানাই, বইটি তো আমি পাইনি! তিনি এ নিয়ে আর কিছু বলেন না। পরে ঢাকা ফিরে, তিনটে বই উপহার পাঠান। ওই অঞ্জলিভাষা তার একটি। আর ওই সময়েই টেবিল হাতড়াতে আগের দেওয়া বইটি মাথা তোলে। আমি লজ্জায় মরি।
এবার আর ভুল হয় না। বইটি হাতে নিয়ে পড়ে ফেলি। এবং গভীর-গভীরভাবে আচ্ছন্ন থাকি। তাঁর দেখা ক’জন গুণী মানুষের স্মৃতি। একেবারেঅন্তরের ভেতর থেকে লেখা। এঁরা আর নেই। রানা কাছে থেকে তাঁদের পেয়েছেন। কারো কারো সঙ্গে গভীর অন্তরের যোগ। মানুষ হিসেবে প্রত্যেকে নমস্য। আমাদের স্মৃতির অবলম্বন। রানা এই দিকটিতেই জোর দিয়েছেন। শামসুর রাহমান, সালাহ্উদ্দীন আহমদ, আলী আনোয়ার, করুণাময় গোস্বামী, একুশের প্রথম কবি মাহবুব-উল-আলম চৌধুরী--এইরকম দশ সেরা মানবমানবীর ব্যক্তিমায়া আপন প্রাণের সুধা মিশিয়ে তিনি সত্যরূপে ফুটিয়ে তুলেছেন। এতে তিনি পুরোপুরি সফল। আমি শুধু মুগ্ধ নই, তৃপ্তও হই। পূর্ণতার স্বাদ পাই।
Read More